ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল মাঠে পদদলিত হয়ে নিহত ১৭৪

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল দাঙ্গায় হতাহতদের ছবি থেকে প্রিয়জন শনাক্তের চেষ্টায় স্বজনরা ছবি: এপি

ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা প্রদেশের একটি ফুটবল মাঠে খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ পদদলিত হয়ে নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৪ জনে। আহত হয়েছে আরো দুই শতাধিক দর্শক। গত কয়েক দশকে ফুটবল মাঠে সংঘর্ষের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

পুলিশের বরাতে দ্য স্ট্রেইটস টাইমস জানায়, আরেমা এফসি নামে একটি ফুটবল ক্লাব প্রতিদ্বন্দ্বী পার্সেবায়া সুরাবায়ার কাছে হেরে যাওয়ার পর ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। খেলায় আরেমাকে - গোলে হারায় পার্সেবায়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ দফায় দফায় কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। এতে পুরো মাঠ এবং এলাকায় বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের ওপর হামলার পাশাপাশি পুলিশের গাড়িতে ভাংচুর চালায় বিশৃঙ্খল দর্শক। একটি পুলিশ ট্রাকসহ ১৩টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একপর্যায়ে মাঠে নামে সেনা সদস্যরা।

গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় গণমাধ্যমকে ইস্ট জাভার ডেপুটি গভর্নর এমিল দার্দাক জানান, পদদলিত হয়ে অন্তত ১৭৪ জন মারা গিয়েছে।

অবশ্য হতাহতের তথ্য নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, স্টেডিয়ামে অন্তত ১৩০ জন পদদলিত হতে পারে। তবে অন্যান্য সরকারি সূত্রের বরাতে জানা গিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ১৮০ ছাড়াতে পারে। স্থানীয় এক হাসপাতালের পরিচালক জানান, পদদলিত হয়ে নিহতদের একজনের বয়স পাঁচ বছর।

ইস্ট জাভা পুলিশপ্রধান নিকো আফিনতা গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, নিহতদের মধ্যে অন্তত দুজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। অন্তত ৩৪ জন মাঠেই পদদলিত হয়ে মারা যান। অন্যরা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মারা যান বলে জানান নিকো।

ক্ষোভ জানিয়ে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষ লীগের সব ধরনের ম্যাচ স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো। তিনি আশা করেন এটা যেন হয় ইন্দোনেশিয়ার ফুটবল মাঠে সর্বশেষ ট্র্যাজেডি।

ইন্দোনেশিয়ার প্রধান নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী মাহফুদ এমডি জানান, স্টেডিয়ামে সক্ষমতার চেয়েও অধিক দর্শক ছিল। ৩৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা থাকলেও গতকাল ৪২ হাজার দর্শক খেলা দেখতে এসেছিল। পুলিশ বলছে, প্রায় হাজার দর্শক স্টেডিয়াম ছেড়ে মাঠে নেমে আসে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ক্ষুব্ধ দর্শকরা পুলিশকে উদ্দেশ করে গালিগালাজ করে।

নজিরবিহীন ঘটনার প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, মাঠে দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। অনেক সমর্থক পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা শুরু করে।

আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় নিহত বাড়তে পারে।

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, তাদের নীতিমালা অনুযায়ী মাঠে আগ্নেয়াস্ত্র গ্যাস ব্যবহার নিষিদ্ধ। কেন পুলিশ এমনটা করল তার কারণ জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে ফিফার অনুরোধে সাড়া দেয়নি ইস্ট জাভা পুলিশ।

এদিকে স্টেডিয়ামে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহারসহ বিভিন্ন ঘটনার তদন্ত পরিচালনা করার কথা জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার কমিশন।

স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা গিয়েছে, পুলিশের কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের ফলে হাজারো দর্শক নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। এতে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে বা অন্য দর্শকের ধাক্কায় ভূপাতিত হয়।

গত কয়েক দশকের মধ্যে কোনো ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সহিংসতা বলা হচ্ছে এটিকে। ১৯৬৪ সালে লিমাতে পেরু-আর্জেন্টিনা অলিম্পিক বাছাইপর্বের সময় পদদলিত হয়ে ৩২০ জন নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হয়।

১৯৮৫ সালে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসের হেইসেল স্টেডিয়ামে নিহত হয় ৩৯ এবং আহত ৬০০ জন।

ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল মাঠে সহিংসতা অনেকটা নিয়মিত ঘটনা। বিভিন্ন দলের সমর্থকদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ থেকে সংঘাতের সৃষ্টি হতে দেখা গিয়েছে। কিছু ফ্যান ক্লাবের তথাকথিত কমান্ডার রয়েছেন, যারা নিজ দলের সমর্থকদের মাঠে নিয়ে যান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন