কর্মশালায় নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী

সাড়ে ১৬ কোটি লোক আদমশুমারির এ তথ্য বিশ্বাস করে না মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ৭০ বছর আগে আমাদের জনসংখ্যা ছিল কোটি। এখন আদমশুমারিতে হয়েছে সাড়ে ১৬ কোটি, তাও আবার মানুষ বিশ্বাস করে না। আগে যখন আমরা বিভিন্ন জায়গায় যেতাম এত মানুষ ছিল না। এখন জনসংখ্যা বেড়েছে। ঢাকায় ৫০ লাখও মানুষ ছিল না, এখন তিন কোটি ছাড়িয়েছে। আর চাপটা যাচ্ছে নদীর ওপর দিয়ে। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী ডকইয়ার্ডগুলো উপযুক্ত জায়গায় স্থানান্তরের খসড়া সমীক্ষা প্রতিবেদন নিয়ে এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথা বলেন।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঢাকার চারপাশ দূষণের হাত থেকে রক্ষার জন্য ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর থেকে বুড়িগঙ্গাও বাদ যায়নি। যেখানে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ছিল না, সেখানে নদী নিরাপদ থাকবে কী করে? নদী দখলমুক্ত করার সময় জায়গার প্রতি দখলদারের আবেগের প্রসঙ্গ টেনে এনে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন এক জায়গা থেকে অন্য কোথাও যাই, আমাদের মায়া কাজ করে। আমরা বাঙালি জাতি, আমাদের আবেগ একটু বেশি, আমরা তো আর ইংরেজ না। আমাদের মাটির প্রতিও মায়া আছে। তবুও যেকোনো মূল্যে আমাদের নদী দখলমুক্ত হতে হবে।

বুড়িগঙ্গার তীরে ডকইয়ার্ডগুলো গড়ে উঠেছে সদরঘাটের বিপরীত দিকে। সেখানে ডকইয়ার্ড আছে মোট ৯৭টি। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এসব ডকইয়ার্ডের কারণে নৌ চলাচলে সমস্যা, অপরিকল্পিত নোঙর, নদী দখল, দূষণ দুর্ঘটনা ঘটে বলে সমীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। তাই এগুলোকে সরিয়ে পরিকল্পিতভাবে ধলেশ্বরী নদীর তীরের কেরানীগঞ্জের আনন্দ বাজার জাজিরা এলাকায় গড়ে তুলতে একটি প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এতে ব্যয় হতে পারে প্রায় হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর সেই লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ধলেশ্বরীর তীরে ১০৬টি ডকইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার বর্গকিলোমিটারের ছয়টি, ছয় হাজার বর্গকিলোমিটারের ২০টি, তিন হাজার বর্গকিলোমিটারের ৪০টি, হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটারের ২০টি ৮০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ২০টি ডকইয়ার্ড থাকবে।

বিষয়ে গতকালের কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল বলেন, ২০২৬ সালে যেহেতু আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হতে চাচ্ছি। সুতরাং আমাদের পরিবেশ, নদী, জলবায়ু সবকিছু দেখতে হবে। সেই সঙ্গে দেশকে শিশুশ্রমমুক্ত করতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান . মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, নদী দখলের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে কিছু সমস্যা রয়ে গিয়েছে। নৌ-পুলিশ, শিল্প পুলিশকে সেখানে ক্ষমতা দিয়ে নিয়োগ করা যায় কিনা এবং তাদের সহায়তা নিতে পারি কিনা বিষয়েও ভাবতে হবে। তিনি বলেন, ডকইয়ার্ড যারা তদারকি করছেন তারা কেন তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছেন না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করা জরুরি।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, নদী রক্ষা কমিশন ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার কর্মকর্তা, নদীর তীরবর্তী ডকইয়ার্ডগুলোর মালিক এবং পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন