বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কা

এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে দরপতন

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শুক্রবার এশিয়া, ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। মূলত বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কা ক্রমেই ঘনীভূত হওয়ার কারণে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে পতন হয়েছে। অবশ্য গত সপ্তাহে মিশ্র প্রবণতা দেখা গিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের পুঁজিবাজারে।

ইউরোপের অন্যতম পুঁজিবাজার যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচক গত শুক্রবার দশমিক ১৮ পয়েন্ট জার্মানির ব্লুচিপ সূচক ডিএএক্স ১৯৭ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট হারিয়েছে। একই সময়ে ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক কমেছে ৬৯ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট। এছাড়া ডেনমার্ক, পোল্যান্ড, জার্মানি, গ্রিস, ফিনল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, সুইডেন আয়ারল্যান্ডের পুঁজিবাজার পয়েন্ট হারিয়েছে। অন্যদিকে সময়ে নরওয়ে, হাঙ্গেরি লুক্সেমবার্গের পুঁজিবাজারে পয়েন্ট যোগ হয়েছে।

গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক দশমিক ১১ শতাংশ বা ৬৩০ পয়েন্ট কমেছে। একই সময়ে দেশটির এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক দশমিক ৮০ শতাংশ বা ১০৪ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট নাসডাক সূচক দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৪২০ দশমিক ৯১ পয়েন্ট হারিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অঞ্চলের আর্জেন্টিনা, পেরু, ব্রাজিল, মেক্সিকো, চিলি কলম্বিয়ার পুঁজিবাজার পয়েন্ট হারিয়েছে। অন্যদিকে ভেনিজুয়েলার পুঁজিবাজার সময়ে ঊর্ধ্বমুখী ছিল।

গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের পাশাপাশি এশিয়ার পুঁজিবাজারেও পতন হয়েছে। এশিয়ার অন্যতম প্রধান পুঁজিবাজার জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক এদিন ১৯৫ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমেছে। ভারতের বিএসই সেনসেক্স সূচক ৩০ দশমিক ৮১, ভিয়েতনামের হ্যাং সেং সূচক ২৭২ দশমিক ১০ চীনের সাংহাই সূচক ১৬ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমেছে। এছাড়া সময়ে হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজল্যান্ড, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা ফিলিপাইনের পুঁজিবাজারও পয়েন্ট হারিয়েছে।

গত শুক্রবার এশিয়া, ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে পতন হলেও মধ্যপ্রাচ্যের পুঁজিবাজারে মিশ্র প্রবণতা দেখা গিয়েছে। সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, জর্ডান লেবাননের পুঁজিবাজার ছিল ঊর্ধ্বমুখী। অন্যদিকে পয়েন্ট হারিয়েছে কুয়েত, সৌদি আরব, ওমান মরক্কোর পুঁজিবাজার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশটিতে কর্মসংস্থানের হার কমেছে। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সামনে সুদের হার আরো বাড়ানোর পথে রয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। এতে দেশটিতে অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা আরো ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের অর্থনীতি মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হওয়ার কারণে সংকট আরো জটিল দীর্ঘায়িত হওয়ার দিকে যাচ্ছে। এতে অঞ্চলের দেশগুলো অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার দিকে যাচ্ছে। তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জ্বালানি তেলের উৎপাদন দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল কমানোর ঘোষণার কারণে এশিয়ার পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অঞ্চলের দেশগুলো জ্বালানির জন্য পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে জ্বালানি খাতে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা টানতে হচ্ছে দেশগুলোকে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ব্যয় অনেক বেড়ে গিয়েছে। এতে কোম্পানিগুলোর মুনাফা সংকুচিত হবে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারেও। তেলের উৎপাদন কমানোর ঘোষণায় বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গিয়েছে এবং এতে তেলের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর বেড়েছে।

দেশের পুঁজিবাজার পরিস্থিতি: গত সপ্তাহে দেশের পুঁজিবাজারে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতা পরিলক্ষিত হয়েছে। সময়ে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বাড়লেও কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) গত সপ্তাহে সূচক বাড়ার বিপরীতে লেনদেন কমেছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ৫৬ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বা দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়েছে। সূচকটির বর্তমান অবস্থান হাজার ৫৭০ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল হাজার ৫১৩ পয়েন্টে। সূচকের উত্থানে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ওরিয়ন ইনফিউশনস, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, কোহিনূর কেমিক্যালস, বিবিএস কেবলস, কেয়া কসমেটিক তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারের।

ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ৩১ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে হাজার ৩৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল হাজার ৩৩০ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ২৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়ে হাজার ৪৪৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল হাজার ৪২০ পয়েন্টে। ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৯৬টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০১টির, কমেছে ৯৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৯২টির। এছাড়া লেনদেন হয়নি ৯টির।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন