গ্রন্থাগারিকের মূল কাজ পাঠকের সময় বাঁচানো

মোহম্মদ হোচ্ছাম হায়দার চৌধূরী ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) গ্রন্থাগারিক

গ্রন্থাগারিকের কাজের ধরন দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে চাই

গ্রন্থাগারিক একটি সেবামূলক পেশা। একজন খ্যাতনামা গ্রন্থাগারিকের ভাষায়, লাইব্রেরিয়ান সেভ দ্য টাইম অব দ্য রিডার্স। অর্থাৎ গ্রন্থাগারিকের মূল কাজ পাঠকের সময় বাঁচানো। গ্রন্থাগারিকের প্রাথমিক কাজ হলো গ্রন্থাগারে কী কী তথ্য উৎস থাকবে, তা নির্বাচন করা। প্রত্যেক গ্রন্থাগারের স্বতন্ত্র কার্যকৌশল রয়েছে। নির্বাচিত বই বা অন্যান্য উপকরণ কারা সরবরাহ করতে পারবে, সেটা বোঝাও গ্রন্থাগারিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংগৃহীত বই বা উপকরণ আসার পর তা নথিভুক্ত করতে হয়। এরপর সেগুলোয় সিল নম্বর দেয়া হয়। তৈরি করতে হয় বইয়ের ক্যাটালগ। বই সঠিক শেলফে রাখার পরই পাঠকের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর চাহিদামাফিক বই ইস্যু করে তা ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয় পাঠকদের।

-লাইব্রেরির ব্যবহার বাড়ছে। প্রচলিত গ্রন্থাগারের সঙ্গে এটির ভিন্নতা কী?

এখন বেশির ভাগ জার্নালই অনলাইনে চলে এসেছে। এগুলো গ্রন্থাগারের বইয়ের মতো দৃশ্যমান থাকে না। -লাইব্রেরির বই বা জার্নাল ব্যবহারের সুযোগ তৈরিতে গ্রন্থাগারিককে কাজ করতে হয়। ব্যবহারকারীর চাহিদা জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপকরণ তাকে খুঁজে দিতে হয়। তৈরি করতে হয় প্রোফাইল। এরপর ব্যবহারযোগ্য বই বা উপকরণ সম্পর্কে ব্যবহারকারীকে জানানোর দায়িত্ব গ্রন্থাগারিকের। গ্রন্থাগারের ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ধারাবাহিকভাবে এসব কাজ চলমান রাখতে হয়, যাতে ব্যবহারকারীদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করা যায়। গ্রন্থাগারে কিছু দুষ্প্রাপ্য বই বা উপকরণ থাকতে পারে, যেগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রন্থাগারিকের।

গ্রন্থাগারিক পদটি শিক্ষা কার্যক্রমসংশ্লিষ্ট নাকি প্রশাসনিক?

একাডেমিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ দুভাবেই গ্রন্থাগারিক পদের দায়িত্ব নির্দিষ্ট হতে পারে। তবে আমাদের দেশে এটি মূলত অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বা প্রশাসনিক পদ। একাডেমিক বা শিক্ষা কার্যক্রমসংশ্লিষ্ট হিসেবে এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যদিও কাজের ধরন অনুযায়ী এটি পুরোপুরি একাডেমিক একটি পদ। বিদেশে দুটি ধারা আছেবিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারিক হলো ফ্যাকাল্টি পজিশন এবং যারা নিয়মিত প্রশাসনিক কাজ করেন তাদের জন্য অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পজিশন। আমার মনে হয়, গ্রন্থাগারিকের পদ প্রশাসনিক হিসেবে না থেকে একাডেমিক হলে ভালো হতো।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা কতটুকু থাকে? এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ব্যয় সম্পর্কে জানতে চাই?

বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে গ্রন্থাগারের সুযোগ-সুবিধা ফির পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। আইইউবিতে ল্যাব অন্যান্য কয়েকটি ফির সঙ্গে লাইব্রেরি ফি অন্তর্ভুক্ত। প্রতি সেমিস্টারে হাজার টাকা দিতে হয়। সার্বিকভাবে গ্রন্থাগার ব্যবহার বাবদ ফি নির্ভর করে শিক্ষার্থী কতটি সেমিস্টারে তার শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করছে তার ওপর। কোর্স বেশি হলে সেমিস্টার কম হবে, আর কোর্স কম হলে সেমিস্টার বেশি হবে। আমাদের লাইব্রেরিতে ৫০০ শিক্ষার্থী একসঙ্গে পড়ার সুযোগ রয়েছে। হার্ড কপি বই রয়েছে ৩০ হাজার। এছাড়া -বুকের সংখ্যা আড়াই লাখ -জার্নাল আছে ৪৫ হাজার। -লাইব্রেরি সুবিধা থাকায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বাসায়ও ব্যবহার করতে পারে। আমাদের কমিউনিটি সার্ভিস আছে। যে কেউ নির্দিষ্ট সার্ভিস ফি দিয়ে ব্যবহার করতে পারে।

দেশে গ্রন্থাগারিকদের সংগঠন বেলিডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন আপনি। পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে সংগঠনের ভূমিকা কী?

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব লাইব্রেরিয়ানস, ইনফরমেশন সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড ডকুমেন্টালিস্ট (বেলিড) গ্রন্থাগারিকদের দক্ষতা উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মশালা, লেকচার প্রোগ্রাম আয়োজন করে। এসব আয়োজন পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন