‘দেয়ালে পিঠ ঠেকেনি দেয়াল সামনে আছে’

দেশের মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক রাজনীতিবিদদের মধ্যে বদরুদ্দীন উমরের অবস্থান সামনের সারিতে। পিতা আবুল হাশিম ছিলেন উপমহাদেশের মুসলিম জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা। পারিবারিকভাবেই রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বহনকারী বদরুদ্দীন উমর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত রয়েছেন ৫৩ বছর ধরে। সুদীর্ঘ সময় কাছ থেকে দেশের রাজনীতির অনেক উত্থান-পতন দেখেছেন তিনি। দেশের রাজনীতি, সংস্কৃতিসহ নানা বিষয়ে শতাধিক বই লিখেছেন। দেশের রাজনীতির বর্তমান অবস্থা ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিকা মাহজাবিন

দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হলো মানুষ লড়াই করবে। একটা পর্যায় আসবে যখন তাদের আর লড়াই না করে উপায় থাকবে না। মানুষ সবসময় চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। লোকে একটা কথা বলে যে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আসলে পিঠ দেয়ালে ঠেকেনি। দেয়াল তো সামনে। সামনে দেয়াল থাকায় এগোনো যাচ্ছে না। কাজেই মানুষ একটা পর্যায়ে দেয়াল ভাঙার জন্য দাঁড়াবে।

বাংলাদেশের বয়স এখন অর্ধশত পেরিয়েছে। পাঁচ দশকের জাতীয় রাজনীতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

পঞ্চাশ বছরে জাতীয় রাজনীতিতে সংগঠিত কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন হয়নি। এখানে কোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি নিয়ে সেভাবে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। জাতীয় রাজনীতিতে প্রগতিশীল ধারা প্রগতিশীল চরিত্র নেই।

স্বাধীন বাংলাদেশ কেন গণমানুষের রাষ্ট্রে রূপ নিল না?

স্বাধীন বাংলাদেশ গণমানুষের রাষ্ট্রে রূপ নেবে কীভাবে? বৈষম্য দূর হওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই। উপরন্তু বাংলাদেশে বৈষম্য আরো বেড়েছে। স্বাধীনতার পর বাঙালি অনেক ব্যাংকের এমডি, কোম্পানির এমডি, ম্যানেজার, বড় বড় ব্যবসায়ী হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। দেশে ধনী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। আবার কিছু লোক আছে, ভাত খেতে পারছে না। শিক্ষা পাচ্ছে না। চিকিৎসা পাচ্ছে না। যেমন চা বাগানের শ্রমিকরা। কিছুদিন আগেও তারা দিনে ১২০ টাকা বেতনে খেটেছে। এখন কয়েক টাকা বেড়ে ১৭০ টাকা পাচ্ছে। এগুলোই চরম বৈষম্যের উদাহরণ।

আমাদের সংস্কৃতি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিকাঠামোয় কীভাবে প্রভাব ফেলছে?

দেশের সংস্কৃতি অর্থনীতি যেভাবে থাকবে রাজনীতিতে তো তার প্রভাব অনিবার্যভাবে পড়বেই। এখানকার রাজনীতিতেও তাই দেখা যাচ্ছে। এখানের সংস্কৃতি সাহিত্য ক্ষেত্রে দেখা যায় যে স্বাধীনতার পরে যাদের জন্ম হয়েছে তাদের সে রকম কোনো কাজকর্ম দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের মতো তাদেরও পঞ্চাশ বছর বয়স হয়েছে। কিন্তু এই পঞ্চাশ বছর বয়সে লোকজনের মধ্যে যারা মোটামুটি লেখক তাদের একজনের মধ্যেও তো রকম কোনো জিনিস দেখা যাচ্ছে না। সাহিত্যে যাদের পরিচিতি আছে তাদের সবারই জন্ম একাত্তর সালের আগে।

বাংলাদেশের পরিবর্তনটা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হয়েছে। এই যে লুটতরাজের মধ্য দিয়ে মধ্য শ্রেণীটা তৈরি হয়েছে, এই মধ্য শ্রেণীর মধ্যে যারা রয়েছে তারা তো কাঠামোর বাইরে যেতে পারে না। তাদের যে শ্রেণী চরিত্র সেটাকে ফেলে দিয়ে তো হঠাৎ করে কিছু একটা হতে পারে না। কাজেই তারা এই শ্রেণীর গণ্ডির মধ্যেই আছে। এবং এটার ফলই হচ্ছে তাদের মধ্যে সমাজের জন্য চিন্তা বলে কিছু নেই। শুধু আমি। আমার কী হবে? আমার ফ্যামিলির কী হবে? এই চিন্তা তাদের। কাজেই ছাত্রদের থেকে আরম্ভ করে কেউই এখন সমাজের জন্য কোনো চিন্তা করে না। বামপন্থী রাজনীতি থেকে শুরু করে সবকিছুই আত্মকেন্দ্রিক ভাবনা থেকে আলাদা না।

দেশের ছাত্র আন্দোলনে আগের মতো প্রাণবন্ত ভাব দেখা যাচ্ছে না কেন?

ব্রিটিশ পাকিস্তান আমলে আমাদের দেশের ছাত্র আন্দোলনের খুব গৌরবজনক ইতিহাস আছে। দেশভাগের পর ঊনসত্তর, একাত্তর সালে ছাত্ররা রাজপথে থেকে দাবি আদায়ের জন্য প্রাণপণ লড়াই করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর ছাত্রদের আন্দোলন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। এদিক থেকে সত্তরের দশককে বলা যায় দেশের ছাত্ররাজনীতির জন্য অন্ধকার যুগ।

আশির দশকে এসে এরশাদের বিরুদ্ধে ছাত্ররা ব্যাপক আন্দোলন করেছে। আন্দোলনের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। একই সঙ্গে অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দাবিও তাদের ছিল না। বিএনপি আওয়ামী লীগ যেভাবে আওয়াজ তুলল এরশাদ হটাও, তারাও দলগুলোর সঙ্গে সঙ্গে শুধু এরশাদ হটাও আন্দোলন করল।

কিন্তু ব্রিটিশ পাকিস্তান আমলে সাম্রাজ্যবাদবিরোধিতাই ছাত্র আন্দোলনগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল। ইংরেজরা যখন সুয়েজ খাল দখল করল তখন আমরা ছাত্র ছিলাম। পুরানা পল্টনের চৌরাস্তায় একটি ব্রিটিশ ইনফরমেশন সেন্টার ছিল। ওইটা ছিল কাঠের তৈরি এক বিরাট বিল্ডিং। সুয়েজ খাল দখলের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা সেই ব্রিটিশ ইনফরমেশন সেন্টারে আগুন লাগিয়ে দিল। মুহূর্তের মধ্যে সেই কাঠের বিল্ডিং ভস্মীভূত হয়ে গেল।

একানব্বই সালে যখন থেকেই এখানে সংসদীয় সরকার হলো তারপর থেকে এখানে ছাত্র আন্দোলন বলে আর কিছু রইল না। ছাত্ররা একেবারে অদ্ভুতভাবে আগের যেটুকু তাদের চিন্তার মধ্যে গণতান্ত্রিক উপাদান, প্রগতিশীলতা ছিল সবকিছু বাদ দিয়ে দিল। এই ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা কী করে যেসব নির্মাণকাজ হচ্ছে সেখান থেকে চুরি, বখরা এসব নিয়ে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দরদস্তুর, মারামারি করছে? কাগজে ছবি দেখি। সড়কি, লাঠি, বল্লম এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে একদল ছাত্র আরেক দল ছাত্রের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। ছাত্রদের অধঃপতনের ফলে এদের মধ্যে এখন আর কোনো প্রগতিশীল চিন্তা নেই।

দেশের বর্তমান কৃষক রাজনীতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন শুনতে চাই।

দেশে এখন আর কোনো কৃষক আন্দোলন হচ্ছে না। গ্রামের অর্থনৈতিক সামাজিক পরিবর্তনের ফলে কৃষক রাজনীতিতে অবস্থা বিরাজ করছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীরা এখন গ্রামে গিয়ে থাকতে চায় না। আগেকার দিনে যেমন তেভাগা আন্দোলন হয়েছে। কিংবা অন্য সময় গ্রামে নানা রকম সমস্যা নিয়ে দেশের বড় বড় আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। এখন বাংলাদেশের অবস্থা অন্য রকম হয়ে গিয়েছে।

গ্রামের যারা চাষাবাদ করছে তাদের মধ্যে আগের মতো এখন আর বড় জমির মালিক নেই। কৃষকরা তাদের ছেলেদের লেখাপড়া শেখাচ্ছে। কৃষকদের সন্তানরা লেখাপড়া শিখে আর কৃষিকাজে হাল ধরতে চায় না। ফলে গ্রামে কৃষিকাজের লোকের সংখ্যা অনেক কমছে। গ্রামাঞ্চলে দেখা যাচ্ছে কোনো আন্দোলন ছাড়াই মজুরি বেড়েছে। গ্রামের বেকাররা বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাদের একটা পরিচিতি এবং যোগাযোগ গড়ে উঠেছে।

কমিউনিস্ট নেতারা আগে কৃষক সমিতি করত। অনেক কমিউনিস্ট নেতা সারা জীবন কৃষকদের জন্য কাজ করে কাটিয়েছে। এখনকার গ্রামাঞ্চলে কৃষকের মধ্য থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক কর্মীরা কেউ আর গ্রামে কৃষকদের আন্দোলনে যেতে চায় না। কাজেই গ্রামে কৃষকদের মধ্যে আন্দোলন আর কী হবে? বর্তমানে শ্রমিকদের মধ্যে কিছু সংগঠন এখানে-সেখানে আছে। আমি মনে করি, গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের আন্দোলনগুলো এখন রাজনৈতিক হতে হবে।

দেশে পুঁজির বিকাশের ধারাটিকে কীভাবে দেখছেন?

প্রথম দিকে বাংলাদেশের পুঁজি লুটপাটের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। লুটপাটকারী চরিত্রটা এখনো এখানকার বড় বড় শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। দেশের স্বাধীনতার পর বাঙালি অনেক ব্যাংকের এমডি, কোম্পানির এমডি, ম্যানেজার, বড় বড় ব্যবসায়ী হয়েছে। জনগণের আমানত তারা মেরে দিচ্ছে। ব্যাংকের মালিক মানেই হচ্ছে লুটপাট। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শ্রেণী ক্ষমতায় আছে। সোনালী ব্যাংকে একবার হাজার কোটি টাকা মেরে দিল। তখন অর্থমন্ত্রী ছিল আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বললেন, চার হাজার কোটি টাকা আর এমন কী? একটি দেশের অর্থমন্ত্রী কীভাবে এমন কথা বলতে পারে? টাকা সোনালী ব্যাংকে আর ফেরত আসেনি। তবে বাংলাদেশে এখন উৎপাদন হচ্ছে। এদিকে দেশের শিক্ষার ভালো ব্যবস্থা নেই। মানুষ চিকিৎসা ছাড়া মরছে।

দেশে বামপন্থী আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছে। ফলে বাম দলগুলো স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল হয়েছে। বামপন্থীরা স্বাধীনতার আগে রাজপথে বিভিন্ন আন্দোলন গড়ে তুলেছে। এভাবে না বলে অন্যভাবে দেখা যায়, যারা আন্দোলনগুলো করেছে তারাই বামপন্থী। কাজ করতে গেলে দক্ষিণপন্থী হওয়া চলবে না। দক্ষিণপন্থীদের তুলনায় যারা আন্দোলনগুলো করেছে তাদেরই বামপন্থী হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে।

বামপন্থীর অবস্থা এখানে ভালো হবে কী করে? দেশে যে প্রক্রিয়ায় মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি হয়েছেমধ্যবিত্তরা হচ্ছে সুবিধাবাদী। বামপন্থীদের মধ্যেও চরম সুবিধাবাদী আছে। যেসব বামপন্থী সংগঠন আছে তাদের মধ্যে তো চোর, বদমাইশের অভাব নেই। বামপন্থীদের মধ্যে কিছু ভালো মানুষও আছে।

বামপন্থীদের মধ্যে যেটা হয়েছে যে আগেকার দিনের মতো খুব একটা লড়াকু অবস্থা আছে সে রকম তো নেই। তাদের আগে যে একটা অঙ্গীকার থাকত এসব অঙ্গীকার এখন আর নেই। এরা টিকে থাকার জন্য কিছু আন্দোলন করে। কী আর এমন আন্দোলন করে। কাজেই বামপন্থীরা এমন কোনো আন্দোলন করছে না যা উল্লেখযোগ্য। এখন যে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে সেখানে তো বামপন্থীদের চেয়ে দক্ষিণপন্থী বিএনপি বেশি আন্দোলন করছে।

সিপিবি একটা অর্গানাইজেশন। এরা তো একেবারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপনে, গোপনেও না প্রায় প্রকাশ্যে সম্পর্কিত থাকে। আমরা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে দেখেছি যখনই কোনো আন্দোলন হয়েছে তখনই সিপিবি বিকাশ ঘটানোর জন্য না, সেখানে ঢুকে কোনো অন্তর্ঘাতমূলক কাজকর্ম করেছে। সেটাকে ধ্বংস করার জন্য। এই হচ্ছে এখানে সবচেয়ে বড় বামপন্থী সংগঠন সিপিবির ভূমিকা। অন্য যেসব ছোটখাটো বামপন্থী দল আছে তাদের মতোই।

বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন কি তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে?

সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। কারণ সমাজতন্ত্র ছাড়া মানুষের আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এটা আমাকে অনেকে বলে যে সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী? আমি সবসময় তাদের বলেছি, সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ দেখার চেয়ে দেখতে হবে যে পুঁজিবাদের কোনো ভবিষ্যৎ আছে কিনা। পরিষ্কার আমরা দেখতে পাচ্ছি যে পুঁজিবাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র হিসেবে যেভাবে ছিল, অন্যান্য দেশের ওপর তারা যে হামলা করত সেই হামলা তারা এখন আর করবে না বলেই দিয়েছে। আফগানিস্তানে মার খাওয়ার পরে পুঁজিবাদ যে কোনো সমস্যার সমাধান করত পারে না এটা তাদের দেশের নানা রকম সমস্যা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। পুঁজিবাদের কোনো ভবিষ্যৎ আছে সেটা কোনো বুদ্ধিমান লোকে বলবে না। কাজেই পুঁজিবাদের যদি কোনো ভবিষ্যৎ না থাকে তাহলে আর থাকছে কী? সমাজতন্ত্র একটা ঐতিহাসিক ব্যবস্থা হিসেবে একেবারে অপ্রতিরোধ্য। সমাজতন্ত্র ছাড়া মানুষকে দেয়ার অন্য কোনো পদ্ধতি শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে হতে পারে না।

বাংলাদেশে বাম দলগুলোর আন্দোলন কেমন হওয়া উচিত?

এখনকার বাম নেতাদের দিয়ে আন্দোলন হবে না। আন্দোলনের জন্য নতুন লোক আসতে হবে। সমাজে যখন সংকট বৃদ্ধি পাবে তখন সে দেয়াল তারা ভাঙবে। প্রথমে জনগণের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। তারপর তার সঙ্গে যে মূল কারণ রয়েছে রাজনৈতিক শক্তি সেটাকে ধরতে হবে। রাজনৈতিক শক্তিকে টার্গেট করতে হবে। শুধু অর্থনৈতিক শক্তিকে টার্গেট করলে হবে না। রাজনৈতিক কারণেই অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো হচ্ছে।

রাজনীতির সঙ্গে আপনার পরিবারের সম্পৃক্ততা কেমন ছিল?

বর্ধমানে আমাদের পরিবারে রাজনীতির চর্চা একেবারে ছেলেবেলা থেকে দেখেছি। আমাদের পরিবারের অনেক সদস্য রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল। আমার পূর্বপুরুষ যেমন আমার আব্বা, আমার দাদো, দাদোর পিতা উনিশ শতক থেকে রাজনীতি করছে। আমাদের পরিবারে হিন্দু মহাসভা ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের লোকই ছিল। কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, অন্যান্য সংগঠনে আমাদের পরিবারের লোকজন ছিল। বর্ধমানে আমাদের পরিবার নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক পরিবার ছিল। কাজেই রাজনীতির সঙ্গে আমার আমার পরিবারের সম্পৃক্ততা নতুন না।

কীভাবে এলেন রাজনীতিতে?

আমি রাজনীতিতে এসেছি দেশের অবস্থা দেখে, মানুষের অবস্থা দেখে। আমি হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসিনি। রাজনীতিতে আসতে আমার অনেক সময় লেগেছে।

আমি কোনো ছাত্ররাজনীতি করিনি। আমার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ছাত্র ফেডারেশন করত। কিন্তু আমি কোনো ছাত্র ফেডারেশন করিনি। কিশোর বাহিনী নামে কমিউনিস্ট পার্টি একটা সংগঠন করেছিল। এটার সভাপতি ছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। তখন আমি এটার সেক্রেটারি ছিলাম। এছাড়া অন্য কোনোভাবে আমি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না।

ইউনিভার্সিটিতে আমি রাজনৈতিকভাবে একজন সচেতন কর্মী হিসেবে সঙ্গে থেকেছি। অনেক আন্দোলনে সক্রিয় কর্মী বা নেতা ছিলাম না। কিন্তু আমি সমস্ত আন্দোলনে সঙ্গে থেকেছি। আমি রাজনীতির সঙ্গে সবসময় সম্পর্ক রেখেছি। পর্যবেক্ষণ করেছি। ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রেও তাই। আমি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে এসেছি ১৯৬৯ সালে। তখন আমি কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হই।

আপনার রাজনৈতিক জীবনে আপনার বাবার রাজনীতির কোনো প্রভাব ছিল কি?

আমার রাজনীতিতে আমার বাবার কোনো প্রভাব নেই। কেননা তার যেটুকু প্রভাব ছিল সেটি আমি রাজনীতিতে আসার আগেই শেষ হয়ে যায়।



এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন