অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঢাকার আবাসনের ওপর ক্রমাগত চাপ ফেলেছে। ঢাকামুখী অভিগমনও এর অন্যতম কারণ।
গতকাল বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘ঢাকা মহানগরীতে সবার জন্য মানসম্মত আবাসন: প্রেক্ষিত ও করণী’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
সংলাপের মূল প্রবন্ধে ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এর আগে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও ভৌত পরিকল্পনার সঙ্গে জনঘনত্ব ও নাগরিক সুবিধাদির সংস্থানের কোনো সংযোগ রাখা হয়নি। বিভিন্ন আইন-বিধি-পরিকল্পনা প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে অনুসৃত পরিকল্পনার স্ট্যান্ডার্ড বা মান আধুনিক নগর গড়ার সহায়কও নয়। ফলে সার্বিকভাবে সবার জন্য মানসম্মত ও সাশ্রয়ী আবাসন যেমন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি, তেমনি সার্বিকভাবে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ চরম সংকটে পড়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব বসতি দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বৈষম্য হ্রাসের অঙ্গীকার করি, সবার জন্য টেকসই নগর গড়ি’। সবার জন্য আবাসন বা বসতি নিশ্চিত করতে হলে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের কথা মাথায় রেখে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে স্বল্প মূল্যে আবাসন গড়ে তোলা জরুরি।
এর আগে সূচনা বক্তব্যে আইপিডির পরিচালক ও শেলটেক কনসালট্যান্টস লিমিটেডের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, আবাসনকে শুধু থাকার জায়গা হিসেবে বিবেচনা না করে ব্যাপক অর্থে আবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের জন্য পরিকল্পনা কৌশল নির্ধারণ করা উচিত। ফলে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা অনুযায়ী কত উচ্চতার ভবন পাওয়া যাবে, সেই সংকীর্ণ আলোচনায় সীমাবদ্ধ না থেকে মানসম্মত আবাসন তৈরির প্রয়োজনীয় কর্মকৌশল নির্ধারণে আলোচনা করা উচিত।
আইপিডির উপদেষ্টা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকার আবাসন চাহিদা ও জোগানের আলোচনা হওয়া উচিত মূলত নিম্ম ও নিম্ম মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কথা বিবেচনা করে। অথচ ড্যাপ বিষয়ে ভবনের উচ্চতা কিংবা এফএআর (ভূমির সাপেক্ষে ভবনের মোট মেঝের ক্ষেত্রফলের অনুপাত) সংক্রান্ত আলোচনার মূল কেন্দ্রে আছে উচ্চবিত্ত কিংবা উচ্চ মধ্যবিত্তরা।
বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নগর পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক শহরগুলোর তুলনায় ড্যাপে এফএআর মান তুলনামূলক বেশি দেয়া হয়েছে।
এক্ষেত্রে মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তানের শহরগুলোর তুলনা তুলে ধরেন তিনি। মালয়েশিয়ায় প্লটকেন্দ্রিক উন্নয়নকে নিরুৎসাহিত করে ব্লক ডেভেলপমেন্ট করে একদিকে, যেমন উন্মুক্ত স্থান, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে, পাশাপাশি নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য আবাসন ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। এবারের ড্যাপে এ ধরনের প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
পরিকল্পনা সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন আইপিডির পরিচালক ও পরিকল্পনাবিদ ড. চৌধুরী মো. জাবের সাদেক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. শাম্মী আকতার সেতু, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নীলোত্পল অদ্রি প্রমুখ।
