দশ বছরের বেশি পুরনো সব ধরনের যানবাহনে সবুজ কর আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। সবুজ করের পরিমাণ হবে বার্ষিক ট্যাক্স টোকেনের ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ। প্রাথমিকভাবে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, জিপ, মাইক্রোবাস, পিকআপ ও ট্যাক্সিক্যাবে এ ধরনের কর আরোপ করা হবে। পরবর্তী সময়ে শহরের বাস, ট্রাক, টেম্পো, হিউম্যান হলার এবং বিলাসবহুল এসি বাসসহ অন্যান্য পরিবহনেও সবুজ কর আরোপ করা হবে। প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ বছরের বেশি পুরনো সব ধরনের যানবাহনের ওপর এ কর প্রযোজ্য হবে।
মোটরযানে সবুজ কর আরোপের জন্য এরই মধ্যে একটি খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে ডিটিসিএ। এতে সবুজ কর আরোপের জন্য তিনটি স্ল্যাব ঠিক করা হয়েছে। যেসব যানবাহনের বয়স নিবন্ধনের তারিখ থেকে ১০ বছরের বেশি কিন্তু ১৫ বছরের কম সেগুলোয় বার্ষিক ট্যাক্স টোকেনের ১৫ শতাংশ হারে সবুজ কর আরোপ করা হবে। একইভাবে নিবন্ধনের তারিখ থেকে ১৫ বছরের বেশি কিন্তু ২০ বছরের কম যানবাহনে কর আদায় করা হবে বার্ষিক ট্যাক্স টোকেনের ২০ শতাংশ। আর নিবন্ধনের তারিখ থেকে ২০ বছর অতিক্রম করা যানবাহনে কর আদায় করা হবে বার্ষিক ট্যাক্স টোকেনের ২৫ শতাংশ।
গাড়ির বয়স যত বেশি হবে, তত বেশি হারে আদায় করা হবে সবুজ কর। গাড়ির বয়স ১০ বছর পার হলে ১৫ শতাংশ, ১১ বছর হলে ১৬ শতাংশ, ১২ বছর হলে ১৭ শতাংশ, ১৩ বছর হলে ১৮ শতাংশ, ১৪ বছর হলে ১৯ শতাংশ, ১৫ বছর হলে ২০ শতাংশ, ১৬ বছর হলে ২১ শতাংশ, ১৭ বছর হলে ২২ শতাংশ, ১৮ বছর হলে ২৩ শতাংশ, ১৯ বছর হলে ২৪ শতাংশ এবং ২০ বছর হলে সবুজ কর আরোপ করা হবে বার্ষিক ট্যাক্স টোকেনের ২৫ শতাংশ। সবুজ কর কার্যকরের পর ২০ বছরের অধিক পুরনো যানবাহনের ফিটনেস সনদ প্রদানে বিআরটিএ কর্তৃক কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা আরোপের ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ডিটিসিএ।
সবুজ কর আরোপের খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সাধারণভাবে ডিজেলচালিত যানবাহন পেট্রলচালিত যানবাহনের তুলনায় অধিক মাত্রায় পরিবেশ দূষণ করে। তাই জ্বালানি এবং গাড়ির প্রকারের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন সবুজ কর আরোপ করা যেতে পারে। ডিজেলচালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সবুজ কর আরোপ করা যেতে পারে। একইভাবে শক্তিশালী হাইব্রিড, প্লাগ-ইন হাইব্রিড, বৈদ্যুতিক যানবাহন, হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল গাড়ি এবং সিএনজি, এলপিজি, এলএনজি, ইথানল ব্লেন্ডস, এইচসিএনজি ইত্যাদি বিকল্প জ্বালানি দিয়ে চালিত যানবাহনকে সবুজ কর থেকে অব্যাহতি দেয়া যেতে পারে। কৃষি ট্রাক্টর, পাওয়ারটিলার, কৃষিতে ব্যবহূত কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মতো মোটরযানকেও সবুজ কর থেকে অব্যাহতি দেয়া যেতে পারে।
সবুজ কর আরোপের সুবিধা সম্পর্কে ডিটিসিএর প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পুরনো যানবাহনের ব্যবহার নিরুৎসাহিত হবে। নতুন এবং কম দূষণকারী যানবাহনের ব্যবহার বাড়বে। পরিবেশ দূষণ হ্রাস করবে। সবুজ করের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দূষণ মোকাবেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা যাবে। সবুজ কর আরোপের মাধ্যমে দেশে পুরনো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, যা সড়কে শৃঙ্খলা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
দেশে যানবাহনের ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি, ওজন এবং সিট সংখ্যা অনুযায়ী শ্রেণী বিভাগ নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। সংস্থাটির তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ২০ ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। বর্তমানে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫২ লাখের বেশি। এর মধ্যে কী পরিমাণ যানবাহন বর্তমানে সড়কে চলাচল করছে না, তার সঠিক তথ্য বিআরটিএর কাছে নেই। তবে নিবন্ধন ও ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়নের তুলনামূলক বিচার করলে দেখা যায়, পুরনো যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে ১০ বছরের পুরনো প্রাইভেট কার, জিপ, মাইক্রোবাসের সংখ্যাই ১ লাখ ৮২ হাজার। অন্যান্য মোটরযান হিসাবে নিলে সংখ্যাটি আরো কয়েক লাখ বাড়বে।
ডিটিসিএর কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে বায়ূদূষণের অন্যতম কারণ পুরনো মোটরযান। আবার পুরনো যানবাহনের জ্বালানি ব্যবহার নতুন যানবাহনের চেয়ে অনেক বেশি। পুরনো মোটরযানের কারণে জ্বালানি ব্যবহারও বেশি হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে সবুজ কর আরোপ করা হলে একদিকে যেমন পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, তেমনি জ্বালানি ব্যবহারও কমিয়ে আনবে বলে মনে করছেন তারা।