ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগরদের তালিকায় বাংলাদেশের মুশফিক মোবারক

বণিক বার্তা অনলাইন

ছবি: ভক্স

পরাজয় কেউ পছন্দ করে না। বিশেষ করে এর পরিণাম যদি হয় ক্ষুধা, দারিদ্র ও মহামারী; তবে কেই বা হাত পেতে নেবে! তারপরও নীতি-নির্ধারকদের সিদ্ধান্তের কারণে জনগণকে গ্রাস করে ক্ষুধা, দারিদ্র ও মহামারী। যার পেছনে থাকে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের অক্ষমতা। এ বিষয়টি নিয়েই কাজ করছেন বাংলাদেশের মুশফিক মোবারক।

তিনি দেখিয়েছেন, সরকার ও বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) গৃহীত পদক্ষেপ মানুষের জীবনকে ভালো ও মন্দের দিকে টেনে নেয়। বিষয়টি সহজ মনে হলেও, গত বিশ বছর ধরে হাতে-কলমে এ বিষয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন মুশফিক। উম্মোচন করেছেন অঞ্চল বা মানুষ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন দিক।  

সম্প্রতি সুনিপুণ ভবিষ্যৎ নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্বের এমন ৫০ বিজ্ঞানী, চিন্তক, পণ্ডিত, লেখক ও সংগঠকের তালিকা প্রণয়ন করেছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক গণমাধ্যম ভক্স। সেখানে স্থান পেয়েছেন ইয়েল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ মুশফিক মোবারক।  

১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে জন্ম এই গবেষকের। নিজ দেশ ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, সিয়েরা লিওন ও ইন্দোনেশিয়ায় তার কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত। ইকোনোমেট্রিকা, সায়েন্স, আমেরিকান ইকোনমিক রিভিউ, রিভিউ অব ইকোনমিক স্টাডিজ, দ্য আমেরিকান পলিটিক্যাল সায়েন্স রিভিউ ও নেচারের মতো বিখ্যাত জার্নালে প্রকাশ হয়েছে তার গবেষণা। ২০১৭ সালে লাভ করেন কার্নেগি ফেলোশিপ।

ভক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ু দূষণ থেকে স্যানিটেশনের মতো অনেক বিষয় নিয়েই গবেষণা রয়েছে মোবারকের। কিন্তু সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ মৌসুমী অভিবাসন বিষয়ে।

গবেষণায় দেখা যায়, গ্রামীণ নিম্নবিত্তদের কর্মহীন মৌসুমে যদি সাময়িকভাবে শহরে গিয়ে কাজ করার জন্য অর্থ দেয়া যায়, তাহলে সার্বিকভাবে তাদের পারিবারিক আয় বাড়ে। এর ফলাফল ছিল বিস্ময়কর। এ গবেষণার ওপর ভর করে নেয়া হয় নতুন উদ্যোগ ‘নো লিন সিজন’। যারা সাময়িক কাজের জন্য শহরে যেতে চাইত, তাদের অর্থ সহায়তা দেয়া হতো এর মাধ্যমে। কিন্তু লাখ লাখ মানুষের দরজায় এই উদ্যোগ পৌঁছে যাওয়ার পর দেখা গেল, কোন প্রতিক্রিয়া আসছে না। ফলে ২০১৯ সালেই বন্ধ হয়ে যায় নো লিন সিজন।

এখানেই স্পষ্ট হয় মুশফিক মোবারকের অনুসিদ্ধান্ত। একটি পদক্ষেপ কোন একটি অঞ্চলে নাও চলতে পারে, তবে অন্য কোন নীতির যথাযথ প্রয়োগে আসতে পারে সাফল্য। যেখানে ভূমিকা রাখতে পারে সরকার ও অন্যান্য নীতি-নির্ধারণী সংস্থা। ইয়েল রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ অন ইনোভেশন অ্যান্ড স্কেলে (ওয়াই-আরআইএসই) মোবারকের গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুই ছিল, নীতিনির্ধারণের যথাযথ ভূমিকা।

ওয়াই-আরআইএসআই ক্ষুদ্রঋণ, শরণার্থী ও শিশু উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে। ফলে গবেষণা করতে গিয়ে মোবারকের অনুসিদ্ধান্তের বাস্তবতা দেখা যায়। অর্থাৎ, সরকারের নীতিগত পরিবর্তন লাখো মানুষের জীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

মোবারক দাবি করেছিলেন, দুনিয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। দুটি গ্রামে একটি প্রোগ্রাম সফল। তার মানে এই নয় যে, তা জাতীয় পর্যায়ে সফল হবে। বাংলাদেশে একটা প্রোগ্রাম কাজ করছে মানে এমন নয় যে, কেনিয়াতেও ভালো কাজ করবে।

মুশফিক মোবারকের আরেকটা গবেষণা হলো স্পিললাভার ইফেক্টস অর্থাৎ যারা কোন প্রোগ্রাম থেকে সেবা গ্রহণ করেনি, তাদের ওপর ওই প্রোগ্রামের ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক ফলাফল। মূলত টয়লেট সম্প্রসারণে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে গবেষণাটি হয়েছে। এ ধরনের সহায়তার মাধ্যমে জীবাণুর বিস্তার রোধ হয়। যার উপকার কেবল সেবা গ্রহণকারীরাই পায়নি। যারা ভর্তুকি গ্রহণ করেনি, তারাও জীবাণুমুক্ত জীবনের নিশ্চয়তা পেয়েছে। ফলাফলের সূচক ছিল দরিদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।

নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের দেশে মহামারীর প্রতিক্রিয়া ও প্রযুক্তির সম্প্রসারণ নিয়ে এখন মোবারক কাজ করছেন।

পৃথিবী নিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন মুশফিক মোবারক। তার গবেষণা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে বিভিন্ন নীতি গ্রহণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে। এমন কর্মমুখর জীবন ও তার সফল গবেষণা ভক্সের পরিভাষায় ‘পারফেক্ট ফিউচার’ গড়ার কারিগরদের তালিকার পরিপূরক হওয়ারই যোগ্য।      

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন