সম্প্রতি কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এ চলচ্চিত্র উৎসবে ডেব্যু ফিল্ম হিসেবে ফিপ্রেসকি-ইন্ডিয়া সমালোচক পুরস্কার জিতে নেয় বাংলাদেশের সিনেমা ‘পায়ের তলায় মাটি নাই’। প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন দেশের ১১টি সিনেমা অংশ নেয়। এর মধ্যে ফিপ্রেসকি-ইন্ডিয়া ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ডের জন্য চারটি সিনেমা মনোনয়ন পায়। তার মধ্যে পুরস্কার জিতে নিয়েছে মোহাম্মদ রাব্বী মৃধা পরিচালিত পায়ের তলায় মাটি নাই। উৎসব সমাপনী দিনে প্রযোজক আবু শাহেদ ইমন কিংবা নির্মাতা উপস্থিত না থাকায় তাদের পক্ষে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন বাংলাদেশের অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। রোববার সন্ধ্যায় পর্দা নেমেছে ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের প্রথম আসরের।
গত মাসে কোনো রকমের সংশোধন ছাড়াই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে সেন্সর পেয়েছে পায়ের তলায় মাটি নাই। মোহাম্মদ রাব্বি মৃধা পরিচালিত প্রথম সিনেমা এটি। সিনেমাটির চিত্রনাট্যও তার লেখা। এটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে একজন মানুষের জীবনের টানাপোড়নের গল্প দেখানো হয়েছে। সিনেমার গল্প মূলত নায়ক সাইফুল নামের এক সাধারণ ব্যক্তিকে নিয়ে। যিনি একজন দরিদ্র অ্যাম্বুলেন্স চালক। তাকে তার দুই স্ত্রী, পরিবার, কাজ, নৈতিকতা ও সামাজিকতার নানা দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে যেতে হয়।
নির্মাতা মোহাম্মদ রাব্বি মৃধা এ নিয়ে বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন একটি অর্জন। আমরা খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি বাংলাদেশে সিনেমাটি মুক্তির জন্য। কারণ অনেক তো হলো, এখন আমাদের দেশের মানুষকে না দেখাতে পারলে শান্তি পাচ্ছি না।’ সিনেমাটি কবে দেশে মুক্তি পাবে এ প্রশ্নের জবাবে রাব্বি জানান, ‘ইনশাআল্লাহ, আগামী বছর এটি দেশে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। যেহেতু এ বছর সিনেমা হলে দারুণ ব্যস্ততা রয়েছে, তাই আমরা কোনো শিডিউল পাচ্ছি না। এ বছর শেষ হতে তো খুব বেশি সময় বাকি নেই।’
সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন আবু শাহেদ ইমন। বক্স অফিস নিবেদিত আর গল্পরাজ্য ফিল্মসের প্রযোজনায় নির্মিত সিনেমাটিতে সহযোগিতা করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড ও বাতায়ন প্রডাকশনস। নির্বাহী প্রযোজক মীর মোকাররম হোসেন। সহপ্রযোজক হিসেবে আছেন ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও বাতায়ন প্রডাকশনসের তাহরিমা খান। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন দীপান্বিতা মার্টিন, মোস্তফা মনোয়ার, প্রিয়াম অর্চি প্রমুখ।
এ নিয়ে দীপান্বিতা মার্টিন বলেন বলেন, ‘যেহেতু আন্তর্জাতিক জায়গা থেকে এ স্বীকৃতি এসেছে, সে জায়গা থেকে আমার মনে হচ্ছে আমাদের কষ্ট সার্থক। দেশের বাইরের মানুষ সুন্দরভাবে আমাদের সিনেমাটা গ্রহণ করেছে। আগামী বছর এ সিনেমা হলে আসবে—এ নিয়ে দর্শকের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা সুন্ন্দরভাবে আমাদের সিনেমাটা গ্রহণ করবেন এবং হলে গিয়ে সবাই দেখবেন।’
এর আগে বণিক বার্তাকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে দীপান্বিতা মার্টিন বলেন, ‘এটা আমার প্রাণের সিনেমা। সত্যি বলতে এটা আমার খুব ভালোবাসার সিনেমা। এতে আমি যে চরিত্রটা করেছি সেটা আমার খুব পছন্দের। এটা করতে গিয়ে খুব তৃপ্তি পেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে মনের মতো একটা চরিত্র পেলাম। এখন আমি আমার মতো করে কাজ করতে পারব। সম্পূর্ণ ভিন্ন চরিত্র করেছি, তাই আলাদা মজা পেয়েছি। কাজটা করতে গিয়ে এমন কনফিডেন্স তৈরি হয়েছে।’
এ সিনেমায় নিজের চরিত্র নিয়ে দীপান্বিতা বলেন, ‘আমার চরিত্রটার নাম মনোয়ারা। সে খুব সংগ্রামী একজন মেয়ে। সিনেমাটা দেখলে দর্শক বুঝতে পারবে জীবন তাকে এমন একটা পরিস্থিতিতে নিয়ে গিয়েছে, বেঁচে থাকার জন্য সে মানুষকে খুনও করতে পারে। আমার মনে হয়েছে চরিত্রটা নারী শক্তির প্রতীক।’
এর আগে ‘নেপাল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এর পঞ্চম আসরে সেরা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের ক্যাটাগরিতে ‘গৌতম বুদ্ধ অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছিল সিনেমাটি। শ্রীলংকার জাফনা চলচ্চিত্র উৎসবে বিশেষ সমালোচক পুরস্কার জিতেছিল। বুসান (কোরিয়া), ইন্ডিয়ার বেঙ্গালুরু, পুনেসহ শ্রীলংকা, জাপান, নেপাল, অস্ট্রিয়া, লন্ডন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের জনপ্রিয় ১৪টি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে এ সিনেমা। চলতি বছরে বেশকিছু বাংলা সিনেমা দর্শককে হলমুখী করেছে। অন্যদিকে দেশে এখনো মুক্তি না পেলেও পায়ের তলায় মাটি নাই দেশের বাইরে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছে। আগামী বছরে মুক্তির পর দর্শক এটি কীভাবে গ্রহণ করে তা দেখা এখন সময়ের অপেক্ষা। তবে এ সিনেমার অর্জন যে আমাদের দেশীয় সিনেমা সমৃদ্ধ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে সেটি বেশ স্পষ্ট। সে দিক বিবেচনা করে সিনেমাটি নিয়ে ইতিবাচক ভাবনাই ভাবছেন নির্মাতারা।