চলতি সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে গতকাল দেশের পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১ শতাংশ। পাশাপাশি এক্সচেঞ্জটির দৈনিক লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গতকাল সূচক ও লেনদেন দুটোই কমেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে চেক নগদায়নের আগে শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক কিছু কোম্পানির ঘোষিত আর্থিক ফলাফল নিয়ে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হয়েছেন। বিদ্যমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে পুঁজিবাজারের ভবিষ্যৎ নিয়েও তাদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। সব মিলিয়ে এ বিষয়গুলোরই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। এতে টানা তিন কার্যদিবস ধরে নিম্নমুখিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজারে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় লেনদেন শুরুর পর প্রথম আধা ঘণ্টা পর্যন্ত আগের দিনের তুলনায় ইতিবাচক অবস্থানে ছিল ডিএসইএক্স। এর পর থেকেই শেয়ার বিক্রির চাপে পয়েন্ট হারাতে শুরু করে সূচকটি। মাঝে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। শেষ পর্যন্ত গতকাল দিন শেষে এর আগের দিনের তুলনায় ৬৫ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৪১৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে ডিএসইএক্স। এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৬ হাজার ৪৭৮ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইর ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ গতকাল ২১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২৭৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর আগের দিন শেষে যা ছিল ২ হাজার ২৯৯ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিন শেষে ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪০৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এর আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১ হাজার ৪১৮ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ ও সি পার্ল বিচ রিসোর্টস অ্যান্ড স্পার শেয়ারের।
ডিএসইতে গতকাল ১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ১ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩৬১টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২৬টির, কমেছে ১৫৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৮২টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।
খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে প্রকৌশল খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ দখলে নিয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। ১১ দশমিক ২ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বিবিধ খাত। মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ৩ শতাংশের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল সেবা ও আবাসন খাত। আর কাগজ ও মুদ্রণ খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। গতকাল পুঁজিবাজারে সব খাতেই নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন ছিল ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
সিএসইর নির্বাচিত সূচক সিএসসিএক্স গতকাল ৯৯ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৩২৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সিএসইর সব শেয়ারের সূচক সিএএসপিআই গতকাল ১৬৪ পয়েন্ট কমে ১৯ হাজার ৮৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ২১৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৪টির, কমেছে ১০৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৮০টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে ৬৯ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ১৭ কোটি টাকা।
