আগামী বছর এলএনজির বাজারে আরো সংকটের আশঙ্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি বছর সংকটের মধ্যে রয়েছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বৈশ্বিক বাজার। আগামী বছর সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করবে। সম্প্রতি কথা বলেছেন ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরোল।

ইউরোপ পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানিতে রাশিয়ার ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে আনার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ব্লকটি সাম্প্রতিক মাসগুলোয় এলএনজি আমদানি ব্যাপক হারে বাড়িয়েছে। চলতি বছরের জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে রাশিয়ার চেয়েও বেশি পরিমাণে এলএনজি আমদানি করে। মস্কো ইউরোপে সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার পরই আমদানিতে এমন পরিবর্তন দেখা দেয়।

সম্প্রতি জাপানে অনুষ্ঠিত এলএনজি উৎপাদক ব্যবহারকারীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ফাতিহ বিরোল বলেন, চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ইউরোপের এলএনজি আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে।

রাশিয়া নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করে। কিন্তু বর্তমানে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ তলানিতে নেমেছে। এমনকি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইইউ বর্তমানে উত্তর আফ্রিকা নরওয়ে থেকে অতিরিক্ত পাইপলাইন সরবরাহের দিকে ঝুঁকছে। আর এসব গ্যাসের বেশির ভাগই আসবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গ্যাস আমদানিতে রাশিয়াকে স্থানান্তর করতেই বাজারে এমন পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট ইরসুলা ফন ডের লিয়েন বলেন, গত বছর ইউরোপ মোট গ্যাস আমদানির ৪০ শতাংশই ক্রয় করেছে রাশিয়া থেকে, কিন্তু বর্তমানে পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি শতাংশে নেমে এসেছে।

আগামী বছরগুলোয় ইউরোপের আরো বেশি পরিমাণে গ্যাস প্রয়োজন হবে। এর ফলে এশিয়ার সঙ্গে অঞ্চলটির প্রতিযোগিতা বাড়বে। আর কারণেই সরবরাহ সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে।

বাজার পরামর্শক এনার্জি আসপেক্টেসের বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে জ্বালানি সরবরাহ কমছে। এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়া প্রধান পাইপলাইনগুলো দিয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে সরবরাহ বন্ধ করছে। এর ফলে শুধু শীতেই নয়, আগামী বছরগুলোয়ও ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে।

রেইস্ট্যাড এনার্জির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার পাইপলাইন সরবরাহ না থাকলে ২০৪০ সালের মধ্যে ইউরোপে এলএনজি চাহিদা ১৫০ শতাংশ করে বাড়বে। স্থানীয় উত্তোলন এবং নন-রাশিয়ান পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি অব্যাহত থাকলেও চাহিদা হ্রাসের হার হবে অত্যন্ত স্বল্প। 

ইউরোপের দেশগুলো গত বছরের জুন-আগস্ট পর্যন্ত হাজার ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে। তবে চলতি বছরের একই সময় তা বেড়ে হাজার ৯১৪ কোটি ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।

এছাড়া গত বছর ইউরোপ সব মিলিয়ে হাজার ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে। অথচ চলতি বছরের আট মাসে আমদানির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬০০ কোটি ঘনফুটে।

গত বছর বিশ্বজুড়ে এলএনজি বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩৮ কোটি টন। এর মধ্যে আট কোটি টনই আমদানি করেছে ইউরোপ।

বিশ্ববাজারে এলএনজি রফতানির ৭০ শতাংশই করা হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে। বাকি ৩০ শতাংশ স্পট মার্কেটে। এর আগে ইউরোপের দেশগুলো এতটা সক্রিয়ভাবে এলএনজি বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করেনি। তবে বছর স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির বিষয়টি অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ নাগাদ বিশ্বজুড়ে মোট ৬৪১টি এলএনজি জাহাজ ছিল। এর মধ্যে ৪৫টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এদিকে বৈশ্বিক এলএনজি জাহাজের বহরও দিন দিন বড় হচ্ছে। চলতি বছর বহর ৩০ শতাংশ করে বাড়বে। নতুন করে ২১৬টি জাহাজ নির্মাণাধীন। এসব জাহাজের কার্যক্রম শুরু হলে এলএনজি বাণিজ্য আরো সম্প্রসারিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা জানান, চলতি বছরের গ্রীষ্ম মৌসুমে এশিয়ায় এলএনজি আমদানি গত বছরের তুলনায় লক্ষণীয় মাত্রায় কমেছে। আমদানির পরিমাণ হাজার কোটি ঘনফুট থেকে কমে হাজার ৩০০ কোটি ঘনফুটে নেমেছে।

প্রতি বছরই স্পট মার্কেট থেকে বিপুল পরিমাণ এলএনজি ক্রয় করেন এশিয়ার ক্রেতারা। কিন্তু চলতি বছরের চিত্র ভিন্ন। বিশেষজ্ঞরা জানান, ইউরোপের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বাড়ায় স্পট মার্কেট থেকে এশিয়ার এলএনজি ক্রয় কমেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন