ভারতে চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা

বিধিনিষেধ শিথিলের দাবি ব্যবসায়ীদের

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতের চাল রফতানিকারকদের মাঝে সম্প্রতি অসন্তোষ চরম আকার ধারণ করেছে। কারণ দেশটির বেশির ভাগ বন্দরেই তাদের বিপুল পরিমাণ চাল আটকা পড়ে আছে। চাল রফতানিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে রফতানিকারকরা আদৌ এসব চাল নির্ধারিত গন্তব্যে পাঠাতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিধিনিষেধ শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

রফতানিকারকরা বলছেন, মাঠে থাকা অবস্থায় যেসব চালের রফতানি চুক্তি হয়েছে এবং ওয়্যারহাউজগুলোয় যেসব চাল আটকা পড়ে আছে, সেগুলো রফতানির অনুমতি দিতে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে আরো সময় চেয়েছেন রফতানিকারকরা।

অল ইন্ডিয়া রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক ভিনোদ কোল বলেন, রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে ভারতের চাল রফতানিকারকরা অন্তত ছয় কোটি রুপির লোকসানে পড়েছেন।

চাল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা গত সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। এর মাধ্যমে ভাঙা চাল রফতানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য স্থানীয় বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করা। কারণ আসন্ন মৌসুমে চাল উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বন্দরগুলোয় আটকে থাকা চালের মজুদ ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে খালি করার নির্দেশ দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বাড়িয়ে ২১ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু রফতানিকারকরা সময় আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বন্দরে যে পরিমাণ চাল আটকা পড়েছে তা স্বল্প সময়ের মধ্যে জাহাজ বোঝাই করে গন্তব্যে পাঠানো সম্ভব নয়।

চলতি বছর ভারতের বেশকিছু অঞ্চলে অতিবৃষ্টি দেখা দিয়েছে। আবার কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল উৎপাদনের জন্য অপর্যাপ্ত। কারণে ধান আবাদ থেকে শুরু করে চাল উৎপাদন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চলতি অর্থবছর ভারতের চাল রফতানি প্রায় ৪০-৫০ লাখ টন কমতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে বিশ্বজুড়ে কৃষিপণ্যটির সরবরাহ সংকট দেখা দিতে পারে। ঊর্ধ্বমুখী চাপের মুখে পড়তে পারে চালের বাজার। ভারতের রফতানিকারকরা এমন উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশটি সম্পতি ভাঙা চাল রফতানি বন্ধ ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি সেদ্ধ চাল বাদে সব ধরনের নন-বাসমতি চালের ওপর আরোপ করা হয়েছে ২০ শতাংশ রফতানি শুল্ক।

আন্তর্জাতিক চাল বাণিজ্যে ৪০ শতাংশ বাজার হিস্যাই ভারতের। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটি সব মিলিয়ে কোটি ১২ লাখ ৩০ হাজার টন চাল রফতানি করে। এর আগের অর্থবছর রফতানির পরিমাণ ছিল কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার টন। কভিড-১৯ মহামারী শুরুর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটি রফতানি করেছিল ৯৫ লাখ ১০ হাজার টন। অর্থাৎ গত অর্থবছর চাল রফতানি মহামারীপূর্ব পর্যায় ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বছর পণ্যটি রফতানিতে মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশটি।

সরকারি তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (এপ্রিল-আগস্ট) ভারত ৯৩ লাখ ৫০ হাজার টন চাল রফতানি করেছে। গত বছরের একই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল ৮৩ লাখ ৬০ হাজার টন। অর্থাৎ বছরের এখন পর্যন্ত দেশটির রফতানি বেশ ভালো আকারের প্রবৃদ্ধি দেখেছে। কিন্তু নীতিগত পরিবর্তনের কারণে আগামী মাসগুলোয় চাল রফতানি ব্যাপক বাধাগ্রস্ত হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন