জানুয়ারি-আগস্ট ২০২২

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি ৫৩% বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

একক বাজার হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি চলতি বছরের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশ থেকে ৬৬৪ কোটি ডলারেরও বেশি পোশাক পণ্য আমদানি করেছে। জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত আমদানি বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) এক পরিসংখ্যানে তথ্য উঠে এসেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালের আট মাস জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৬৬৪ কোটি লাখ ৩২ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের একই সময়ে আমদানির অর্থমূল্য ছিল ৪৩২ কোটি ৫১ লাখ ৯০ হাজার ডলার। হিসেবে জানুয়ারি-আগস্টে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

ওটিইএক্সএর দেশভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পোশাক আমদানির উৎস চীন। আলোচ্য সময়ে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। আমদানি হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক। একই সময় ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ৩৩ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে। আমদানি হয়েছে ১২ দশমিক বিলিয়ন ডলারের পোশাক।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূলত করোনা মহামারী থেকে ঘুরে দাঁড়ানো এবং ভোক্তাদের কেনাকাটা বৃদ্ধির ফলে খুচরা বিক্রি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। তবে মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দার কারণে চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী ধারা কতটা টিকে থাকবে সেটি ভাবনার বিষয়। অস্বাভাবিক দীর্ঘ গ্রীষ্মের কারণে শীতের পোশাক চাহিদাও তুলনামূলক কম।

পোশাক পণ্য প্রস্তুত রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের মোট পোশাক রফতানি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছিল। ফলে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইতিবাচক প্রবণতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে খুচরা বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় বর্তমানে ক্রেতারা সতর্ক অবস্থানে আছেন।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বণিক বার্তাকে বলেন, একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশী তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে রফতানি প্রবৃদ্ধি এখনো অব্যাহত। কিন্তু আমাদের মাসভিত্তিক পোশাক রফতানির চিত্র খুব ভালো নয়। জুলাইয়ের পর আগস্টে রফতানি কমেছিল। সেপ্টেম্বরে আরো কমেছে। আগামী দিনগুলোয় রফতানি আরো কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পূর্বাভাস আমরা আগেই জানিয়েছিলাম। বিগত দিনগুলোয় আমাদের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, সেগুলো আগের ক্রয়াদেশের কারণে। কিন্তু এখন ক্রয়াদেশ কমেছে ২০-৩০ শতাংশ। বিশেষ করে ইউরোপের ওয়্যারহাউজগুলোয় অনেক পণ্য অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে। ফলে অক্টোবর নভেম্বরে পোশাক রফতানি প্রবৃদ্ধি আরো কমবে। জানুয়ারি নাগাদ পরিস্থিতি ঠিক হতে পারে বলে আশা করছি।

চলতি বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ক্রয় পূর্বাভাস-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায়।২০২২ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চমার্কিং স্টাডিশীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা এশিয়াভিত্তিক দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশের মধ্যে আছে বাংলাদেশ। পোশাক আমদানিতে দেশটির ব্যবহূত উৎসগুলোর মধ্যে শীর্ষ ১০ দেশের নেতৃত্বে রয়েছে চীন-ভিয়েতনাম-বাংলাদেশ-ভারত। সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক দামে পোশাক সরবরাহ করছে এমন দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া। পণ্য সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের গতিশীলতা দুর্বল হলেও সোর্সিং কস্ট বা ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী। যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির হালনাগাদ তথ্যে।

তবে বর্তমান প্রবৃদ্ধি নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন পোশাক রফতানি খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে তৈরি পণ্যগুলো রফতানির প্রধান গন্তব্য পশ্চিমা দেশগুলো। কভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাত কাটিয়ে দেশগুলোর বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছিল। অনেক দিন নিষ্ক্রিয় থাকা বিক্রয় কেন্দ্রগুলো সক্রিয় হওয়ার পর চাহিদায় উল্লম্ফনও দেখা দিয়েছিল, যার প্রতিফলন হিসেবে মোট রফতানিতে বড় প্রবৃদ্ধি দেখতে পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে প্রবৃদ্ধি টেকসই হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কারণ করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পশ্চিমা বাজারগুলোর চাহিদায় ভাটার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন