স্বাস্থ্যযত্ন

কিডনি, হূদরোগ ও উচ্চরক্তচাপে প্রভাব

ফিচার ডেস্ক

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের প্রভাবে শরীরের এমন কোনো অঙ্গ নেই যেখানে ঝুঁকি থাকে না। বিশেষ করে এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না এলে কিডনি, চোখ, মস্তিষ্ক, হার্টের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অনেকের গর্ভধারণের ব্যর্থতার পেছনেও অন্যতম কারণ ডায়াবেটিস। কিডনি ডায়ালাইসিস বা প্রতিস্থাপনকারীদের বেশির ভাগই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগী। সারা বিশ্বে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়াদের অর্ধেকের বেশি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগী। একইভাবে রেটিনোপ্যাথি, হাত-পা কেটে ফেলার ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি দেখা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকা মানে রোগীদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ না থাকা। কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জীবনের নিয়ন্ত্রণ আনতে হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা অপরিহার্য। না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বণিক বার্তাকে বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণ করা না হয় রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণ মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে। এতে তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া লাগতে পারে। কোনো কোনো সময় এসব রোগীর অবস্থা এমনও হয় যে তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিতে হয়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে চোখের রক্তনালিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে চোখের রক্তনালিতে রক্তক্ষরণ হয়। ফলে ধীরে ধীরে চোখের ভেতরে পানি জমতে থাকে। এছাড়া চোখের লেন্স, কর্নিয়া, রেটিনায় প্রভাব ফেলে প্রাণঘাতী রোগটি। সাধারণত বার্ধক্যের কারণে চোখে ছানি পড়লেও ডায়াবেটিসের কারণেও হয়ে থাকে। এর কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত ব্লাড সুগার। এক্ষেত্রে বার্ধক্যের আগেই চোখে ছানি পড়তে পারে।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে অন্ধত্বের ঝুঁকি নিয়ে ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ক্যাটারেক্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মুন্তাকিম শাহিদ বণিক বার্তাকে বলেন, সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো ডায়াবেটিস থেকে রেটিনোপ্যাথি হয়ে থাকে। অর্থাৎ চোখের রেটিনা যদি একবার নষ্ট হয়ে যায় সেটি আর ফেরত আনা সম্ভব নয়। কারো যদি ১০ বছর ধরে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে রেটিনায় কিছু পরিবর্তন এলেও সেটি গ্রহণযোগ্য মাত্রায়। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে তিন-চার বছরের মধ্যেই রেটিনা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে ধীরে ধীরে চোখ অন্ধ হয়ে যেতে থাকে। ক্ষতি থেকে বাঁচতে রোগীদের প্রতি তিন বা ছয় মাস পর পর একজন বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

তিনি আরো বলেন, ডায়াবেটিসের রোগীদের বছরে অন্তত একবার চোখের ভেতরের কালার ফান্ডাস ফটোগ্রাফি পরীক্ষা করতে হবে। কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকলে চোখের ভেতরের রক্তনালিগুলোতে রক্তক্ষরণ হয়। এছাড়া ধীরে ধীরে চোখের ভেতর পানি জমতে থাকে। যখন রক্তক্ষরণ চলে যায় তখন প্রোটিন ম্যাটেরিয়ালগুলো থেকে যায়। ফলে রেটিনায় সাদা শক্ত আবরণ দেখা যায়। এতে রেটিনার মধ্যে থাকা মেকুলায় পানি জমে রোগীদের দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যায়।

অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাত বিশেষজ্ঞের হাইপারটেনশন অ্যান্ড ইটস রিলেটেড ফ্যাক্টরস অ্যামং পেশেন্ট উইথ টাইপ ডায়াবেটিস মেলিটাস: মাল্টি হসপিটাল স্টাডি ইন বাংলাদেশ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬৭ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে উচ্চরক্তচাপ রয়েছে। মূলত যারা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে ডায়াবেটিসে ভুগেছেন, তাদের মধ্যেই উচ্চরক্তচাপের প্রবণতা বেশি। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে কিডনি জটিলতার কারণেও উচ্চরক্তচাপের প্রবণতা বাড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন