‘সিনেমা প্রেজেন্টেবল করে তোলাও অনেক কঠিন কাজ’

সাবিহা জামান শশী

কাজল রেখার টিম

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী নাট্য চলচ্চিত্র পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম সম্প্রতি কাজল রেখা সিনেমার শুটিং শেষ করেছেন। মৈমনসিংহ গীতিকার কাজল রেখা অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে সিনেমা। এটি মূলত একটি রূপকথার গল্প, যা ৪০০ বছর আগের কাহিনী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সিনেমার শুটিং শেষ করার বিষয়টি জানিয়েছিলেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম।

নির্মাতা জানিয়েছেন, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পেতে যাচ্ছে কাজল রেখা। ওই সময় সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার বিশেষ কোনো কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, বিশেষ কোনো কারণ নেই। আমরা শুটিং শেষ করেছি। এরপর পোস্ট প্রডাকশনের জন্য যে সময় থাকবে, সে সময়ে কাজটা শেষ করে সিনেমা মুক্তির জন্য ফেব্রুয়ারিকেই বেছে নিয়েছি। আর সময়ে আবহাওয়াটাও বেশ আরামদায়ক। শীত বা গরম কোনোটিই থাকে না, দর্শক আরাম করে সিনেমা দেখতে পারবে। তাই সব ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজল রেখা মুক্তি পাবে।

কাজল রেখার নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন মন্দিরা চক্রবর্তী। তার প্রথম সিনেমা এটি। অভিনেত্রীর অভিনয় নিয়ে জানতে চাইলে নির্মাতা বলেন, মন্দিরা এর আগে টেলিভিশনে আমার সঙ্গে কাজ করেছে। সে সময় আমার মনে হয়েছিল, ওকে দিয়ে কাজটি করা যেতে পারে। এরপর নিয়ে অনেক ভেবেছি, চূড়ান্ত বিচারে কাজল রেখার চরিত্রটি মন্দিরা করেছে। আমার কাছে মন্দিরা কাজল রেখা হয়ে উঠতে পেরেছে। সিনেমায় দর্শক কাজল রেখার চরিত্রে দুজনকে দেখতে পাবে। কাজল রেখার ছোট বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেছে সাদিয়া আর পরিণত বয়সে মন্দিরা। আমার ধারণা, তারা দুজনই ভালো করেছে।

কাজল রেখাকে নিজের স্বপ্নের প্রজেক্ট বলেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। শুটিং শেষে তার বর্তমান ভাবনা নিয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্মাতা বলেন, শুটিং শেষ হলো। এখন পোস্ট প্রডাকশনের কাজ বাকি। এসব শেষ করে সিনেমা প্রেজেন্টেবল করে তোলাও অনেক কঠিন কাজ।

ভিন্ন ধারার গল্প নিয়ে কাজ করেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। সিনেমার জন্য গল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো তিনি বিবেচনা করেন, জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি নিজেকে ফিল্মমেকার হিসেবেই ভাবতে পছন্দ করি। এমন গল্প নির্বাচন করতে পছন্দ করি, যেটা থেকে জাতির যেন একটু হলেও উপকার হয়। মূলত আমি চাই, আমার সিনেমা দেখে যেন জাতির উপকার হয় এবং একজন মানুষ যেন কিছুটা হলেও চিন্তা করে।

বর্তমান সময়ে দেশের সিনেমার প্রচারণায় ভিন্নতা এসেছে। সিনেমার মুক্তির আগে নির্মাতা তারকারা প্রচারণায় অনেক বেশি জোর দিচ্ছেন। এমনকি সিনেমা মুক্তির পরও তারা দর্শকের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখছেন। সিনেমার প্রচারের পরিবর্তনের ধারা গুণী নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম কীভাবে দেখেন, এমনটা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমার মনে হয়, এটা খুবই ভালো হচ্ছে। কারণ সিনেমার প্রচারণার কৌশল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কেবল একটা ভালো সিনেমা বানালেই হবে না, সেটা দর্শককে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে আমি বলব, সবসময়ই নিত্যনতুন কৌশলের মাধ্যমে দর্শকের কাছে হাজির হতে পারলে সিনেমার প্রচারণা সার্থক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এর আগে বণিক বার্তাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে কাজল রেখা গল্পটি নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করার বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ষোড়শ শতাব্দীতে যত গীতিকবিতা লেখা হয়েছে, তার সব কেন্দ্রীয় চরিত্রই হয় বীর, না হয় দেবতা। একমাত্র মৈমনসিংহ গীতিকার সব কেন্দ্রীয় চরিত্র নারী। আমাদের অঞ্চলে মাতৃপ্রধান সমাজ ছিল, এটা তারই আভাস। মোগল আমলে আমরা একটি সমৃদ্ধশালী জাতি ছিলাম। ইংরেজরা আসার পর আমাদের অবস্থানের পরিবর্তন আসে। আমরা যে বলি সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ, এটা মূলত মোগল আমলে ঠিক ছিল। ইংরেজরা আসার পর রাজধানী নিয়ে গিয়েছে কলকাতায়; তারা এদিকে নজর দেয়নি। ঐতিহ্যগতভাবে যে আমরা একটি সমৃদ্ধ জাতি, এটা দেখানোর জন্যই কাজল রেখা নির্মাণ করা।

কাজল রেখার প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করবেন শরিফুল রাজ নবাগত চিত্রনায়িকা মন্দিরা চক্রবর্তী। বিভিন্ন চরিত্রে রয়েছেন রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা, ইরেশ যাকের, আজাদ আবুল কালাম, খায়রুল বাশার, সাদিয়া আয়মানসহ অনেকে। সিনেমায় কংকন দাসী চরিত্রে অভিনয় করছেন মিথিলা আর সুচ কুমার চরিত্রে শরীফুল রাজ। গত এপ্রিলে শুরু হয়েছিল কাজল রেখার শুটিং। পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমার চিত্রনাট্য সংলাপ বিন্যাস করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। ২০০৯ সালে তিনি নির্মাণ করেন তার প্রথম সিনেমা মনপুরা। চঞ্চল চৌধুরী ফারহানা মিলি অভিনীত সিনেমাটি সে সময়ে দর্শককে হলে ফিরিয়ে এনেছিল। চলতি বছর আবার দর্শক হলমুখী হয়েছেন। একের পর এক বাংলা সিনেমা বছর মুক্তি পেয়েছে এবং সামনে পেতে যাচ্ছে আরো সিনেমা। বাংলা চলচ্চিত্রের এই সুদিনে কাজল রেখা সিনেমাটি দর্শক কীভাবে গ্রহণ করেন, তা এখন দেখার পালা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন