নোরমা জিনের মেরিলিন হয়ে ওঠা

আসরার আবেদিন

মেরিলিন মনরোর চরিত্রে আনা ডি আর্মাস

প্রশ্নটা হতে পারততিনি আসলেই স্বর্ণকেশী ছিলেন কিনা? প্রশ্নটা হয়ে উঠল তিনি কিসের মধ্য দিয়ে গেছেন? অবশ্য ব্লন্ড সিনেমার ট্রেলার সে সম্পর্কিত আলোচনার শুরু থেকেই বলা হয়েছিল মনরোর সিনেমার ক্যারিয়ার নয়, বরং তার জীবনে ঘটে যাওয়া প্রতিকূল ঘটনা নিয়ে সিনেমার গল্প। সেক্স সিম্বল হিসেবে পরিচিত মেরিলিন মনরোর জীবনে যৌনতা, নারীর পণ্যায়ন ইত্যাদিই সিনেমার মুখ্য আলোচ্য। সিনেমাটি তাই অনেক বেশি , অনেক বেশি রাফ ১৭-এর কম বয়সীদের জন্য নয় কথা আগেই বলা হয়েছিল। সিনেমা দেখতে গিয়ে মনে হলো কেবল বয়স নয়, সিনেমা সহ্য করার জন্য দৃঢ় খোলা মন থাকা জরুরি। কেননা সিনেমাটি শুরু থেকে শেষ অবধি নানা অস্বস্তিকর বিষয় দৃশ্যে পূর্ণ।

এছাড়া পরিচালক অ্যন্ড্রু ডমিনিক এমন কিছু বিষয় নিয়ে এসেছেন তা তর্কসাপেক্ষ। সিনেমাটি শুরু হয় নোরমা জিনের মাকে দিয়ে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত নারী নোরমা জিনের বাকি জীবনে প্রভাব রেখেছে। এরপর এসেছে বাল্য সময় পার করা নোরমা জিনের সিনেমা জগতে পা ফেলা। আর সেখানে শুরু থেকেই যৌন নিগ্রহের শিকার মেয়েটি। বড় এক প্রডাকশন হাউজের প্রেসিডেন্টের হোটেল স্যুইট থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের শয়নকক্ষ পর্যন্ত যায় গল্পটি। সেখানে একদিকে আছে বিদ্রুপ, একদিকে অসহায়ত্ব, অন্যদিকে আছে সিনেমা জগতের এসব অন্ধকার দিকের প্রতি তীব্র সমালোচনা।

ডমিনিক নিজেও স্বীকার করেছেন, ব্লন্ড সিনেমায় মনরোর ভেতরের জীবন এবং তার সমন্বিত স্মৃতির মধ্যে থাকা দুশ্চিন্তাগুলোকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন তিনি। নোরমা জিনের চরিত্রে আনা ডি আর্মাস চমত্কার কাজ করেছেন তাতে সন্দেহ নেই। এজন্য ধন্যবাদ পাবেন পরিচালক মেকআপ আর্টিস্ট। মেরিলিন মনরোর চেহারাকে জীবন্ত করে তুলেছেন তারা। কিন্তু আদতে নোরমাকে যেভাবে মানসিকভাবে দুর্বল, পুঁজিবাদ পুরুষতন্ত্র দ্বারা নির্যাতিত দেখানো হয়েছে তা আদতেও ছিল কিনা তা অস্পষ্ট। কেননা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার যোগাযোগের বিষয়টি সিনেমায় যেভাবে দেখানো হয়েছে তার ভিন্ন ন্যারেটিভও পাওয়া যায়। অন্যদিকে চার্লি চ্যাপলিনের ছেলেদের প্রসঙ্গ যেভাবে এসেছে তাও তর্কসাপেক্ষ।

আনা ডি আর্মাসের অভিনয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিনোদনবিষয়ক পত্রিকা ভ্যারাইটি বলছে, যা দেখার জন্য এসেছিলাম, তার থেকে মোটেও কম কিছু তিনি আমাদের দেননি। তিনি সত্যি সত্যিই মেরিলিন মনরো হয়ে উঠেছিলেন। গার্ডিয়ানও তাদের রিভিউতে এই কিউবার অভিনেত্রীকে এমন চরিত্রে খুবই অসাধারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

জয়েস ক্যারল ওটসের যে বই থেকে গল্পটি নেয়া হয়েছে, সেখানে বলা হয়নি এটি মেরিলিনের জীবনী। বই সিনেমা উভয় ক্ষেত্রে গল্পের ধারায় মনে হয় হলিউডের সিনেমায় চলমান নানা অনাচার তুলে ধরার একটা চেষ্টা ছিল। মেরিলিন সেখানে ছিলেন প্রধান অনুষঙ্গ। মিডিয়া থেকে শুরু করে দর্শক তাকে সেক্স সিম্বল হিসেবেই দেখেছে বা দেখতে চেয়েছে। সেই মেরিলিনের ব্যক্তিগত জীবনের কিছু কান্না আশা-আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে নেপথ্যের গল্পটি বলার চেষ্টা করে ব্লন্ড। সেখানে মূলত নোরমা জিন মরটেনশনের ব্যক্তিগত এবং তার তৈরি করা মেরিলিন চরিত্রের মধ্যেকার ফাঁকটার অনুসন্ধান করা হয়েছে।

তবে কেউ কেউ সিনেমাকে একটি টেনে লম্বা করা সিনেমা বলেও দায় দিয়েছেন। ঠিক যেমনটা বলেছে শিকাগো সান টাইমস। সেই সঙ্গে সিনেমাকে অতিমাত্রায় উত্তেজিত উল্লেখ করে মেরিলিন মনরোর জীবনকে আনন্দহীন দুঃস্বপ্ন হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে বলে মন্তব্য তাদের।

সিনেমায় মনরোর সমস্যাসংকুুল জীবন কয়েক পুঙ্খানুপুঙ্খ চিত্রিত করার চেষ্টা হয়েছে। সেখানে ব্যর্থ বিয়ে, গর্ভপাত, স্বেচ্ছায় গর্ভপাত, মাদক অপব্যবহার, সিনেমা জগতের বড় বড় ব্যক্তিত্ব কেনেডি ভাইদের সঙ্গে বাড়তি যোগাযোগের গুজবও ছিল।

সিনেমার সবচেয়ে চমক জাগানো দৃশ্য ছিল মনরো জনএফ কেনেডির দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়া, যেখানে সবাই জানত তারা সম্মতিপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন। যদিও হয়রানির আর কোনো সরকারি রেকর্ড মেলেনি। সেই দৃশ্য মনরোর নিপীড়ন অবমাননাকে যৌন বস্তু হিসেবে তুলে ধরার কাজ করে।

ব্লন্ড সিনেমায় মেরিলিন মনরোর সিনেমার দৃশ্যগুলোকেই আবার নতুন করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সাবওয়ে ভেন্টিলেশনের ওপরে দাঁড়িয়ে তার সাদা পোশাক উড়ে যাওয়ার সেই আইকনিক দৃশ্য থেকে শুরু করে ছিল অনেক কিছুই। এমনকি সিনেমার জন্য আনা ডি আর্মাসের পোশাক-আশাকও খুবই বিশ্বস্ততার সঙ্গে পুনরায় তৈরি করা হয়েছে। তর পরও সবশেষে বলতে হয় ব্লন্ড সিনেমাটি কোনো বায়োপিক নয় বরং কাল্পনিক।

২০২২ সালের ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হওয়া সিনেমাটি গত ১৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায় আর যুক্তরাজ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর। ২৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং তারও বাইরে নেটফ্লিক্সে প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয় সিনেমার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন