বেসরকারি পর্যায়ে দাম বাড়ায় নিয়ন্ত্রণহীন বাজার

সরকারি মিলের চিনির দামও বাড়ানোর উদ্যোগ

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

সম্প্রতি বাড়ানো হয়েছে বেসরকারি মিলগুলোর চিনির দাম। এতে অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে ভোগ্যপণ্যটির পাইকারি বাজার। এর মধ্যেই সরকারি মিলের চিনির দামও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ খাদ্য চিনি শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)

দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, মিল পর্যায়ে মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে হাজার ১৮০ থেকে হাজার ২০০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল হাজার ৯৫০ সর্বোচ্চ হাজার টাকায়। অর্থাৎ মণপ্রতি দাম প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে। ট্যারিফ কমিশন থেকে চিনির দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে পাইকারি বাজারেও পণ্যটির দাম বাড়ছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে চিনির দাম নিম্নমুখী।

গত ২২ সেপ্টেম্বর বেসরকারি পর্যায়ে খোলা চিনির দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৮৪ টাকা এবং মোড়কজাত সর্বোচ্চ ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ট্যারিফ কমিশন। যদিও বর্ধিত দাম মেনে নিতে পারেননি বেসরকারি মিলমালিকরা। অক্টোবরের শুরুতে নতুন করে চিনির দাম বাড়াতে ফের প্রস্তাব দেয় বেসরকারি মিলমালিকদের সংগঠন। এরই মধ্যে বেসরকারি মিলের চিনির মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে দেশের পাইকারি বাজারগুলোয় মণপ্রতি দাম - টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়।

বিএসএফআইসি ২০২১ সালের এপ্রিল চিনির দাম কেজিপ্রতি ৭০ টাকা থেকে টাকা বাড়িয়ে ৭৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল। সবশেষ ১০ আগস্ট বেসরকারি মিলমালিকদের অ্যাসোসিয়েশন সরকারের কাছে চিনির দাম পুনর্নির্ধারণের আবেদন করে। আবেদনের পরও দাম বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি সরকার। এরপর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ফের আবেদন করলে ২২ সেপ্টেম্বর নতুন দাম নির্ধারণ করে দেয় ট্যারিফ কমিশন। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বর্ধিত মূল্যের চিনি বাজারে পাওয়া যাবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।

এমনিতেই পণ্যটির দাম ঊর্ধ্বমুখী। তার ওপর সরকার দর নির্ধারণের পর দাম আরো বেড়েছে। বর্তমানে পাইকারি বাজারেই কেজিপ্রতি চিনির দাম ৯০ টাকা ছাড়িয়েছে। বেসরকারি খাতে দাম বাড়ানোর ফলে সরকারি মিলের চিনির দামও সমপরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএসএফআইসির কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে বিএসএফআইসির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মো. মাযহার উল হক খান বণিক বার্তাকে বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর বিষয়টি শুনেছি। সরকারি মিলের চিনি দেড় বছর ধরে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। বেসরকারি মিলে দাম বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি মিলের চিনির দামও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আমরা বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠাব।

চিনি শিল্প করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, দেশের সরকারি পর্যায়ে পরিচালিত ১৫টি মিলের মধ্যে দুই বছর ধরে ছয়টি মিলের উৎপাদন বন্ধ। এক সময় ১৫টি মিলে প্রতি বছর গড়ে এক টনের বেশি উৎপাদন হলেও সর্বশেষ মৌসুমে নয়টি মিলে চিনি উৎপাদন হয়েছে মাত্র ২৪ হাজার ৫০০ কেজি। নভেম্বরের শেষ দিকে শুরু হওয়া নতুন উৎপাদন মৌসুমেও ছয়টি মিলের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এবার নয়টি মিলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার টন নির্ধারণ করা হলেও ৩০-৩৫ হাজার টনের বেশি উৎপাদন সম্ভব হবে না বলে মনে করছে করপোরেশনের উৎপাদন বিভাগ।

জানা গেছে, বর্তমানে সরকারি মিলের খোলা চিনির নির্ধারিত দাম কেজিপ্রতি ৭৪ খুচরায় ৭৫ টাকা। মোড়কজাত সরকারি মিলের চিনির দাম নির্ধারণ করা রয়েছে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা। তবে বিএফএসআইসির চিনির মজুদ ফুরিয়ে আসায় ডিলার পর্যায়ে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করপোরেশনের কাছে সংরক্ষিত বাদে চিনির মজুদ রয়েছে ১২ হাজার ৭০৮ দশমিক ২৬ টন।

চট্টগ্রাম কাস্টমস তথ্যমতে, গত অর্থবছরে (২০২১-২২) চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মাত্র ১৭ লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ টন। এক বছরের ব্যবধানে চার লাখ টন চিনি কম আমদানি হওয়ায় সরবরাহ সংকটে পড়েছে বলে দাবি করছে দেশের প্রধান বেসরকারি রিফাইনারি মিলগুলো। পাশাপাশি দামও বেড়েছে।

বাংলাদেশ চিনি ডিলার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে চিনি আমদানিতে শুল্ক অনেক বেশি। বেসরকারি পর্যায়ে চিনির দাম বাড়িয়ে দেয়ার কারণে পাইকারি বাজারগুলোয় দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে। তবে সরকারি মিলের চিনির দাম বাড়ানো না হলেও সরবরাহ খুবই কম। সরকারিভাবে সরবরাহ বাড়ানো হলে বেসরকারি খাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হবে। এক্ষেত্রে সরকারি মিল চালুর পাশাপাশি সরকারি চিনি আমদানি করে ডিলারের মাধ্যমে দেশব্যাপী সরবরাহ করা হলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন