২৯ প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা

প্রজ্ঞাপনের অস্পষ্টতা দূরীকরণের দাবি সম্পাদক পরিষদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাইবার আক্রমণ থেকে স্পর্শকাতর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুরক্ষায় সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ২৯টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করায় সাংবাদিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার বিঘ্নিত হয়েছে বলে মনে করছে সম্পাদক পরিষদ। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী তথ্য পাওয়ার অধিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হলেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের বিশদ স্পষ্টীকরণের প্রয়োজন রয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সংগঠনটি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮-এর ১৫ ধারার বিধান মতে, ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ক্রিটিক্যাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিআইআই) ঘোষণা দিয়ে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতো আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে। তালিকায় সেতু বিভাগ, ইমিগ্রেশন পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জাতীয় ডাটা সেন্টার বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কোম্পানিসহ ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে রাখা হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৬() ধারায় বলা হয়েছে, আইনের বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কিনা, সেটি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনে সময় সময় কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো পরিবীক্ষণ পরিদর্শন করবেন ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করলে আইন লঙ্ঘনের শাস্তি হিসেবে সাত বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করে ক্ষতিসাধন বা ক্ষতির চেষ্টা করলে ১৪ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একাধিকবার উল্লিখিত অপরাধ সংঘটন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

সম্পাদক পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, ২৯টি সরকারি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করায় সাংবাদিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার বিঘ্নিত হয়েছে। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট। প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জনসেবা পরিসেবা নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যত্যয় ঘটলে -সংক্রান্ত তথ্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো সুযোগ থাকবে না, যা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ। একই সঙ্গে প্রজ্ঞাপনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, অনিয়ম জবাবদিহিহীনতাকে উৎসাহিত করবে। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী বর্তমান সময়ে তথ্য পাওয়ার অধিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হলেও ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের বিশদ স্পষ্টীকরণের প্রয়োজন রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বাকস্বাধীনতা মুক্তবুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সাংবাদিক, আইনবিদ, মানবাধিকারকর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকেও আইনটির পরিবর্তন, পরিমার্জন, বিয়োজন সংযোজনের বিষয়ে নানা ধরনের পরামর্শ, সুপারিশ উদ্বেগ প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে। এর আগেও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া প্রেস কাউন্সিল আইন সংশোধনীর বিষয়ে সম্পাদক পরিষদ উদ্বেগ জানিয়েছিল।

সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জনস্বার্থ এবং সেবা নিশ্চিতের জন্য তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে জারীকৃত প্রজ্ঞাপন স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য নতুন চাপ প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনটির অস্পষ্টতা দূর করে স্পষ্টীকরণের জন্য সম্পাদক পরিষদ জোর দাবি জানাচ্ছে।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার -সংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, করতোয়া সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিম। সভায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যোগ দেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এমএ মালেক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন