স্বাস্থ্যযত্ন

যেমন হবে খাবারের তালিকা

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। মানে আমরা বেশি বেশি ফাস্টফুড খাব না, অনেক বেশি বেশি খাবার খাব না, সময়মতো খাওয়ার চেষ্টা করব, সারা দিনে থেকে সাড়ে ঘণ্টা বিরতি দিয়ে খাবার খাব এবং যখন তখন বেশি খাবার খাব না। আমরা যে ডায়েট চার্ট করে দিই সেটা করতে গেলে অনেক কিছু দেখি। যেমন নারী নাকি পুরুষ, ওজন, উচ্চতা, বয়স কত, কী ধরনের কাজ করেন, মানে বসে করার কাজ নাকি ছোটাছুটির কাজ। অর্থনৈতিক অবস্থাও এখানে বিবেচ্য বিষয়। আবার ব্লাড সুগার কত নিয়ে পুষ্টিবিদের কাছে এল, অনেক বেশি নাকি মার্জিনাল, সেই সবকিছু দেখে ডায়েট চার্ট করা হয়। যদি দেখা যায় ওজন অনেক বেশি তাহলে পুষ্টিবিদ চেষ্টা করেন ক্যালরি কম দিয়ে ডায়েট চার্ট করতে। অর্থাৎ ওয়েট রিডিউসিং ডায়েট দিতে। আর যদি দেখেন ওজন ঠিক আছে সমস্যা নেই, তখন তার যতটা দরকার ততটাই দেয়া হয়।

অনেকে মনে করেন, ডায়াবেটিস হলে কম খেতে হয়। এটা ভুল ধারণা। কম খেতে হবে না, শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী খেতে হবে। তার তুলনায় কম খেলে দুর্বল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখা দরকার। কার্বোহাইড্রেট দুই রকমকমপ্লেক্স বা জটিল শর্করা আর সিম্পল বা সহজ শর্করা। চিনি, দুধ, মধু, গ্লুকোজ এগুলো সহজ শর্করা। এগুলো খেলে খুব দ্রুত রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যায়। খাবারের তালিকা থেকে এগুলো একদম বাদ দিতে হবে। যেদিন ডায়াবেটিস হবে সেদিন থেকে বাদ। আর যাদের হয়নি তারাও নিজেদের সুরক্ষার বিষয় মাথায় রেখে অনেক বেশি খাবে না। ভাত রুটিও খেতে হবে সীমিত পরিমাণে। কারো দুইটা রুটি দরকার, কারো তিনটা বা চারটা রুটি। শরীরের প্রয়োজন বুঝে পরিমাণটা নির্ধারণ করতে হবে।

প্রোটিনের ক্ষেত্রে বলতে হয়, মাছ-মাংস-ডিম-ডাল, এসব অন্যরা যতটা খাবে ডায়াবেটিস রোগীরাও ততটাই খেতে পারবে। বেশি খাওয়ার দরকার নেই। যদি আন্ডারওয়েট হয় বা প্রোটিন ঘাটতি বেশি হয় তাহলে খাদ্যতালিকায় বেশি প্রোটিন হয়তো ডিম -৩টা ডিম থাকতে পারে।

এরপরে আসে ফ্যাটের কথা। যেগুলো জমাট বাঁধা ফ্যাট যেমন ঘি, মাখন, ডালডা এগুলো যতটা সম্ভব কম খেতে হবে। তেল খাওয়া যাবে, তবে অনেক অনেক না খাওয়াই ভালো। প্রতিনিয়ত ভাজাপোড়া খাচ্ছে এমন যেন না হয়। তাছাড়া যেসব সবজিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে যেমন ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, লাউ, পটল, এগুলো মেপে খাওয়ার দরকার নেই। সব ধরনের শাক খাওয়া যাবে নিশ্চিন্তে। কিন্তু যে সবজিগুলো সলিড মানে কার্বোহাইড্রেট বেশি যেমন মিষ্টিকুমড়া, গাজর, কাঁচাকলা, আলু, কচু এগুলো কম খেতে হবে। এগুলো বেশি খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে।

শরীরে সুগারের পরিমাণ অনেক বেশি হলে ফল খাওয়া একদম বন্ধ রাখতে হবে। ফলে থাকা চিনিকে বলা হয় ফ্রুক্টোজ। সেটা চিনি বা মিষ্টির মতোই কাজ করে। তখন পুষ্টিবিদ ১৫ দিন থেকে এক মাস ফল না খাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে মাত্রা কমে এলে সারা দিনে একটা কমলা, একটা আপেল এভাবে ভাগ করে খাওয়া যাবে। তবে পেয়ারা, আমড়া, জাম্বুরা এসব খেতে পারবে ইচ্ছামতো।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকলে চিনি দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। কোক, ফান্টা, কেক, মিষ্টি বিস্কিট সব রাখতে হবে দূরে সরিয়ে। অনেকে মনে করে ডায়াবেটিস হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। দুধ বেশি বেশি খেলে দুর্বলতা কাটবে, আসলে তা না। কারণ দুধে কার্বোহাইড্রেট থাকবে। সারা দিনে লিটার বা হাফ লিটার দুধ খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত না। থেকে কাপ দুধ খেতে পারেন।

তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলোচনা করে ডায়েট চার্ট করে নিতে হবে। আবার ডায়েট চার্ট করে বাড়িতে নিয়ে ভাঁজ করে রেখে দিলে সুস্থতা আসবে না। সেজন্য নিয়মগুলো মানতে হবে। এক্ষেত্রে ফলোআপটাও জরুরি। তাহলে কোন জায়গায় সমস্যা হচ্ছে সেটা বোঝা যাবে। আবার খাবারের কারণে শারীরিক কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলোচনা করলে তিনি আবার পরিমাণটা ঠিক করে দেবেন।

 

আখতারুন্নাহার আলো

সাবেক চিফ নিউট্রিশন অফিসার বিভাগীয় প্রধান, বারডেম হাসপাতাল

সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন