আজ কে পাচ্ছেন সাহিত্যে নোবেল?

সালমান রুশদি, চিমামান্দা এনগোজি আদিচি ও হারুকি মুরাকামি

আজ বিকেলে ঘোষণা করা হবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয়ীর নাম। কে হতে পারেন কাঙ্খিত বিজয়ী! সালমান রুশদি, চিমামান্দা এনগোজি আদিচি নাকি হারুকি মুরাকামি? সেনেগালের ঔপন্যাসিক বাউবাকার বরিস ডিওপ, আর্জেটিনার সিজার আইরা, আলবেনিয়ার ইসমাইল কাদারে, সিরিয়ার কবি আলি আহমেদ এদোনিস, কেনিয়ার লেখক নগুগি ওয়া থিয়াংগোর মতো এমন আরো অনেক নাম রয়েছে নোবেল নাটকীয়তায়। 


প্রতি বছর সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণার আগে শুরু হয় হাজারো আলোচনা, উত্তেজনা, জল্পনা-কল্পনা। তবে দেখা যায় প্রায় প্রতি বছর বিজ্ঞ সাহিত্যবোদ্ধা আর বাজির মাঠ সরগরমকারীদের অনুমান ভেস্তে দিয়ে বিজয়ের শেষ হাসিটি হাসছে নোবেল কমিটি। কারণ বছর মাস জুড়ে যাদের নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে যাদের দুই একজনও নোবেল জয়ের ধারে কাছে নেই। আজকের দিনটি তাই খানিকটা বিশেষ। সাহিত্য সংশ্লিষ্টদের অনুমানগুলো ঠিকঠাক খেটে যায় নাকি নোবেল কমিটি এবারও অবাক করে দেয় বিশ্বকে আমরা তা দেখার অপেক্ষায়।


এ পর্যায়ে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ-আমেরিকান ঔপন্যাসিক সালমান রুশদির কথা বলতেই হয়। গত আগস্টে নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে ছুরিকাঘাতের শিকার হন তিনি। সালমান রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় এ লেখকের চতুর্থ বইদ্য স্যাটানিক ভার্সেস। এতে ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা। এর জন্য রুশদিকে ৯ বছর লুকিয়ে থাকতে হয়। যুক্তরাজ্যে বসবাসকালে বেশির ভাগ সময় এ লেখককে সরকারের সুরক্ষা ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে হয়েছে। স্যাটানিক ভার্সেস প্রকাশের পর থেকেই তিনি হত্যার হুমকি পেয়ে আসছিলেন। বইটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনি তার মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে রুশদির মাথার দাম হিসেবে ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ১৯৮১ সালে রুশদি তারমিডনাইটস চিলড্রেন নামক বইয়ের জন্য বুকার পুরস্কার জেতেন। তাছাড়া সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সালে সালমান রুশদিকে নাইট উপাধি প্রদান করা হয়।


অনলাইন বেটিং সাইটগুলোর তথ্য অনুসারে, ৭৫ বছর বয়সী সালমান রুশদি এ বছর নোবেল পুরস্কারের জন্য জোরালো প্রতিযোগী হিসেবে অবির্ভূত হয়েছেন। ল্যাডব্রোকস, বেটওয়ে, ২২বেট, বেটঅনলাইন এবং প্যাডি পাওয়ারের মতো সাইটগুলো রীতিমতো অর্থবাজি রাখছে সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার ঘিরে। বাজির দৌড়ে এগিয়ে আছেন সালমান রুশদি।


জোরেসোরে উচ্চারিত হচ্ছে নাইজেরিয়ান সাহিত্যিক চিমামান্দা এনগোজি আদিচির নামও। এ লেখিকা শুধু তার লেখনি নয়, সুন্দর বক্তা হিসেবেও স্বীকৃত। আদিচির কথা শুনতে শুনতে মনে হতে পারে গল্পের মতোই পাঠককে টেনে নিচ্ছেন তিনি। তার লেখা উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে হাফ অব আ ইয়েলো সান, আমেরিকান, পারপেল হিবিস্কাস।


কেনিয়ার লেখক নগুগি ওয়া থিয়াংগোর নামও বলা হচ্ছে বেশ জোরালোভাবে। অনেকের মতে, এবারের সাহিত্যের নোবেল যেতে পারে আফ্রিকার ঘরে। এ লেখকের বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে নাম আসে উইপ নট চাইল্ড, দ্য রিভার বিটউইন, উইজার্ড অব আ ক্রোর


বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার অর্জন করা আলবেনিয়ান লেখক ইসমাইল কাদারের কথাও বলছেন অনেকে। দ্য পিরামিড ও দ্য কনসার্ট তার অন্যতম বিখ্যাত বই। এবারের নোবেল জয়ীদের সম্ভাব্য তালিকায় তাই এগিয়ে রয়েছেন তিনি। অনেকে তো বলছেন এবার নোবেল যাবে কবিতার ঘরে। সিরিয়ার কবি আলি আহমেদ এদোনিসকে নিয়ে তাই জল্পনা-কল্পনা কম হচ্ছে না।


গত বছরগুলোর মতো এবারও জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামির নাম রয়েছে। তার বই নিজ দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরেও বেস্ট সেলার হিসেবে পরিচিত। এ লেখকের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে নরওয়েজিন উড, কাফকা অন দ্য সোর, আফডার ডার্ক, পিনবল ১৯৭৩, ব্লাইন্ড উইলো স্লিপিং গার্ল। গত বেশ কয়েক বছর ধরে তালিকার শীর্ষে থাকার পরও হারুকি মুরাকামির ভাগ্যে কেন নোবেল ধরা দিচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনাও কম হয়নি। আন্তর্জাতিক খ্যাতি, স্বীকৃতি, গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের কারণে সাহিত্য বিশ্লেষকেরা হারুকি মুরাকামির নাম নিচ্ছেন। তবে কারও মতে, হারুকি মুরাকামি নোবেল পুরস্কার পাবেন না। তবে পুরস্কার ঘোষণার আগে এটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেন নাকে হতে যাচ্ছেন সেই সৌভাগ্যবান।


সূত্র: নিউ রিপাবলিক, ইন্ডিয়া ডটকম

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন