মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

দেশে এক যুগে ইলিশ আহরণ বেড়েছে দ্বিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত এক যুগে দেশে ইলিশ আহরণ দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য প্রাণিসম্পদমন্ত্রী রেজাউল করিম। গতকাল সচিবালয়ে মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ বাস্তবায়ন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী কথা জানান।

মৎস্যমন্ত্রী রেজাউল করিম বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশ আহরণ ছিল দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বেড়ে দশমিক ৬৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। পৃথিবীতে মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮০ শতাংশ আমাদের দেশে উৎপাদন হয়। ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখাকালে ইলিশ আহরণে সম্পৃক্ত মৎস্যজীবীদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য সরকার চাল দেয়, বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য সহযোগিতা দেয়। মা ইলিশ অথবা ছোট ছোট ইলিশ ধরলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে না। সেক্ষেত্রে ইলিশ আহরণকারী জেলেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দেশের মানুষ ইলিশপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে, রফতানি পণ্যের ক্ষতি হবে এবং নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ ধরতে যাওয়া অসাধু ব্যক্তিরা নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য স্থানীয়ভাবে সচেতন করা, বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়াসহ নানাভাবে সরকার জেলেদের মা ইলিশ জাটকা আহরণ থেকে বিরত রাখে।

মন্ত্রী আরো যোগ করেন, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে কেউ মাছ আহরণ করে কিনা সেটা বিমান বাহিনীর মাধ্যমে আকাশপথে মনিটর করা হবে। নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ মৎস্য অধিদপ্তর সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। নৌ পাহারা, আকাশপথে পাহারা স্থলপথে পাহারা দেয়া হবে। মা ইলিশ ধরা বন্ধ রাখতে কোথাও কোথাও বরফকল বন্ধ রাখা হবে। নিষেধাজ্ঞার সময় যারা আইন অমান্যের অপরাধ করবে তাদের তাত্ক্ষণিক সাজা প্রদানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া অবৈধভাবে মাছ আহরণ করা যানবাহন জব্দ, প্রয়োজনে সেগুলো বাজেয়াপ্ত এবং মা ইলিশ ধরা থেকে বিরত রাখতে মৎস্যজীবীদের উৎসাহিত করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু ইলিশ বিদেশে রফতানি করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরো বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে চলতি বছর পর্যন্ত ইলিশ রফতানি হয়েছে হাজার ৩৫২ টন। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়েছে কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। মুহূর্তে দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ইলিশ বৃদ্ধি না পেলে আমরা রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারতাম না।

মন্ত্রী যোগ করেন, জলবায়ুর পরিবর্তন, নদীর স্রোত পরিবেশের সঙ্গে ইলিশ সম্পৃক্ত। বৈরী পরিবেশ, অসাধুভাবে বালি উত্তোলন, নদীভাঙন, নদীর পানিদূষণসহ নানা কারণে মা ইলিশের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বিধায় বর্তমানে ইলিশের বিস্তৃতি অনেক বেড়েছে। এখন ছোট নদীসহ অনেক দুর্লভ জায়গায় ইলিশ পাওয়া যায়।

তিনি আরো বলেন, মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা মৎস্যজীবীদের অতীতে পরিবারপ্রতি ২০ কেজি করে চাল দেয়া হতো। চলতি বছর এটি ২৫ কেজিতে উন্নীত করা হয়েছে। এবার দেশের ৩৭ জেলার ১৫৫টি উপজেলায় লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭টি জেলে পরিবারকে ১৩ হাজার ৮৭২ টন খাদ্যসহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ক্রমে এর পরিমাণ আরো বাড়বে।

মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব . নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক . মাহবুবুল হক সময় উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, প্রতি বছরের ন্যায় বছরও ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে -২৮ অক্টোবর মোট ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন