গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘মনের মানুষ’ সিনেমায় দুই বাংলার দুই নন্দিত অভিনেতা প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি ও চঞ্চল চৌধুরী অভিনয় করেছিলেন। সেই থেকে প্রসেনজিতের সঙ্গে চঞ্চল চৌধুরীর গাঢ় সম্পর্ক। কিছুদিন আগে চঞ্চল চৌধুরীর উদ্যোগে বাংলাদেশের কয়েকজন শিল্পীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে তার। চঞ্চল চৌধুরীসহ বিজরী বরকত উল্যাহ, ইন্তেখাব দিনার, শাহানাজ খুশী, বৃন্দাবন দাস, চঞ্চল চৌধুরীর স্ত্রী ডাক্তার শান্তা ও তাদের ছেলে শুদ্ধ, পরিচালক সৈয়দ আহমেদ শাওকী ও খুশী-বৃন্দাবনের ছেলে দিব্য-সৌম্যর সঙ্গে দেখা করেন প্রসেনজিৎ। এরই মধ্যে প্রসেনজিতের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর শিল্পীরা ঢাকায় ফিরেছেন। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ঢাকার শিল্পীরা ফেসবুকে তাদের ভালো লাগার কথাও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু প্রসেনজিতের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাড়া মিলছিল না। অবশেষে শুক্রবার প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি তার অফিশিয়াল ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইলে ভালো লাগার কথা ব্যক্ত করে লিখেছেন, “বহুদিন পরে চঞ্চলের সঙ্গে দেখা। মনে হলো যেন সেই ‘মনের মানুষ’ শুটিংয়ের দিনগুলো ফিরে পেলাম। চঞ্চল তো সত্যিই মনের মানুষ.. এবং সেই সঙ্গে সেদিন যে সকল
গুণীজনের সাথে আড্ডা হলো প্রত্যেকেই। শুভেচ্ছা রইল সকলের জন্য।” এ নিয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিজরী বরকত উল্যাহ লিখেছেন, ‘একজন শিল্পীর বিনয় তাকে মানুষ হিসেবে অনেক উঁচুতে নিয়ে যায়। সেটি প্রমাণ করেছেন কলকাতার প্রথিতযশা জনপ্রিয় অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (বুম্বাদা)। তার সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার ও বিনয়ে আমরা মুগ্ধ হলাম। তিনি রাতের খাবারের আয়োজন করেছিলেন তার বাড়িতে আমাদের জন্য, মানে বাংলাদেশের কিছু শিল্পীর জন্য। চমৎকার সময় আমরা কাটিয়েছি তার বাড়িতে। ভীষণ পরিপাটি ও শৈল্পিকতার ছোঁয়ায় পরিপূর্ণ এ বাড়ির রয়েছে ঐতিহাসিক মর্যাদা। দারুণ একটি সময় কাটালাম আমরা। চঞ্চল চৌধুরী তোমাকে ধন্যবাদ উদ্যোগটি নেয়ার জন্য।’ এ নিয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, “দাদার পরম আন্তরিকতায় আমরা সবাই ভীষণ মুগ্ধ। আমাদের সময় দেয়ার জন্য দাদার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা রইল। আর সবার সঙ্গে ছবি তোলা শেষে আমাকে বললেন “চল বাবু, ‘মনের মানুষ’-এ আমরা যেমন করে গানের সাথে নাচতাম, সে রকম একটা ছবি তুলি’-ইনিই বুম্বাদা।” শাহানাজ খুশী লিখেছেন, ‘শিল্পের মানুষকে কীভাবে সম্মান দেখাতে হয় তা সত্যি তার কাছে শেখার আছে! বাসায় নিমন্ত্রণ করা, অঢেল সময়, গল্প ও ডিনারসহ আন্তরিক আপ্যায়ন মুগ্ধকর। বাংলাদেশের শিল্পীদের কাজের প্রতি তার এ সম্মান সত্যিই আমাদের অনেক শিক্ষা দেয়। আপাদমস্তক শিল্পিত এ শিল্পীর প্রতি সম্মান জানাই এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করি। অশেষ ধন্যবাদ বন্ধু চঞ্চলকে।’
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক হিসেবে শীর্ষস্থানে আছেন প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি। তিনি শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম অভিনয় করেন তার বাবা বিশ্বজিৎ পরিচালিত ১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘ছোট্ট জিজ্ঞাসা’তে। ১৯৮৩ সালে ‘দুটি পাতা’ সিনেমা দিয়ে প্রথম নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘অমর সঙ্গী’ ছিল তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সফল সিনেমা। আজও বাংলার দর্শকদের কাছে অত্যন্ত রোমান্টিক গানের তালিকায় উপরের দিকে জায়গা করে নেবে ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’। বিজেতা পণ্ডিতের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন অমর সঙ্গীতে। এ ছবি ব্যবসায়িক দিক থেকে যেমন সাফল্য পায়। তেমনই দর্শকদের মনেও জায়গা করে নেয়।
পরিচালক ডেভিড ধবনের ‘আঁধিয়া’ সিনেমার মধ্য দিয়ে হিন্দিতে আত্মপ্রকাশ হয়েছিল প্রসেনজিতের। বাংলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হিন্দি সিনেমায়ও অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। অভিনয়ের জন্য একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। কলকাতার পাশাপাশি বাংলাদেশেও সমান জনপ্রিয় প্রসেনজিৎ।