স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠি

রাজধানীতে যানজট বাড়াচ্ছে ডাম্পিংয়ের গাড়ি

জেসমিন মলি ও শামীম রাহমান

রাজধানীর শাহবাগ থানায় এভাবেই বছরের পর বছর ধরে পড়ে রয়েছে মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা গাড়ি ছবি: সালাহউদ্দিন আহমেদ

সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন মামলার আলামত হিসেবে যানবাহন জব্দ করে পুলিশ। পরবর্তী সময়ে জব্দ করা এসব যানবাহনের জায়গা হয় থানাসংলগ্ন বিভিন্ন সড়কে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের সরকারি সংগীত কলেজসংলগ্ন সড়কে দেখা মিলবে সারি সারি জব্দ যানবাহনের। ঢাকার অন্যান্য থানাসংলগ্ন সড়কগুলোতেও একইভাবে রাস্তার একটি অংশ দখল করে থাকে ডাম্পিংয়ের যানবাহন। এতে নগরীর সৌন্দর্যে যেমন হানি হয়, তেমনি রাস্তার একটি বড় অংশ দখল করে গাড়ি রাখায় অন্যান্য যান চলাচলের জন্য সড়ক সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে তৈরি হয় যানজট। এমন প্রেক্ষাপটে একটি বসবাসযোগ্য দৃষ্টিনন্দন মহানগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে যানজট নিরসনসহ জনস্বার্থে মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা যানবাহন ঢাকার রাস্তায় ডাম্পিং না করতে অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাস্তায় ডাম্পিং করা যানবাহন অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সম্পর্কিত একটি চিঠি গতকাল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে পাঠানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে পাঠানো স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ অনুযায়ী নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি স্বায়ত্তশাসিত সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে ডিএনসিসি। আগারগাঁও সরকারি সংগীত কলেজসংলগ্ন রোডসহ নগরীর অন্যান্য পুলিশ স্টেশনের (থানা) সামনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আলামত হিসেবে জব্দ করা গাড়ি ডাম্পিং করে রাখায় রাস্তার অর্ধেক অংশ জনসাধারণ ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। তাই নগরীর সৌন্দর্য রক্ষায় জনস্বার্থে বিভিন্ন স্থান থেকে মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা গাড়িগুলো অন্যত্র স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হলো।

এর আগে গত ২৮ আগস্ট রাস্তায় থানার গাড়ি ডাম্পিং করার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে একটি চিঠি দেয় ডিএনসিসি। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা সিটি করপোরেশনের অন্যতম দায়িত্ব। দায়িত্ব পালনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সবসময় সচেতন। নগরীকে আধুনিকায়ন করার লক্ষ্যে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলমান। ফলে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে লিংক রোডগুলো উন্মুক্ত রাখা আবশ্যক। এমন অবস্থায় ঢাকার যানজট নিরসনে রাস্তায় ডাম্পিং করা যানবাহন দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্যত্র স্থানান্তর করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আইন বিচার বিভগের সহায়তায় ঢাকা মহানগরীর সংশ্লিষ্ট আদালতগুলোর মাধ্যমে আলামত বিনষ্ট/নিলাম বা আদালতের সন্তুষ্টি সাপেক্ষে অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করতে সেখানে অনুরোধ করা হয়।

বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, আলামত হিসেবে জব্দ করা অনেক গাড়ি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বছরের পর বছর ধরে পড়ে রয়েছে। এটি যে থানার সামনের রাস্তায় শুধু যানজট তৈরি করছে তাই নয়, এসব জব্দকৃত গাড়ির কারণে মশা-মাছির প্রকোপও বাড়ছে। এই বিষয়গুলোতে যদি সচেতনতা বাড়ানো যায় তাহলে সবার জন্যই উপকারী হবে। সমস্যার সমাধানে আইন বিচার বিভাগকে অবহিত করার জন্যই চিঠিটি দেয়া হয়েছে। মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা গাড়ির তথ্য আদালতে কীভাবে প্রদর্শন বা উত্থাপন করা যায় বা বিষয়টি একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কীভাবে আনা যায় সে বিষয়ে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিটি দেয়া হয়েছে। ক্ষেত্রে আইনগতভাবে যেন কোনো সমস্যা না থাকে সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে আলামত হিসেবে জব্দ করা গাড়ির ডিসপোজাল স্ট্র্যাটেজি কী হতে পারে সেটি নির্ধারণ করতে হবে। যাতে সে অনুযায়ী পুলিশ পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারে। বিষয়টি এক ধরনের নিয়মের মধ্যে এলে পরে সবাই তা অনুসরণ করতে পারবে। এসব বিবেচনা থেকেই চিঠিটি দেয়া হয়েছে।

শুধু ঢাকার থানাগুলো নয়, দেশের বেশির ভাগ থানায় মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা গাড়ি রাস্তায় ডাম্পিং করা হয়। বিষয়টি উঠে এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকেও। দেশের বিভিন্ন থানায় বা অন্যান্য স্থানে আটক করা অবৈধ যানবাহন, মোটরসাইকেলসহ অবৈধ রিকশা বছরের পর বছর অব্যবহূত থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করা এবং সেগুলো দেশের সম্পদ হিসেবে কাজে লাগানোর সুপারিশও করে সংসদীয় কমিটি।

বৈঠকে বলা হয়, মাদক মামলায় অনেক যানবাহন জব্দ করা হয়, যা আদালতে মামলা পেন্ডিং থাকার কারণে বছর বছর অব্যবহূত থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন অব্যবহূত থাকার ফলে একদিকে যেমন সরকারি সম্পদ জায়গা নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ময়লা-আবর্জনা সৃষ্টির মাধ্যমে পরিবেশের দূষণ হচ্ছে। এক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি বা আদালতের নজরে এনে জব্দকৃত মালামাল নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মত দেয় সংসদীয় কমিটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন