বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

রাশিয়ার চেয়ে ইউক্রেনের জিডিপি কমবে আট ভাগ

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের ওপর মস্কোর চালিত আগ্রাসনের কারণে দেশটির অর্থনীটি রাশিয়ার তুলনায় আট গুণ বেশি সংকুচিত হবে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। মধ্য এশিয়া ইউরোপের ওপর এক প্রতিবেদনে ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ২০২২ সালের মধ্যে ইউক্রেনের অর্থনীতি সংকুচিত হবে ৩৫ শতাংশ, এদিকে রাশিয়ার জিডিপি সংকুচিত হবে দশমিক শতাংশ।

এর আগের এক পূর্বাভাসে বলা হয় যে, চলতি বছর ক্রেমলিনকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক অভিঘাতের মোকাবেলা করতে হবে। তবে বিশ্বব্যাংকের মতে, ঠিক যতটা আশা করা হয়েছিল রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলাফল ততটা তীব্র হয়নি।

এদিকে গত এপ্রিল থেকে ইউক্রেনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কিছু লক্ষণ দৃশ্যমান। তাছাড়া সাম্প্রতিক কয়েকটি সপ্তাহজুড়ে কিয়েভ থেকে সামরিক অগ্রগতির অভাসও পাওয়া যাচ্ছে। যদিও বিশ্বব্যাংক মনে করছে, পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ধীরগতির হবে এবং যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচের প্রয়োজন পড়বে। এর জন্য খরচ হবে কমপক্ষে ৩৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার, যা দেশটির যুদ্ধপূর্ব মোট দেশজ উৎপাদনের দেড় গুণেরও বেশি।

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই ইউরোপের সবচেয়ে দরিদ্র রাষ্ট্র ছিল ইউক্রেন। সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি দেশটির মোট কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশকে স্থানচ্যুত করেছে এবং ৬০ শতাংশ জনগণ বর্তমানের জাতীয় দারিদ্র্যসামীর নিচে বাস করছে।

ইউরোপ মধ্য এশিয়া অঞ্চলভিত্তিক বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট আনা বেজার্ড বলেছেন, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসন সবচেয়ে বড় মানব বাস্তুচ্যুতি সংকটের সূচনা করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মানবিক জীবনকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অকারণ যুক্তিহীন এক যুদ্ধ চলছে; অবস্থায় ইউক্রেনের প্রচুর পরিমাণে আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন, যা দেশটির পুনরুদ্ধার পুনর্গঠন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করবে।

চলমান যুদ্ধের জের ধরে দেশটির মূল্যস্ফীতি দ্রুত ত্বরান্বিত হয়, এপ্রিলে যা মাত্র ২৪ শতাংশের নিচে বার্ষিক হারে পৌঁছে। এছাড়া উচ্চ খাদ্যমূল্যে পরিবারগুলোকে, বিশেষ করে দরিদ্রদের ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো ধারণা করা হয়েছে যে, দেশটির উৎপাদনক্ষমতা ধ্বংস হওয়া, আবাদি জমির ক্ষতি এবং শ্রম সরবরাহ হ্রাসের কারণে অর্থনীতিতে আঘাতের পাশাপাশি যুদ্ধের অন্যান্য প্রভাবও অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া শরণার্থীদের ফিরে না আসার ঝুঁকিগুলো বাড়ছে, যুদ্ধ এখন অষ্টম মাসে গড়িয়েছে। ফলে যারা যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে পালিয়েছে তারা এরই মধ্যে অন্যত্র বসতি স্থাপন করছেন।

ঠিক বিপরীতভাবে বৈশ্বিক জ্বালানি মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রাশিয়াকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার অভিঘাত ঠেকাতে সাহায্য করেছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

তবে ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোর কিছু প্রতিকূল অর্থনৈতিক প্রভাবও পড়েছিল। কিন্তু এটি যতটা তীব্র বলে মনে করা হয়েছিল সে তুলনায় কম গুরুতর হয়েছে। প্রাথমিক ধাক্কাটি কর্তৃপক্ষের শক্তিশালী আর্থিক নীতিগত সাড়া, মূলধন নিয়ন্ত্রণ, আর্থিক কড়াকড়ি, আর্থিক খাতের ঝুঁকি প্রতিরোধের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ এবং একই সঙ্গে বৈশ্বিক পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দিয়ে চালিত উচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহের মাধ্যমে প্রশমিত করতে সক্ষম হয় রাশিয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন