সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছবি: পিআইডি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে আগামী বছর সারা বিশ্বের জন্য অত্যন্ত দুর্যোগময় হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সফরে বিশ্বনেতাদের মধ্যে যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, প্রত্যেকের মধ্যেই এক ধরনের আশঙ্কা দেখতে পেয়েছি। সবাই বলেছেন, ২০২৩ সাল বিশ্বের জন্য অত্যন্ত দুর্যোগময় সময় নিয়ে আসছে। এমনকি বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। অবস্থায় বিশ্বনেতারা চিন্তিত আতঙ্কিত।

গতকাল গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। তার সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সফরে যুক্তরাজ্যে ব্রিটেনের সাবেক রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেন তিনি। এর ফাঁকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন, বিভিন্ন দেশ সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা-বৈঠক করেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সেসব নিয়েই কথা বলেছেন তিনি। লিখিত বক্তব্যের পর উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন তিনি।

টালমাটাল বিশ্ব পরিস্থিতিতেও দেশের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে মহামারী সম্পর্কিত সংকট, আরেকদিকে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা। এর মধ্যেও আমাদের অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট সচল রাখতে পেরেছি। এটা আমার কথা না, আন্তর্জাতিক নানা সংস্থাও সে কথা বলছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি বা স্বল্পমেয়াদি কোনো ধরনের আশঙ্কাই নেই। বিষয়টি আমি নিশ্চিত করতে পারি। এটুকু ব্যবস্থা আমরা নিতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবাইকে আশ্বস্ত করে বলতে চাই, সামষ্টিক অর্থনীতির যে লক্ষ্য আমরা নির্দিষ্ট করেছি তা আমরা অর্জন করতে সক্ষম হব। এরপর যদি মহাদুর্যোগ দেখা দেয়, তাহলে বেশি কিছু বলার নেই। এমনিতেই তো গোটা বিশ্ব কষ্ট পাচ্ছে। তবে এটুকু আশ্বাস আমি দিতে পারি যে আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী আছে। আমাদের দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে সেজন্য খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকরণের জন্য আমরা আলাদা বাজেট রেখেছি। খাদ্যনিরাপত্তা ভবিষ্যৎ মহামারী মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। দেশের মানুষের ভালো থাকার জন্য আমাদের সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুশ্চিন্তা না করে সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী হওয়ার তাগিদও দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, দুশ্চিন্তা তো মানসিক ব্যাপার, কার কী মানসিকতা তার ওপরও নির্ভর করে। তবে সবাই মিলে যদি এটা চিন্তা করে যে দেশটা আমাদের, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে ব্যক্তি পর্যায় থেকে অপচয় কমাতে হবে।

প্রতিটি ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, পানি, খাদ্যসহ প্রতিটি জিনিস ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে যে সংকট আসবে সেটা আমাদের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না।

বিশ্বে তেলের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যতটুকু গ্যাস আছে তা ব্যবহার করছি। নতুন করে সন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। উন্নত দেশগুলোর মানুষও দুরবস্থার মধ্যে আছে। আমাদের দেশেও সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন থেকে সবাই প্রস্তুত হন, চেরাগ জ্বালিয়ে চলতে হবে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কারণে সবাইকে আদি যুগে ফিরতে হবে। তবে বাংলাদেশের মাটি মানুষকে নিয়ে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পারলে কোনো অসুবিধা হবে না। আমরা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারব। মানুষকেও খাওয়াতে পারব। এটুকু আশ্বাস দিতে পারি।

সংবাদ সম্মেলনে দেশের রিজার্ভের বর্তমান অবস্থা নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভ এখনো যথেষ্ট। যদি কোনো সংকট দেখা দেয় তাহলে অন্তত পাঁচ মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ আমাদের আছে। রিজার্ভ হিসাব করা হয় কারণে যে কোনো দুর্যোগ দেখা দিলে আপনার তিন মাসের খাদ্য কেনার সংগতি আছে কিনা। সে হিসেবে আমাদের রিজার্ভ রয়েছে পাঁচ মাসের।

সময় বিভিন্ন দলীয় বিভিন্ন বিষয়েও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন শেখ হাসিনা। এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আগামী সম্মেলনে একজন কাউন্সিলরও যদি আমাকে দলের নেতৃত্বে দেখতে না চান, তাহলে আমি বিদায় নিতে প্রস্তুত। যেদিন আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করা হয়েছিল, সেদিন থেকেই শর্তটা মেনে যাচ্ছি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নেয়া একটি রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত। এটা আমরা কারো ওপর চাপিয়ে দিতে পারি না। আমরা চাই সবাই আসুক, নির্বাচন করুক। আওয়ামী লীগ কখনই ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যাবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন