ইসলামী ব্যাংক দেশের সর্ববৃহৎ ও শক্তিশালী ব্যাংক। আমাদের গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখ, যার ৩২ লাখই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব, আস্থা ও আন্তরিকতার সঙ্গে আমরা গ্রাহকসেবা দিয়ে যাচ্ছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ২ হাজার ৬৯৩টি এজেন্ট আউটলেটের মাধ্যমে দেশব্যাপী ৪৯২টি উপজেলায় দেয়া হচ্ছে আধুনিক ব্যাংকিং সেবা। রেমিট্যান্স আহরণ ও আমানতের পরিমাণ বিবেচনায়ও ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বর্তমানে দেশের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। হুন্ডির ক্ষতিকারক দিক বিবেচনায় ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানো যে নিরাপদ তা আমাদের এজেন্টরা গ্রাহকদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। কভিড-১৯-এ লকডাউনের সময়েও ৯৫ ভাগ এজেন্ট আউটলেট খোলা ছিল। এ কারণে প্রত্যন্ত গ্রামের রেমিট্যান্স বেনিফিশিয়ারিরা তাদের বাড়ির কাছে স্বল্প সময়ে, অল্প খরচে যাতায়াত করতে পেরেছেন এবং নিরাপদে ও দ্রুত রেমিট্যান্স পেয়েছেন। পাশাপাশি ওই সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকদের ব্যাংকের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত ১ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে গ্রাহকরা এজেন্টের মাধ্যমে রেমিট্যান্স নিতে এগিয়ে এসেছেন।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগ বিতরণ করে ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়নের বীজ বপন করে চলেছে। এ এজেন্টগুলো থেকে সরাসরি বৈদেশিক রেমিট্যান্স আহরণ করছি। প্রতি মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ বিতরণ করছে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং। স্থানীয় পর্যায়ে প্রায় ১৫ হাজার যুবকের সরাসরি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ২০২১ সাল থেকে এজেন্টে আউটলেটের জনশক্তির জন্য প্রায় আড়াই হাজার প্রোগ্রাম ও প্রশিক্ষণের আয়োজন হয়। এতে প্রায় ২০ হাজারজনকে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পর্যাপ্ত নগদ অর্থ গ্রহণ ও প্রদানের সক্ষমতা, ব্যবসাবান্ধব অনন্য কিছু প্রডাক্ট ও সেবার উদ্ভাবন, সঠিক বিপণন ও প্রচারণা কৌশল, নিয়ন্ত্রণকারী শাখার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান, বিপুল গ্রাহক সংগ্রহ এবং উন্নত গ্রাহকসেবা নিশ্চিতের কারণে এজেন্ট আউটলেটের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। এজেন্টরা গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয়সংখ্যক জনবল, কম্পিউটারসামগ্রী, আসবাব কেনাসহ নগদ লেনদেনের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বিনিয়োগ করেছেন। এজন্য জমা ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেট থেকে দ্রুত সেবা নিতে পারছেন গ্রাহক। এছাড়া এজেন্ট আউটলেটের গ্রাহকরা ব্যাংকের সব ডিজিটাল মাধ্যম যেমন—এটিএম কার্ড, সেলফিন, এমক্যাশ, আইব্যাংকিং, ই-কমার্স ইত্যাদি সেবা নিতে পারছেন। এগুলোও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে।
এদিকে রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্যও ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রাহকদের দ্রুত রেমিট্যান্স পৌঁছে দিতে প্রতিটি শাখায় রয়েছে আলাদা ডেস্ক। ফরেন রেমিট্যান্স সার্ভিস ডিভিশন নামে একটি বিভাগও তাত্ক্ষণিকভাবে গ্রাহকের হিসাবে টাকা জমা করছে। বিভাগটির উপযুক্ত সব কার্যক্রমই অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে। ইএফটি ও আরটিজিএসের মাধ্যমেও অন্যান্য ব্যাংকের গ্রাহকের হিসাবে দ্রুততার সঙ্গে টাকা পাঠানো হচ্ছে। এ বিভাগে চালু রয়েছে ২৪ ঘণ্টা সেবা ডেস্ক, যা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সময়ের ব্যবধান উতরে সহজে ও তাত্ক্ষণিকভাবে গ্রাহকের হিসাবে টাকা দিচ্ছে। বিভিন্ন দেশেও আমাদের ২৬ জন প্রতিনিধি রেমিট্যান্স সচেতনতা তৈরি করতে প্রবাসীদের মধ্যে কাজ করছেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো এপিআই (অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস ইন্টারফেস) পদ্ধতিতে রেমিট্যান্সের টাকা সরাসরি গ্রাহকের হিসাবে জমা করছেন।
এজেন্ট নিয়োগ ও হিসাব খোলার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থেকেও আমানত সংগ্রহে ইসলামী ব্যাংকের অবস্থান সবার শীর্ষে। এর মূল কারণ আমাদের এজেন্ট আউটলেট অনুমোদন দেয়ার আগে এজেন্ট কেন্দ্রের সমস্যা, সম্ভাবনা, বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রাহকের চাহিদাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ পর্যবেক্ষণ, এজেন্ট আউটলেট নিয়ন্ত্রণকারী শাখার তত্ত্বাবধান, পরিদর্শন ও হাতে-কলমে ব্যাংকিং বিষয়ের প্রশিক্ষণ নিশ্চিতের ফলে পারফরম্যান্স ভালো হয়। এছাড়া মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ পরিপালনের আধুনিক সংস্কৃতি মেনে চলায় গ্রাহকের আস্থা বেড়েছে। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটগুলো দৈনিক দেড় লাখ গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে, যার গড় পরিমাণ ৯৫০ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংক শুরু থেকেই গ্রাহকদের তথ্য ও অর্থের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ডিভাইসের নিরাপত্তা, ব্র্যান্ডেড ডিভাইস ব্যবহার, লেনদেনের ক্ষেত্রে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, এজেন্টদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রাহকদের তথ্য ও অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কারণে আমাদের এজেন্ট কেন্দ্রের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।