পুঁজিবাজারে দরপতন ঠেকাতে এ বছরের ২৮ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারদর কমার সর্বনিম্ন সীমা) আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বর্তমানে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইস স্পর্শ করেছে। এ অবস্থায় ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে ১০ শতাংশ কমে ব্লক মার্কেটে শেয়ার লেনদেনের সুযোগ দিয়ে গতকাল একটি আদেশ জারি করেছে বিএসইসি।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত এ আদেশে বলা হয়েছে, বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্রাহককে ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কম দরে ব্লক মার্কেটে শেয়ার লেনদেনের সুযোগ দিতে পারবে স্টক এক্সচেঞ্জ। অবিলম্বে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বিএসইসি।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির কাছে ব্লক মার্কেটে ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে কম মূল্যে শেয়ার বিক্রির সুযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল। বর্তমানে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইস স্পর্শ করেছে। ফলে অনেক সময় এসব শেয়ারের ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যায় না। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার পুনর্বিন্যাস করতে পারছেন না। যা বাজারে তারল্য পরিস্থিতিকেও প্রভাবিত করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। তাছাড়া ব্লক মার্কেটের লেনদেন সূচকের গণনায় ভূমিকা রাখে না। ফলে ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে ১০ শতাংশ কম দরে লেনদেন হলেও সেটি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের লেনদেন বাড়লে তা বাজারের তারল্য সবরবরাহ বাড়াতেও সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পুঁজিবাজার পরিস্থিতি: গতকাল টানা তৃতীয় দিনের মতো দেশের পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। এদিন প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচক ও লেনদেন দুটোই কমেছে। আরেক পুঁজিবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমলেও লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর পর থেকেই শেয়ার বিক্রির চাপে পয়েন্ট হারাতে থাকে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স। মাঝে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। শেষ পর্যন্ত গতকাল দিন শেষে আগের দিনের তুলনায় ৩৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স। এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৬ হাজার ৩৫৩ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ গতকাল ১৬ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৮৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল ২ হাজার ১৯৯ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৪৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি), ওরিয়ন
ইনফিউশন ও সোনালী পেপারের শেয়ারের।
ডিএসইতে গতকাল ৭৬৪ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৭৬৫ কোটি টাকা। গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩১৯টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২৪টির, কমেছে ৬১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৩৪টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
