সমুদ্রপথে কয়লার বৈশ্বিক সরবরাহে সংকট

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি বছর সমুদ্রপথে তাপীয় কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা স্থিতিশীল রয়েছে। মূলত ভারত ইউরোপে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার জেরেই বৈশ্বিক চাহিদায় প্রভাব পড়ছে। ফলে পরিচ্ছন্ন জ্বালানিটির ওপর নির্ভরতা কমার পরিবর্তে বাড়ছে। এদিকে চাহিদায় উল্লম্ফনের কারণে সমুদ্রপথে সংকট থাকবে কয়লা সরবরাহেও। সম্প্রতি পণ্যবাজার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নোবল রিসোর্সেস কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে।

নোবলের প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি বছর তাপীয় কয়লার বৈশ্বিক চাহিদা ৯৯ কোটি ৬০ লাখ টনে উন্নীত হবে। অথচ সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯৮ কোটি ৩০ লাখ টনে। অর্থাৎ ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াতে কোটি ৩০ লাখ টনে। পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে কয়লার দাম আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। এরই মধ্যে জ্বালানিটির দাম কয়েক বছরের সর্বোচ্চে অবস্থান করছে।

চলতি বছর ভারতের তাপীয় কয়লা আমদানি গত বছরের তুলনায় ঊর্ধ্বমুখী। ইউটিলিটি খাতে জ্বালানিটির চাহিদা বাড়ছে লাফিয়ে। এটিই আমদানি বৃদ্ধিতে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে।

অন্যদিকে জ্বালানি তেলের সংকট ঊর্ধ্বমুখী দাম, গ্যাসের ক্রমবর্ধমান বাজারের কারণে ইউরোপের দেশগুলো বিকল্প হিসেবে কয়লার ব্যবহার বাড়াচ্ছে। কারণে অঞ্চলটিতেও সমুদ্রপথে কয়লার চাহিদা বাড়ছে।

নোবলের গবেষণা প্রধান রদ্রিগো ইকেভেরি বলেন, চলতি বছরের বাকি মাসগুলোয়ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম আকাশচুম্বী থাকবে। এতে কয়লার চাহিদা আরো বাড়বে।

এদিকে শুধু চলতি বছরই নয়, আগামী বছরও ইউরোপে কয়লার চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সরবরাহ শিগগিরই বাড়ার সম্ভাবনা নেই। ২০২৫ সালের পর সরবরাহ পরিস্থিতিতে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে দেশটির ইউটিলিটিগুলোকে কয়লার মজুদ পরিপূর্ণ করার নির্দেশনা দিয়েছে। বিশেষ করে এপ্রিল-মে পর্যন্ত দাবদাহের পর মজুদ নিম্নমুখী হতে শুরু করলে নির্দেশনা দেয়া হয়। চলতি বছর ভারত ১৭ কোটি ১০ লাখ টন তাপীয় কয়লা আমদনি করতে পারে। গত বছর আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৯০ লাখ টন।

ইউরোপের দেশগুলোসহ আটলান্টিক অঞ্চলে তাপীয় কয়লার আমদানি চাহিদা ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে। উত্তর দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপসহ আটলান্টিক অঞ্চলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ তাপীয় কয়লার আমদানির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮ কোটি টনে। গত বছর আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র কোটি ৯০ লাখ টন।

এদিকে উত্তর দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয়ও চলতি বছর কয়লার চাহিদা থাকবে শক্তিশালী। এর মধ্যে জাপান দক্ষিণ কোরিয়ায় চাহিদা সর্বাধিক বাড়বে। অন্যান্য বাজারে ঊর্ধ্বমুখী আমদানি চীনের বাজারে নিম্নমুখিতায় ভারসাম্য তৈরি করবে। তবে সম্প্রতি চীনেও চাহিদা কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির বাজারসংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছর চীনের তাপীয় কয়লা আমদানি গত বছরের তুলনায় কোটি ৫০ লাখ টন কমে ২১ লাখ টনে নেমেছে। এর প্রধান কারণ শিল্প উৎপাদনের গতি শ্লথ হয়ে পড়া। এছাড়া নতুন করে লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ এতে প্রভাব ফেলেছে।

চলতি বছর সমুদ্রপথে তাপীয় কয়লা সরবরাহে নেতৃত্ব দেবে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির সরবরাহ অব্যাহত বাড়ছে। তবে সর্বোপরি বৈশ্বিক সরবরাহ অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

নোবল রিসোর্সের দেয়া তথ্য বলছে, চলতি বছর ইন্দোনেশিয়ার কয়লা রফতানি গত বছরের তুলনায় দুই কোটি টন বাড়বে। রফতানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৬ কোটি ৭০ লাখ টনে। যদিও সরকারের বেঁধে দেয়া উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ কোটি ৭০ লাখ টন। দেশটি সবচেয়ে বেশি রফতানি করছে ভারতের বাজারে। তবে অন্য শীর্ষ দেশ অস্ট্রেলিয়ার রফতানি চলতি বছর কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রফতানির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৮ কোটি ৩০ লাখ টনে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন