নিখুঁত ব্যাপারটা বোরিং, সত্যিই বোরিং: আলিয়া ভাট

‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ ছবিতে আলিয়া ভাট অভিনয় করেছিলেন সানায়া চরিত্রে। অভিমন্যুর সঙ্গে সম্পর্কে থাকা অবস্থাতেই সানায়া একদিন রোহানকে পছন্দ করে বসে। ‘হাইওয়ে-এর ভিরা চরিত্রে অপহৃত আলিয়া সুযোগ পেয়েও বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে তার ধনী-ক্ষমতাবান পরিবারের কাছে ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। ‘বদ্রীনাথ কী দুলহানিয়া’তে আধুনিক-ক্যারিয়ার নির্ভর চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে। ‘টু স্টেটস’ ছবির অন্যন্যা একরোখা, ক্ষমাহীন, কঠিন বাস্তব এক চরিত্র যেন।

হালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র ‘ডার্লিংস’ এর বদরুন্নেসা পারিবারিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো শক্তিশালী এক নারী। তাই বলা যায় আলিয়া অভিনীত চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ চরিত্রই বিভিন্ন ত্রুটিতে ভরা। তারা ঠিক তথাকথিত কাঙ্ক্ষিত ‘নিখুঁত’ নয়। এ চরিত্ররা বাঁধাধরা ভারতীয় নারীদের মতো নয়, যাদের সচরাচর চোখ বন্ধ করে সম্মান করা হয়। বরং এ চরিত্রগুলো খানিকটা গণ্ডি পেরোনো, সাহসী, দৃঢ়চেতা, ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী। 

এক দশক আগের কথা। স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার ছবিটি মুক্তির পর কফি উইথ করন শোতে আলিয়াকে যখন ভারতের তৎকালিন প্রেসিডেন্টের নাম জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি পৃথ্বীরাজ চৌহানের নাম বলেন। 

ব্যাস। বোকা, নির্বোধ আর সাধারণ জ্ঞানহীন এক অভিনয় শিল্পীর খেতাব জুড়ে দেয়া হয় তাকে। একের পর এক ট্রলের শিকার হন আলিয়া। কিছুদিন পর তার কাছে আসে হাইওয়ে ছবির প্রস্তাব। ছবিটি যারা দেখেছেন তারা নির্দ্বিধায় আলিয়ার অভিনয় দক্ষতার কথা স্বীকার করবেন। বাণিজ্যিক ঘরানার প্রথম ছবি স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ারের পর হাইওয়ে যেন নতুন এক আলিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় বলে, এ শিল্পী অনেক দূরে যাবে।  

এরপর আলিয়ার কাছে যখন একের পর এক কাজের প্রস্তাব আসতে থাকে তখন তাকে শুনতে হয় নেপোটিজমের খোঁটা। বাবা মহেশ ভাট, মা সোনি রাজদান। আর আলিয়াকে বলিউডের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বলিউডের অন্যতম বিতর্কিত প্রভাবশালী ব্যক্তি করন জোহর। সবমিলিয়ে আলিয়া যে কতটা সুবিধাজনক অবস্থানে তা অস্বীকারের উপায় নেই। তাই নিজেকে প্রমাণের জন্য আলিয়াকে বাড়তি খানিকটা জোরই দিতে হয়েছে সবসময়। মুখে কুলুপ এটে কাজ করে গিয়েছেন আলিয়া। সে প্রচেষ্টার সূত্র ধরে আলিয়ার ঝুলিতে একের পর এক জমা হয়েছে উড়তা পাঞ্জাব, ডিয়ার জিন্দেগি, রাজি, গালি বয়, গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়ারির মতো চলচ্চিত্র। 

উল্লেখ্য, নিজেদের লেখকদের দ্বারা সংকলিত সর্বকালের সবচেয়ে ভালো ও সবচেয়ে খারাপ বড় পর্দার কাজের তালিকা প্রকাশ করে গার্ডিয়ান। গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়ারিতে করা আলিয়ার অভিনয় ‘বছরের সেরা কাজ’ হিসেবে বিবেচিত হয়। গার্ডিয়ানের লেখক মাইক ম্যাককাহিল আলিয়ার পারফরমেন্সকে ২০২২ সালের অন্যতম সেরা অভিনয় বলে উল্লেখ করেন। 

কিছুদিন আগে এক সাক্ষাত্কারে আলিয়াকে জিজ্ঞেস করা হয়, স্বজনপ্রীতির সুবিধা পাওয়া নিয়ে আপনার দিকে অনেকেই যখন তর্কের তীর ছুঁড়ে দিচ্ছিল আপনি তখন বিষয়গুলো কিভাবে সামলেছেন? উত্তরে আলিয়া বলেন, আমি শুধু কাজ করে গেছি, অভিনয়ে মনোযোগ দিয়েছি। আমাকে নিয়ে যারা স্বজনপ্রীতির তর্কে মেতেছেন আমি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি আরআরআর, ডালিংস কিংবা গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়ারির মতো সফল ছবির মাধ্যমে। তাহলে দিন শেষে কে জিতলো— উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন আলিয়া। 

আলিয়া জিতেছেন। জিতে নিয়েছেন দ্য টাইম হানড্রেড ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড খেতাব। সিঙ্গাপুরে টাইম হানড্রেড ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড পুরস্কার হাতে নিয়ে আলিয়া যে বক্তব্য রেখেছেন এখন আলোচনা চলছে তা নিয়ে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে আলিয়া বলেন, ‘প্রভাব’ তৈরি করা— এ কথাটির মানে কী, তা নিয়ে আমি অনেক ভেবেছি। আমি চিন্তা করছিলাম, যখন আমার ক্যারিয়ার শুরু করি তখন কী এ প্রভাব তৈরির উদ্দেশ্য ছিল আমার? 

উত্তরটি হচ্ছে, হ্যাঁ। 

এক দশক আগে ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি শুধু ভেবেছি, কীভাবে আমি একদিন বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নেব। কীভাবে গোটা বিশ্বের সবাইকে আমি জানাব যে আমি কতটা পরিশ্রমী, চৌকস, মেধাবী ও নিখুঁত একজন মানুষ। আমি সবসময় নিখুঁত হতে চাইতাম, আর চাইতাম বিশ্বজুড়ে সবাই তা জানুক। 

১০ বছর পর আজ আমি যখন বিশ্ব মঞ্চে দাঁড়িয়ে মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কারটি মুঠোবন্দি করছি তখন আমার কোনো ধারণা নেই কিভাবে আমি এখানে  পৌঁছলাম, কিংবা আমি এমন কী করেছি যার জন্য আমি এ সম্মান প্রাপ্তির দাবিদার। কিন্তু এতটুকু জানি যে, আজ আমি যদি একজন রোল মডেল বা অনুকরণীয় কেউ হয়ে সমাজে কোনো প্রভাব রাখতে চাই, তাহলে আমি আমার ত্রুটিগুলোকে নিয়েই অগ্রসর হবো। কারণ, এই এতোগুলো বছর পর আমি উপলব্ধি করতে পেয়েছি, তোমার ত্রুটিগুলোই তোমাকে গড়ে দেয়। নিখুঁত হওয়াটা বোরিং, সত্যিই বোরিং।’ 

আলিয়া তার অপটুতা, ত্রুটি, বোকামিগুলো মেনে নিয়েই কাজ করে গেছেন। আগামীতে হলিউডের ‘হার্ট অব স্টোন’ ছবিতে দেখা যাবে যাবে। শিগগিরই মা হতে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য, সারা বিশ্ব থেকে যারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে বিশেষ কিছু করেছেন, তাঁদের সম্মাননা জানাতেই দ্য টাইম হানড্রেড ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ডের এ আয়োজন। এ তালিকায় বিনোদনজগতের প্রতিনিধি হিসেবে একজন ভারতীয় তারকার নামই শুধু এসেছে। তিনি আলিয়া ভাট।

সূত্র: টাইম ডটকম, হিন্দুস্তান টাইমস অবলম্বনে রুহিনা ফেরদৌস

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন