বন্যা বাংলাদেশের একটি সাধারণ ঘটনা
এর বারবার এবং তীব্রতা শিগগিরই কমে আসার সম্ভাবনা কম। এদিকে অনেক পরিশীলিত এবং বন্যাসংবলিত
উন্নত জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোয়
মানুষের জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে।
ভূগোল ও পরিবেশের
একজন ছাত্রী হিসেবে, ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ থেকে কেস স্টাডি
হিসেবে নির্দিষ্ট বন্যার ঘটনাগুলো অধ্যয়ন করার একটি প্রয়োজনীয়তা আছে। বন্যার পানি কীভাবে
প্রসারিত হয় এবং হ্রাস পায়? কোনো স্থান দীর্ঘমেয়াদি
বন্যার পানির নিচে রয়েছে কিনা? মানচিত্রে উপরে
এবং নিচে অবস্থিত দুটি জেলার মধ্যে বন্যা অগ্রগতির কোনো পরিমাপযোগ্য বিলম্ব আছে কিনা?
যেহেতু বাংলাদেশ ঘন ঘন বড় আকারের বন্যার সম্মুখীন হয়, তাই এই ধরনের
কেস স্টাডির জন্য প্রয়োজনীয় মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করা যৌক্তিকভাবে কঠিন। এখানে রিমোট
সেন্সিংয়ের ব্যবহার করা যেতে পারে:
রিমোট সেন্সিং হলো দূরত্বে (সাধারণত একটি
উপগ্রহ বা বিমান থেকে) প্রতিফলিত এবং নির্গত বিকিরণ পরিমাপ করে একটি এলাকার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য শনাক্ত
ও পর্যবেক্ষণ করার প্রক্রিয়া। এটি আমাদের মাঠে উপস্থিত না হয়েই ধীরে ধীরে এবং নিয়মিত
বিরতিতে অগ্রসরমান বা পতনশীল বন্যার স্ন্যাপ-শট নিতে সাহায্য করে। এ ধরনের রিমোট সেন্সিংয়ের বেশ কয়েকটি ডাটাবেজ বিনামূল্যে
পাওয়া যায়, এ রকম একটি ডাটাবেস হলো সেন্টিনেল-১ এসএআর (সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার)
চিত্র। এসএআর চিত্র ব্যবহার করার
কারণ হলো এটি রাতে ডাটা সংগ্রহ করতে পারে এবং ভারী বর্ষার মেঘের মধ্য দিয়েও চিত্র ধারণ
করতে পারে।
স্যাটেলাইট তথ্যের
পরিধি এখানেই থেমে নেই। উদাহরণস্বরূপ যেসব অঞ্চলে আবহাওয়া কেন্দ্র সংখ্যার চেয়ে কম
রয়েছে সেসব জায়গায় সিএইচআইআরপিএস,
পেন্টেড (CHIRPS Pentad)-এর মতো বিশ্বব্যাপী
গ্রিড করা বৃষ্টিপাতের ডাটাসেটগুলো বিস্তৃত স্কেলে বৃষ্টিপাত বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হচ্ছে। যেহেতু বাংলাদেশে বন্যা প্রধানত বৃষ্টিপাতের
কারণে হয়, তাই পলি নদীর পরিবর্তে,
বন্যার যেকোনো কেস স্টাডি আঞ্চলিক বৃষ্টিপাতের ধরন এবং বিচ্যুতিতে
প্রাসঙ্গিক হওয়া প্রয়োজন। এ সমীক্ষায় আমি একাধিক বৃষ্টির বৈশিষ্ট্যের
(মাত্রা, সময়কাল,
বারংবারতা, গড় দৈনিক তীব্রতা
এমডিআই এবং গড় সময়) মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের ধরন বিশ্লেষণ
করা হয়েছে ।
ভূগোল ও পরিবেশ
শিক্ষাক্ষেত্রে একটি প্রায়ই উদ্ধৃত বিবৃতি হলো ‘বিপদগুলো তখনই
দুর্যোগে পরিণত হয় যখন তা মানুষকে প্রভাবিত করে।’ এ ফেলোশিপের দর্শন ছিল এটিকে কেন্দ্র করে। বন্যার পানি কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং কতক্ষণ ধরে ছড়ায় তা জানতে গবেষণায় ভূ-স্থানিক বিশ্লেষণ
করা হয়। এ ধরনের কেস স্টাডিগুলো ‘পরিচালিত পশ্চাদপসরণ’
(Managed Retreat)-এর মতো স্থানিক
পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ স্টাডিতে
এটাও জোর দেয়া হয়েছিল, কীভাবে আদর্শিক মডেলের পরিবর্তে
‘প্রকৃত’ বন্যার অধ্যয়ন করে প্রাসঙ্গিকভাবে বন্যার
‘পুরো ছবি’ সম্পর্কে অভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা যেতে পারে।
রাইসা বিনতে হুদা: ফেলো, ইয়ুথ ওয়াটার ফেলোশিপ প্রোগ্রাম-২০২১; শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়