আইইএর পূর্বাভাস

আগামী বছরও সংকুচিত থাকবে গ্যাসের বৈশ্বিক বাজার

বণিক বার্তা ডেস্ক

জার্মানির লুবমিনে নর্ড স্ট্রিম১ গ্যাস পাইপলাইনের একটি অংশ ছবি: রয়টার্স

ইউরোপের বাজারে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত কমছে। জ্বালানিটির বাজারদরও আকাশচুম্বী। এদিক চলমান সংকটে সব পর্যায়েই চলছে জ্বালানি সাশ্রয়, অর্থাৎ ব্যবহার কমিয়ে দেয়ার প্রয়াস। এতে পণ্যটির চাহিদা নিম্নমুখী। ফলে আগামী বছর প্রাকৃতিক গ্যাসের বৈশ্বিক বাজার সংকুচিত থাকবে। চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকের গ্যাসের বাজারবিষয়ক প্রতিবেদনে তথ্য জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)

আইইএ বলছে, রাশিয়া ইউরোপের বাজারে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে জ্বালানিটির দাম। পাশাপাশি এটির বাণিজ্যও বিঘ্নিত হচ্ছে, যা কিছু উদীয়মান উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশকে এরই মধ্যে জ্বালানি সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপে রুশ গ্যাসের প্রবাহ কমে যাওয়ায় বাজারে উদ্বেগ প্রকট আকার ধারণ করছে। আসন্ন শীতকে ঘিরে অনিশ্চয়তার মেঘ জমছে বিশ্বজুড়েই। কারণ শুধু ইউরোপই নয়, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) একই সরবরাহ পুলের ওপর বেশির ভাগ দেশই নির্ভরশীল।

আইইএর জ্বালানি বাজার নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক কেসুকি সাদোমরি বলেন, রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা এবং ইউরোপের বাজারে দেশটির সরবরাহ কমিয়ে দেয়া ভোক্তা, ব্যবসায়ীসহ পুরো বিশ্ব অর্থনীতিতেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

তিনি আরো বলেন, রাশিয়া বর্তমানে বিশ্বাসযোগ্য জ্বালানি সরবরাহকারী হিসেবে ক্রেতাদেশগুলোর আস্থা হারিয়েছে। তবে শুরু দেশটির জন্যই নয়, আরো নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে আগামী বছর বাজার সংকুচিত থাকবে।

ইউরোপ এশিয়ার স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম রেকর্ড সর্বোচ্চে আরোহণ করায় গ্যাসের চাহিদা কমছে। ফলে অনেক দেশই বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দিকে ঝুঁকছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত ইউরোপে গ্যাসের ব্যবহার ১০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। কারখানাগুলো উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এতে শিল্প খাতে জ্বালানিটির ব্যবহার ১৫ শতাংশ কমেছে, যা মোট ব্যবহার কমার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করছেন আইইএর বিশ্লেষকরা।

ইউরোপ রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে নরওয়ে অন্যান্য দেশ থেকে পাইপলাইন সমুদ্রপথে এলএনজি আমদানি সম্প্রতি বাড়িয়েছে। এর মাধ্যমে রাশিয়ার কারণে সৃষ্ট ঘাটতি নিরসনের চেষ্টা চালাচ্ছে ব্লকটি।

জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত ইউরোপে এলএনজির চাহিদা ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। কারণে পণ্যটির বড় ক্রেতা এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে চাহিদা শতাংশ কমেছে। ঊর্ধ্বমুখী দাম করোনা মহামারীর প্রভাব চাহিদা কমাতে সহায়তা করছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়ে ১৪ বছরের সর্বোচ্চে আরোহণ করেছে। উত্তর আমেরিকা অল্প কয়েকটি অঞ্চলের মধ্যে একটি, যেখানে বছরের এখন পর্যন্ত চাহিদা বেড়েছে। বিদ্যুতের চাহিদার কারণে অঞ্চলে এখনো জ্বালানিটির চাহিদা বেশি।

আইইএ বলছে, বাজারে চলমান সংকট ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে চলতি বছর গ্যাসের বৈশ্বিক ব্যবহার দশমিক শতাংশ কমতে পারে। এর মধ্যে ইউরোপে ব্যবহার ১০ শতাংশ কমবে, যা রেকর্ড সর্বনিম্ন। তবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে চাহিদা অপরিবর্তিত থাকবে। আগামী বছর গ্যাসের বৈশ্বিক ব্যবহার মাত্র দশমিক শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আইইএর পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর ইউরোপের এলএনজি আমদানি ছয় হাজার কোটি ঘনফুটের চেয়েও বেশি বাড়বে, যা বৈশ্বিক এলএনজি রফতানি সক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ। ফলে এলএনজির বৈশ্বিক বাণিজ্য স্বল্প মধ্যমেয়াদে বেশি ভালো রকম চাপের মধ্যেই থাকবে। তবে চলতি বছর এশিয়ার এলএনজি আমদানি গত বছরের চেয়ে কমবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন