সাপ্তাহিক পুঁজিবাজার

সিমেন্ট, জ্বালানি ও ওষুধ খাতে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে সার্বিকভাবে নিম্নমুখিতা পরিলক্ষিত হয়েছে। সময়ে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে। পাশাপাশি আলোচ্য সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির সিমেন্ট, বিদ্যুৎ জ্বালানি এবং ওষুধ রসায়নসহ অধিকাংশ খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত সপ্তাহে সূচক কমলেও লেনদেন বেড়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য অনেকেই বর্তমানে সাইডলাইনে রয়েছেন। তাছাড়া বিনিময় হারে ঊর্ধ্বগতি চলতি হিসাবের ঘাটতির বিষয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিসক্লোজারের কারণে বিনিয়োগকারীরা বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত, যা পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তাছাড়া মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে এরই মধ্যে যেসব শেয়ারের দর বেড়েছে সেগুলো বিক্রি করে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতে কয়েকদিন ধরে পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়েছে। এসব কারণে সূচকের পাশাপাশি অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ৫১ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৮ শতাংশ কমেছে। সূচকটির বর্তমান অবস্থান হাজার ৫১৩ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল হাজার ৫৬৪ পয়েন্টে। সূচকের পতনে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, একমি ল্যাবরেটরিজ, বেক্সিমকো লিমিটেড শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারের।

ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ৩৫ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৯ শতাংশ কমে হাজার ৩৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল হাজার ৩৬৬ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৭ পয়েন্ট বা দশমিক ১৮ শতাংশ কমে হাজার ৪২০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল হাজার ৪৩৭ পয়েন্টে। ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৯৬টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৬১টির, কমেছে ১৭৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ১৫২টির। এছাড়া লেনদেন হয়নি ১০টির।

ডিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে হাজার ৩০৬ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ১০ হাজার ১১০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক্সচেঞ্জটিতে সাপ্তাহিক লেনদেন কমেছে হাজার ৮০৪ কোটি ২১ লাখ টাকার বেশি বা ২৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে দৈনিক গড়ে হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল হাজার ২২ কোটি লাখ টাকা।  

গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির খাতভিত্তিক লেনদেনে শীর্ষে রয়েছে বিবিধ খাত। ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৮ দশমিক ১০ শতাংশই ছিল খাতটির দখলে। ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ওষুধ রসায়ন খাত। তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। খাতের দখলে রয়েছে মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। দশমিক ৪০ শতাংশ লেনদেন নিয়ে তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। পরের অবস্থানে থাকা বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের দখলে রয়েছে মোট লেনদেনের দশমিক ৩০ শতাংশ।

গত সপ্তাহে ডিএসইর অধিকাংশ খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে সিমেন্ট খাতে, দশমিক ১০ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতেও একই হারে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা ওষুধ রসায়ন খাতেও দশমিক ১০ শতাংশ হারে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এছাড়া সাধারণ বীমা খাতে শতাংশ বিবিধ খাতে দশমিক ৮০ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে গত সপ্তাহে। অন্যদিকে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে সেবা আবাসন খাতে, দশমিক ৯০ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কাগজ মুদ্রণ খাতে এসেছে দশমিক ৬০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন। এছাড়া সিরামিক খাতে এসেছে দশমিক ৫০ শতাংশ ইতিবাচক রিটার্ন।

গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে লাখ ১৯ হাজার ৯১৪ কোটি লাখ টাকায়। যেখানে সপ্তাহের শুরুতে বাজার মূলধন ছিল লাখ ২২ হাজার ৭৪৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকায়। সে হিসাবে আলোচ্য সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে হাজার ৮২৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বা দশমিক ৫৪ শতাংশ।

অন্যদিকে সিএসইতে গত সপ্তাহে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক ৮০ শতাংশ কমে ১৯ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহে যা ছিল ১৯ হাজার ৩৪৫ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচকটি গত সপ্তাহ শেষে দশমিক ৮১ শতাংশ কমে ১১ হাজার ৫০২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ছিল ১১ হাজার ৫৯৬ পয়েন্টে। সিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ৫৩৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে যেখানে লেনদেন হয়েছিল ৪০৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩১৭টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৯টির, কমেছে ১২৬টির, অপরিবর্তিত রয়েছে ১৩২টির।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন