খোলাবাজারে ডলারের দাম আবারো ঊর্ধ্বমুখী

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) আবারো ডলারের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি ডলারের জন্য ১১৭ টাকা পর্যন্ত দাবি করেছে। আবার সে দামেই নিতে চাইলেও অনেক ক্রেতা ডলার পাননি বলে জানা গিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই খোলাবাজারে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাটির জোগান নেই। তাই খোলাবাজারে ডলারের দাম বাড়ছে। আগামীতে আরো বাড়তে পারে।

সংকট তীব্র হওয়ায় গত আগস্টে দেশের খোলাবাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের ফলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। খুচরা বাজারে দাম নেমে আসে ১০৬-১০৮ টাকায়। এক মাস স্থিতিশীল থাকার পর গত মাসের শেষের দিকে ডলারের দাম আবারো বাড়তে শুরু করেছে।

কার্ব মার্কেটে অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়ে যাওয়ায় আগস্টে মানি চেঞ্জারগুলোর ডলার বেচা-কেনায় ব্যবধান (স্প্রেড) নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বেঁধে দেয়া ওই দর অনুযায়ী, মানি চেঞ্জারগুলো যে দামে কিনবে, তার চেয়ে সর্বোচ্চ দেড় টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে। গতকাল মানি চেঞ্জারগুলোর ডলার কেনার ঘোষিত দর ছিল ১০৭ টাকা। সে হিসেবে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রির কথা। যদিও দামে গতকাল কোনো মানি চেঞ্জারেই ডলার পাওয়া যায়নি।

বিষয়ে জানতে চাইলে মানি চেঞ্জারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি একেএম ইসমাইল হক বণিক বার্তাকে বলেন, মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে কেউ ডলার বিক্রি করতে আসছেন না। প্রায় সবাই কেনার জন্যই আসছেন। কারণে চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকদের ডলার দেয়া যাচ্ছে না। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধিনিষেধের কারণে বৈধ মানি এক্সচেঞ্জগুলো বেশি দামে ডলার কিনতে পারছে না। কারণে কেউ বিক্রি করতে এলে দাম শুনেই ফিরে যাচ্ছেন। বেশি দামে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে সেসব ডলার বিক্রি করে দিচ্ছেন।

ইসমাইল হক বলেন, বৈধ মানি এক্সচেঞ্জগুলোর সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করার কথা। কেউ নিয়মের ব্যত্যয় করছে কিনা, সেটি আমার জানা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জগুলো বন্ধের জন্য অভিযান চালাচ্ছে। অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হলে খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

ডলারের দাম গত মাসে বাজার পরিস্থিতির ওপর ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ঘোষণা করছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) সংগঠনটির ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল ব্যাংক খাতে ডলারের সর্বনিম্ন দর ছিল ১০৩ টাকা ১০ পয়সা। আর সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা ১০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে ব্যাংকগুলো। বাফেদার ওয়েবসাইটে ঘোষণা করা দর অনুযায়ী, গতকাল দেশের ৫৭টি ব্যাংকের কেনা ডলারের গড় মূল্য ছিল ১০২ টাকা ১৪ পয়সা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা দরে ডলার কিনেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।

চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে ডলার কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী শফিউল্লাহ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, মতিঝিল কারওয়ান বাজারের কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জে ডলার কিনতে গিয়েছিলাম। কেউই ১১৬ টাকার কমে ডলার বিক্রি করতে রাজি হননি। পরে দুটি ব্যাংক থেকে কিছু ডলার কিনেছি। এক্ষেত্রে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য পড়েছে ১০৬ টাকা।

দেশে ডলারের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয় গত অর্থবছর থেকে। সেই সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছর শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিক্রি করা ডলারের পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে বিলিয়ন। চলতি অর্থবছরেও বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে গত বছরের আগস্টে ৪৮ বিলিয়নে উন্নীত হওয়া রিজার্ভ এখন ৩৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন