রেমিট্যান্সসেবা দিতে আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছতে চাই

এজেন্টদের মাধ্যমে দেশে লাখ কোটি টাকার রেমিট্যান্স আসার ঘটনাটি একটি বড় মাইলফলক। অর্জনে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকও গর্বিত অংশীদার। বিশেষ করে সাম্প্রতিক ডলার সংকটের সময় দেশে রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে এজেন্টদের ভূমিকা দেশ অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আমাদের এজেন্ট আউটলেটগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত। এজেন্টদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হওয়ায় সরাসরি দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণই উপকৃত হচ্ছে। দেশব্যাপী আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্প্রসারণে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অবদান অনস্বীকার্য।

এজেন্টদের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে আমরা আরো অধিক মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া রেমিট্যান্সপ্রবণ এলাকায় অধিক আউটলেট স্থাপনের বিষয়ে ব্যাপক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে এজেন্সিগুলোর সঙ্গে এপিআই শেয়ার করে তাত্ক্ষণিকভাবে রেমিট্যান্স ইনসেনটিভ অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। এর ফলে গ্রাহকরা তাদের প্রয়োজনীয় রেমিট্যান্স সেবা আরো দ্রুততার সঙ্গে পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। 

তুলনামূলক কম এজেন্ট দিয়েও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক বড় সাফল্য পেয়েছে। এর অন্যতম কারণ, এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের শুরু থেকেই আমরা আউটলেটগুলোকে সাজিয়েছি শাখার মতো করেই। এর ফলে সব পর্যায়ের গ্রাহক সেখানে লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। অবস্থানগত কারণে যেসব গ্রাহক বড় শাখায় লেনদেন করতে আগ্রহী ছিলেন না, তারাও অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে আউটলেটে লেনদেন শুরু করেছেন এবং অন্যকেও এতে উৎসাহিত করছেন। এছাড়া আমাদের ব্যাংকের সব লেনদেন রিয়াল টাইমভিত্তিক এবং গ্রাহক সবকিছুই এসএমএসের মাধ্যমে পেয়ে যান। এমনকি যেকোনো লেনদেনের পর গ্রাহককে একটি কম্পিউটার জেনারেটেড ট্রানজেকশন স্লিপ দেয়া হয়। সব মিলিয়ে গ্রাহকরা আন্তরিকতা নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় নিয়েই আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংককে নিজেদের ব্যাংক হিসেবেই গ্রহণ করেছেন তারা। 

এজেন্টদের মাধ্যমে বিনিয়োগ আরো বাড়াতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের শুরু থেকেই আমরা গ্রামীণ জনগণের মাঝে ক্ষুদ্র বিনিয়োগের প্রতি অধিক মনোযোগী ছিলাম। কারণ ক্ষুদ্র বিনিয়োগই গ্রাম উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। সম্প্রতি প্রায় অধিকাংশ আউটলেটে জামানতবিহীন এসএমই ক্ষুদ্র বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। তাই ব্যাংকে খাতে নিয়োগ করা হয়েছে প্রচুর জনবল, যারা সরাসরি আউটলেটেই দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গত অক্টোবর পর্যন্ত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৫৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যা ক্রমাগতই বাড়ছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় বিভিন্ন সম্ভাবনাময় এলাকায় গম, ভুট্টা, মসলা ইত্যাদি চাষাবাদের জন্য সরাসরি কৃষক বর্গাচাষীদের মাঝে রেয়াতি মুনাফার হারে কৃষি বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর বেশির ভাগই দেয়া হয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। সব মিলিয়ে স্থানীয় জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এজেন্ট ব্যাংকিং বিশেষ দায়িত্ব পালন করছে। 

ভবিষ্যতে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আমরা দেশব্যাপী সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি। বিশেষ করে বড় বড় বাজার, রেমিট্যান্সপ্রবণ এলাকা, চরাঞ্চল, হাওরাঞ্চল, উৎপাদনশীল এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকাসহ যেসব এলাকায় ব্যাংকের কোনো ছোঁয়া লাগেনি, সেখানে দ্রুততার সঙ্গে আউটলেট খোলার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক মনোযোগ দিয়েই কাজ করে যাচ্ছে। এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা দেখেশুনে এগোচ্ছি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমরা ৪৪৪ এজেন্ট নিয়োগ দিয়েছি। নিয়োগপ্রাপ্ত এজেন্টরা ৬৪৯টি আউটলেট খুলেছে। আগ্রাসীভাবে সম্প্রসারিত হতে গিয়ে আমরা কোনো দুর্ঘটনায় পড়তে চাই না। নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো এজেন্ট অপরাধ করলে সেটি ব্যাংকের সুনামহানির কারণ হবে। কারণে আমরা সৎ বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের এজেন্ট নিয়োগ দিচ্ছি। তুলনামূলকভাবে কম এজেন্ট নিয়োগ দিয়েও আমরা বড় সাফল্য পেয়েছি। আমাদের এজেন্টরা এরই মধ্যে হাজার ৭০৮ কোটি টাকার রেমিট্যান্স বিতরণ করেছে। এজেন্টদের মাধ্যমে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক আমানত পেয়েছে হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার। এরই মধ্যে এজেন্টরা লাখ ৬২ হাজারের বেশি ব্যাংক হিসাব খুলেছেন। এজেন্টরা মুনাফায় না থাকলে ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবেন না। কারণে আমরা এজেন্টদের মুনাফায় রাখাকেও গুরুত্ব দিচ্ছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন