পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ই-লাইব্রেরি

ফিচার প্রতিবেদক

মানবসভ্যতা আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে বিকাশ লাভ করেছে গ্রন্থাগার। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জ্ঞানচর্চার মাধ্যম এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। গ্রন্থাগারে না গিয়ে মুহূর্তেই গোটা বিশ্বের তথ্যভাণ্ডারে ঢুঁ মেরে আসা যায়। যেকোনো জায়গা থেকে খুব সহজে ব্যবহারযোগ্য সেবার নাম -লাইব্রেরি বা ইলেকট্রনিক গ্রন্থাগার। -লাইব্রেরিকে অনলাইন লাইব্রেরি, ডিজিটাল লাইব্রেরি, ইন্টারনেট লাইব্রেরি, অনলাইন ডাটাবেজসহ বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। সহজ কথায় -লাইব্রেরি হলো এমন একটি অনলাইন সংগ্রহশালা যেখানে বিভিন্ন লেখা, ইলেকট্রনিক বই (-বুক), ম্যাগাজিন, জার্নাল, ছবি, অডিও, ভিডিও, ডিজিটাল নথি সংরক্ষিত থাকে এবং ব্যবহারকারীরা সেখান থেকে গ্রন্থাগার সেবা গ্রহণ করতে পারেন। যেকোনো জায়গায় থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সার্ভারে যুক্ত হয়ে ডিজিটাল প্রকাশনা পড়া যায়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারসহ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে -লাইব্রেরি সেবা রয়েছে। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। দেশের সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় রয়েছে -লাইব্রেরি। এসব গ্রন্থাগার থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মূল্যবান বই, সাময়িকী, গবেষণাপত্রের আধুনিক সংস্করণ পড়া যায় এবং অনলাইন থেকে সংরক্ষণও করা যায়।

-লাইব্রেরির যাত্রা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। মার্কিন বিজ্ঞানী ভার্নিভার বুশ পারমাণবিক বোমা তৈরির গবেষণায় সহায়তা করেছিলেন। তিনি হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলার ধ্বংসযজ্ঞ দেখে অনুতপ্ত হন। সিদ্ধান্ত নেন এমন কিছু তৈরি করবেন যে প্রযুক্তি তথ্য সংরক্ষণে সহায়তা করবে। এরপর তিনি তার তৈরি করা যন্ত্রটির নাম দেন মেমেক্স। আশা করেছিলেন যন্ত্র বই বিভিন্ন নথি সংরক্ষণ করবে এবং খুব সহজে সেগুলো ব্যবহার করা যাবে। পরবর্তী সময়ে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের সহায়তায় জেসিআর লাইকলিডার প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রন্থাগার উন্নত করার জন্য গবেষণা করেন এবং লাইব্রেরিজ অব দ্য ফিউচার নামে বই লেখেন। এভাবেই শুরু হয়েছিল -লাইব্রেরি বা ইন্টারনেটভিত্তিক গ্রন্থাগারের যাত্রা। আশির দশকে অনেক গ্রন্থাগারে চালু হয় অনলাইন পাবলিক অ্যাকসেস ক্যাটালগ সেবা। এরপর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেটভিত্তিক গ্রন্থাগারের যাত্রা হয়।

বিশ্বের বিখ্যাত কিছু -লাইব্রেরি হলোজাতিসংঘের -লাইব্রেরি, ইউনিভার্সাল ডিজিটাল লাইব্রেরি, ব্রিটিশ লাইব্রেরির অনলাইন সেবা, ইউনেস্কোর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ডিজিটাল, ইউরোপিয়ান লাইব্রেরি, লাইব্রেরি অব কংগ্রেস। এসব -লাইব্রেরিতে নিবন্ধনের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করা যায়।

বাংলাদেশের অধিকাংশ সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুদ্রিত বইয়ের পাশাপাশি -বুক, জার্নাল, অডিও, ভিডিওসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা পাওয়া যায়। রকম একটি আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে তোলা -লাইব্রেরি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের -লাইব্রেরি। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ; আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের -লাইব্রেরিতে একই সময়ে ৩০৯ জন বসে গ্রন্থাগারের সুবিধা নিতে পারেন। এটি বিশ্বের প্রায় ৩৫টি নামি গ্রন্থাগারের সঙ্গে যুক্ত। নিবন্ধন করে গ্রন্থাগারের মাধ্যমে সেখান থেকে বিভিন্ন জার্নাল, -বুক ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের -লাইব্রেরিতে আড়াই লাখ -বুক ৪৫ হাজার জার্নাল, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির রয়েছে ৮৭ হাজারের বেশি -বুক। এসব গ্রন্থাগারে অনলাইন পাবলিক অ্যাকসেস ক্যাটালগ সেবাও রয়েছে। যেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের ক্যাটালগ অনলাইনেই দেখা যায়। শিক্ষার্থীরা -বুকের পাশাপাশি অডিও, ভিডিও ডকুমেন্টও দেখতে পান। এছাড়া ওয়েবসাইট ব্যবহার করে গ্রন্থাগারের বিভিন্ন বই খুঁজে পাওয়া, নতুন বই সংযুক্ত হলে সে তথ্য জানাসহ সব ধরনের সেবাই পেয়ে থাকেন তারা।

-লাইব্রেরি ছাড়াও দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে নিজস্ব ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার রয়েছে। এসব তথ্যভাণ্ডারকে ডিজিটাল স্পেস বা ডি স্পেস, রেপোজিটরি বলা হয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণাকর্ম সুবিন্যস্ত আকারে খুঁজে পাওয়া যায়। www.repository.du.ac.bd ঠিকানায় প্রবেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেবা গ্রহণ করা যায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাকের ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডার www.dspace.bracu.ac.bd-তে প্রবেশ করে বিভিন্ন গবেষণাকর্ম বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন