প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ১৩.৩৮ শতাংশ

১২৪৯ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বাংলাদেশ থেকে হাজার ২৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল হাজার ১০২ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার ডলারের পণ্য। হিসাবে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বা বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে করা সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের সংস্করণ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল।

অর্থমূল্য বিবেচনায় বাংলাদেশ থেকে রফতানি হওয়া শীর্ষ পাঁচ পণ্য হলো পোশাক, হোম টেক্সটাইল, চামড়া চামড়াজাত পণ্য, কৃষিপণ্য এবং পাট পাটজাত পণ্য। পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের মোট রফতানির ৯১ দশমিক ৮৩ শতাংশজুড়েই ছিল পাঁচ পণ্য। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে পোশাকের রফতানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ, হোম টেক্সটাইলে ২৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। চামড়া চামড়াজাত পণ্য ২০ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং পাট পাটজাত পণ্যের রফতানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। তবে কৃষিপণ্যের ২০ দশমিক ১৯ শতাংশ রফতানি কমেছে।

ইপিবির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট রফতানির ৮২ শতাংশই ছিল তৈরি পোশাক। তিন মাসে পোশাক রফতানির অর্থমূল্য ছিল হাজার ২৭ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে রফতানি হয় ৯০৫ কোটি ৯৪ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাক পণ্য। হিসাবে রফতানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ৩৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রফতানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ২৭ কোটি ৯২ লাখ ৩০ হাজার ডলার। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে হোম টেক্সটাইল পণ্যের রফতানি বেড়েছে ২৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে চামড়া চামড়াজাত পণ্যের রফতানি বেড়েছে ২০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। সময়ে মোট রফতানি হয়েছে ৩২ কোটি ৭৯ লাখ ৭০ হাজার ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ২৭ কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পণ্য। সোনালি আঁশখ্যাত পাট পাটজাত পণ্যের রফতানির অর্থমূল্য চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ছিল ২৪ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার ডলারের। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ২১ কোটি ২২ লাখ ৯০ হাজার ডলারের পণ্য। সে হিসাবে পণ্যটির রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। আর কৃষিপণ্যের রফতানি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে হয়েছে ২৭ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ডলারের। আগের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রফতানি হয়েছিল ৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য। সে হিসাবে কৃষিপণ্য রফতানি কমেছে বা প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়েছে ২০ দশমিক ১৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের মোট রফতানি অর্থমূল্যের ৮২ শতাংশের বেশি হয় পোশাক পণ্যের মাধ্যমে। পণ্যের মোট রফতানি প্রবৃদ্ধিই পুরো রফতানি খাতে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। প্রান্তিক হিসেবে প্রবৃদ্ধির চিত্র দেখা গেলেও মাসভিত্তিক পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে রফতানির নেতিবাচক পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ইপিবির মাসভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, সদ্যসমাপ্ত সেপ্টেম্বরে রফতানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক বা কমেছে দশমিক ২৫ শতাংশ। রফতানি হয়েছে ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে রফতানি হয় ৪১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার ডলারের পণ্য। একই চিত্র রফতানিতে অবদান সবচেয়ে বেশি রাখা পণ্য পোশাকের। ইপিবির প্রকাশিত পরিসংখ্যানের সংকলন থেকে পোশাক প্রস্তুত রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে, সদ্যসমাপ্ত সেপ্টেম্বরে দেশের পোশাক রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে। গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানি হয়েছে প্রায় ৩১৬ কোটি ১৬ লাখ হাজার ডলারের। ২০২১ সালের একই সময় রফতানি হয়েছিল ৩৪১ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার ডলারের। সে হিসেবে পোশাক রফতানি কমেছে শতাংশেরও বেশি।

বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বণিক বার্তাকে বলেন, জুলাইয়ের পর আগস্টে রফতানি কমেছিল। সেপ্টেম্বরে আরো কমেছে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বরে পোশাক রফতানি হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের। আগামী দিনগুলোয় রফতানি আরো কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। পূর্বাভাস আমরা আগেই জানিয়েছিলাম। বিগত দিনগুলোতে আগের ক্রয়াদেশের কারণে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু এখন ২০-৩০ শতাংশ ক্রয়াদেশ কমেছে। ইউরোপের ওয়্যারহাউজগুলোয় অনেক পণ্য অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। অনেক ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে। অক্টোবর নভেম্বরে পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি আরো কমবে। আগামী জানুয়ারি নাগাদ পরিস্থিতি ঠিক হতে পারে।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, মহামারী থেকে রফতানি ঘুরে দাঁড়ানোর ১৩ মাসের মাথায় এবং আশাব্যঞ্জক প্রবৃদ্ধির পর, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে রফতানি পূর্ববর্তী ২০২১ সালের একই মাসের তুলনায় দশমিক ৫২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। নিটওয়্যার পণ্যের রফতানি হ্রাস পেয়েছে শতাংশ। ওভেন পণ্যের রফতানি হ্রাস পেয়েছে দশমিক ৬৬।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কভিড-পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী খুচরা বাজার বিভিন্ন সংকটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে কনটেইনারের অপ্রতুলতা এবং সাপ্লাই চেইন সংকট, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি এবং পরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে পূর্বাভাস অনুযায়ী মন্দার আবির্ভাব; যার কারণে খুচরা বিক্রয়ে ধস নেমেছে, ক্রেতাদের পোশাকের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে প্রভৃতি সংকটে শিল্প বিপর্যস্ত।

বিজিএমইএ পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ক্রেতারা তাদের ইনভেন্টরি এবং সাপ্লাই চেইনকে নিজেদের জন্য লাভজনক রাখতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ কেউ উৎপাদন এবং অর্ডার পর্যন্ত আটকে রেখেছে। সামগ্রিকভাবে শিল্পের জন্য একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যদিও টেকসই উন্নয়ন এবং প্রতিযোগী সক্ষমতায় আমাদের শক্তি আমরা দেখিয়েছি, তার পরও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ২০২২ সালের শেষ ত্রৈমাসিকের জন্য আশাব্যঞ্জক কিছু অনুমান করা কঠিন করে তোলে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন