আকরিক লোহার বৈশ্বিক উত্তোলন কমছে, ঝুঁকিতে ইস্পাত খাত

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি বছর আকরিক লোহার বৈশ্বিক উত্তোলন কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মূলত চীন, রাশিয়া ইউক্রেনে উত্তোলনে নিম্নমুখিতাকে এজন্য দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। কভিড-১৯-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ উত্তোলনে ব্যাপক বাধার সৃষ্টি করেছে। সর্বোপরি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দা তো রয়েছেই। শীর্ষস্থানীয় তথ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ডাটার এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।

ইস্পাত উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল আকরিক লোহা। কিন্তু ধাতুটির উত্তোলন কমতে শুরু করায় ঝুঁকি বাড়ছে ইস্পাত খাতে। অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি আকরিক লোহা উত্তোলনে নিম্নমুখিতা অব্যাহত থাকলে ইস্পাতের সরবরাহ সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর আকরিক লোহার বৈশ্বিক উত্তোলন গত বছরের তুলনায় শতাংশ কমবে। উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪০ কোটি টনে। এর মধ্যে শীর্ষ দেশ চীন, রাশিয়া ইউক্রেনের উত্তোলন নামবে ৩৮ কোটি ২৮ লাখ টনে। গত বছর এসব দেশ করেছিল ৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টনে। সে হিসাবে উত্তোলন ১৬ দশমিক শতাংশ কমবে।

এদিকে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ভারত কানাডার উত্তোলন দশমিক শতাংশ বেড়ে ১৬৭ কোটি ৫০ লাখ টনে উন্নীত হবে। বৈশ্বিক উত্তোলন কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এসব দেশ কিছুটা ভারসাম্য এনেছে।

গত বছর করোনা মহামারীর প্রভাব শিথিল হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসে। শিল্প কারখানাগুলোর উৎপাদন ঘুরে দাঁড়ায়। ফলে ধাতব পণ্যের উত্তোলন উৎপাদন যেমন বাড়ে, ঠিক তেমনি বাজারদরও ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। তবে বছর সব ধরনের ধাতব পণ্যের বাজার চাপের মুখে রয়েছে।

২০২২ সালে চীনে আকরিক লোহা উত্তোলন দশমিক শতাংশ কমার আশঙ্কা করছে গ্লোবাল ডাটা। উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪ কোটি ৭৬ লাখ টনে। স্থানীয় ইস্পাত শিল্পে আকরিক লোহার চাহিদা অব্যাহত কমছে। এতে উত্তোলক কোম্পানিগুলো উত্তোলন কমিয়ে আনছে। এছাড়া চীন সরকারের উত্তোলন কমিয়ে আনার এজেন্ডাও এক্ষেত্রে বড় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়. ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে চীন সরকারের। আর দেশটিতে সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণ করে ইস্পাত শিল্প। তাই খাতের উৎপাদন উত্তোলন কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে দেশটির সরকার।

অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথমার্ধে চীনে নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে বেইজিং। এতে দেশটির অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়ে। ফলে আকরিক লোহার স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সরবরাহেও।

বছর রাশিয়ায় ধাতুটির উত্তোলন ১৬ দশমিক শতাংশ কমতে পারে। আর ইউক্রেনে কমবে ৪৮ দশমিক শতাংশ। মূলত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে উভয় দেশের উত্তোলন তলানিতে নামতে শুরু করে।

তবে অস্ট্রেলিয়ায় উত্তোলন শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯৩ কোটি ১৭ লাখ টনে। গত বছর দেশটিতে নতুন কয়েকটি আকরিক লোহা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এসব প্রকল্পের কারণেই উত্তোলন ঊর্ধ্বমুখী। প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম সাউথ ফ্ল্যাঙ্ক, ওয়েস্ট অ্যাঞ্জেলেস, মেসাস বি, সি ডি এবং ওয়েস্টার্ন সিংকলাইন ফেজ-২। রিও টিন্টো বিএইচপির মোট উত্তোলন দাঁড়াবে ৫৯ কোটি ৪০ লাখ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক শতাংশ বেশি। তবে শ্রমিক সংকট এবং চীনে দুর্বল চাহিদার কারণে অস্ট্রেলিয়ার আকরিক লোহা খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন