গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় ক্যারিয়ার

শফিকুল ইসলাম

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

সমাজের শিক্ষা, সংস্কৃতি সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু গ্রন্থাগার। একটি জাতির অতীত, বর্তমান ভবিষ্যতের সঙ্গেও সেতুবন্ধ রচনা করে গ্রন্থাগার। মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান তথ্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়া যেমন উন্নত হয়েছে তেমনি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নানা ধরনের গ্রন্থাগার। তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান-বিজ্ঞানের উত্কর্ষের যুগে মানুষ যতই আধুনিক হচ্ছে ততই গবেষণা, অনুসন্ধান জ্ঞান তপস্যার জন্য গ্রন্থাগারমুখী হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি এবং জ্ঞানের উেসর বড় আকারের পরিবর্তনের কারণে ইন্টারনেটেও ব্যবহার বেড়েছে -লাইব্রেরি। আর বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার পরিচালনার জন্য প্রয়োজন দক্ষ প্রশিক্ষিত পেশাদার গ্রন্থাগারিক।

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে একাডেমিক গ্রন্থাগার রয়েছে অসংখ্য। প্রাথমিক মাধ্যমিক স্কুল গ্রন্থাগার, পাইলট স্কুল গ্রন্থাগার, কলেজ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার, মেডিকেল গ্রন্থাগারসহ রয়েছে বিশেষ গ্রন্থাগার জাতীয় গ্রন্থাগার। সম্প্রতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক পদ সৃষ্টি হয়েছে। এসব গ্রন্থাগারে তথ্যের সঠিক ব্যবহার, সংরক্ষণ, প্রচার-প্রসার আধুনিকায়নের জন্য বেড়েছে তথ্যবিজ্ঞান গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় পেশাদারদের চাহিদা।

তথ্য নিয়ে কাজ করে এমন যেকোনো পেশায় কাজ করার যোগ্যতা রাখেন তথ্যবিজ্ঞান গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগে পাস করা শিক্ষার্থীরা। তাদের কর্মসংস্থান শুধু গ্রন্থাগারেই সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিষয় যে পাঠ্যসূচির আলোকে পড়ানো হয় তার প্রায় অর্ধেকই তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সম্পর্কিত পড়ালেখা। শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার গড়তে পারেন ডাটা সায়েন্টিস্ট হিসেবেও। ন্যাশনাল আর্কাইভ, নলেজ ম্যানেজমেন্ট, বিশেষায়িত লাইব্রেরি, রেকর্ড ম্যানেজমেন্ট, হসপিটাল রেকর্ড ম্যানেজমেন্ট, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের আর্কাইভসহ অনেক জায়গায় কাজের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ইনফরমেশন ম্যানেজার, রেকর্ড অফিসার, আর্কাইভ ম্যানেজার, -রিসোর্স ম্যানেজার, ডকুমেন্টেশন অফিসার, ক্যাটালগার, রেফারেন্স গ্রন্থাগারিক, স্কুল-কলেজের সহকারী গ্রন্থাগারিক হিসেবে কাজের ব্যাপ্তি বেড়েছে।

যেসব বিষয় পড়ানো হয়

তথ্যবিজ্ঞান গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ যেসব বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে তার মধ্যে রয়েছে ফান্ডামেন্টাল অব ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজিস, ইনফরমেশন সোর্স অ্যান্ড সার্ভিসেস, ক্ল্যাসিফিকেশন অ্যান্ড ক্যাটালগ, ইনফরমেশন অ্যান্ড সোসাইটি, আর্কাইভ অ্যান্ড রেকর্ড ম্যানেজমেন্ট, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার অ্যান্ড নেটওয়ার্কি, রাইটিং, এডিটিং অ্যান্ড পাবলিশিং, ইনডেক্সিং অ্যান্ড অ্যাবস্ট্রাকটিং, ডাটাবেজ ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাপলিকেশনস, ইনফরমেশন মার্কেটিং অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি, ডকুমেন্টেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন, লাইব্রেরি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, অটোমেশন অব ইনফরমেশন ইনস্টিটিউশনস, ইনফরমেশন রিসোর্স শেয়ারিং, কম্পারেটিভ ইন্টারন্যাশনাল লাইব্রেরিয়ানশিপ, বিবলিওমেট্রিকস, ইউজার স্টাডিজ, ডিজিটাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক লাইব্রেরি ইত্যাদি।

পড়ালেখা

দেশে তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যবিজ্ঞান গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা কোর্সও করতে পারবেন। বাংলাদেশে তথ্যবিজ্ঞান গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় শিক্ষা গবেষণার পথিকৃৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের বিএ (অনার্স) এক বছরের এমএ ডিগ্রি প্রদান করে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছরের এমফিল এবং তিন বছরের পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যবিজ্ঞান গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় সন্ধ্যাকালীন এমএ প্রোগ্রামও চালু রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা (পিজিডি), বিএ, এমএ, এমফিল এবং পিএইচডি করতে পারবেন। এছাড়া অসংখ্য ইনস্টিটিউট রয়েছে যেখানে গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় স্বল্পমেয়াদি দীর্ঘমেয়াদি কোর্স করার সুযোগ রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন