বাজার নিয়ন্ত্রণে ওপেক প্লাস

জ্বালানি তেল উত্তোলন ২০ লাখ ব্যারেল কমানোর সিদ্ধান্ত

বণিক বার্তা ডেস্ক

অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন ব্যাপক মাত্রায় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রফতানিকারক দেশগুলোর মিত্র জোট ওপেক প্লাস। বাজারে এমনিতেই জ্বালানি তেলের ভয়াবহ সংকট। তার ওপর উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্তে সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করবে। এদিকে ওপেক প্লাসের সিদ্ধান্তে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। মার্কিন প্রশাসন এরই মধ্যে এটিকে অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত বলে মত দিয়েছে। খবর রয়টার্স।

ওপেকের নেতৃস্থানীয় দেশ সৌদি আরব জানিয়েছে, দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় শতাংশের সমান।

দেশটি আরো জানায়, পশ্চিমা দেশগুলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অব্যাহত সুদের হার বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতির গতি ক্রমেই শ্লথ হয়ে আসছে। পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমিয়ে আনা জরুরি ছিল।

এদিকে হোয়াইট হাউজ জানায়, জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কৌশলগত মজুদ থেকে আরো জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হবে কিনা, সেটির পর্যালোচনা অব্যাহত রাখবেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

হোয়াইট হাউজ বলছে, ওপেক প্লাসের উত্তোলন কমিয়ে আনার অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছেন জো বাইডেন। কারণ বিশ্ব অর্থনীতি এখনো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব কাটেনি।

বাইডেন প্রশাসনসহ পশ্চিমা দেশগুলো লম্বা সময় ধরেই সৌদি আরব ওপেক প্লাসের প্রতি উত্তোলন আরো বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসছিল। উদ্দেশ্য ঊর্ধ্বমুখী বাজারদরে লাগাম টেনে ধরা। কিন্তু ওপেক নেতারা আহ্বানে সাড়া দেয়নি। ফলে বাধ্য হয়েই রাষ্ট্রীয় মজুদ থেকে স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে দেশটি। আহ্বানে সাড়া দিয়ে আরো কয়েকটি দেশ মজুদ থেকে সরবরাহ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয় সামাল দিতে জ্বালানি তেল রফতানি বাড়াচ্ছে। পণ্যটির রফতানি আয় থেকেই যুদ্ধের বেশির ভাগ ব্যয় বহন করা হচ্ছে। কারণেই রাশিয়ার জ্বালানি রফতানি আয় বন্ধ করে দেয়ার উপায় খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে পণ্যটির দাম কমলে আয়ও কমবে বলে মনে করছেন বাইডেন প্রশাসন।

তবে ওপেক বলছে, সম্প্রতি অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কাসহ কিছু কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যাপক হারে কমেছে। এটিকে জ্বালানি খাতের জন্য নেতিবাচক হিসেবেই দেখছে জোটটি।

তিন মাস আগে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলারে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ডলারের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি, যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড সুদের হার বৃদ্ধি এবং মন্দার আশঙ্কায় সম্প্রতি পণ্যটির গড় দাম ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলারে নেমেছে। বাজারদর যাতে আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে, সে লক্ষ্যেই উত্তোলন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানায় ওপেক প্লাস।

চলমান সংকট পরিস্থিতিতে ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারকে জ্বালানি তেলের ন্যায্যমূল্য হিসেবে দেখছে ওপেক প্লাস। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে দাম সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারবে বলে মনে করছেন জোটটির বিশ্লেষকরা। তবে এর নিচে নামলে উত্তোলন বিঘ্নিত হবে।

একটি সূত্র জানায়, উপকরণ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতির কারণে জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতিতে উত্তোলকদের লাভের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে তারা তাদের বাজেটের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারে। এজন্যই দামের ঊর্ধ্বমুখী সীমা ধরে রাখা প্রয়োজন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন