করতোয়া তীরে কান্না থামছে না স্বজনহারাদের

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও

পঞ্চগরে বোদা উপজেলায় আউলিয়া ঘাটে নিখোঁজদের সন্ধানে স্বজনদের ভিড় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

এমন লাশের মিছিল কখনো দেখেননি বৃদ্ধ আব্দুল লতিফ। করতোয়ার আউলিয়ার ঘাট ঘিরেই চলে তার জীবিকা। প্রায় পাঁচ যুগ ধরে করতোয়ার তীরেই তার বাস। গত চারদিনে নদীর দুই তীরের চিত্র বদলেছে অনেক। শান্ত স্রোতের নদীটি হয়ে উঠেছে বিষাদের কারণ। স্বজনহারাদের কান্না থামছে না কিছুতেই। তবে স্বজন না হারিয়েও ভাসমান মরদেহ দেখে স্তব্ধ নদী তীরের মানুষ।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় চতুর্থ দিনের মতো উদ্ধার অভিযান অব্যাহত ছিল। গতকাল সকাল ৬টা থেকে পঞ্চগড় থেকে দিনাজপুরের খানসামা পর্যন্ত নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে অংশ নিয়েছে ফায়ার সার্ভিসসহ এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষ। বিকালে ঘটনাস্থল থেকে কিছু দূরেই উদ্ধার করা হয় ময়দানদিঘী ইউনিয়নের খালপাড়া গ্রামের বীরেন চন্দ্রের ছেলে হিমালয় (২৫) নামের একজনের মরদেহ।  নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আর নিখোঁজ রয়েছেন আরো তিনজন।

ঘটনার দিন সকাল থেকেই ওই নদীতে মাছ শিকার করছিলেন গৌতম দাস। ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎ চিত্কারে পেছন ফিরতেই দেখেন নৌকাটি ডুবে যাচ্ছে। নিমিষেই নৌকার যাত্রীরা নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। দৃশ্য যেন তিনি এখনো ভুলতে পারছেন না। ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে কয়েকজন পাথর উত্তোলনের শ্রমিক ছিলেন। তার মতে, তারা খুব ভালো সাঁতার জানতেন। কিন্তু তার পরও কীভাবে এসব শ্রমিক পানিতে ডুবে মারা গেলেন সেই হিসাব মেলাতে পারছেন না গৌতম।

নৌকাডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান পঞ্চগড় জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় বলেন, গতকাল সকাল থেকে পঞ্চগড় আশপাশের জেলার আটটি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট উদ্ধারকাজ করছে। এর বাইরে রংপুর, কুড়িগ্রাম রাজশাহীর নয়জন ডুবুরি তিন দলে বিভক্ত হয়ে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন।

উদ্ধারকাজে দায়িত্বরত পঞ্চগড় জেলা ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক শেখ মো. মাহবুবুল ইসলাম জানান, আমাদের একটি মনিটরিং টিম সচেতন করার জন্য রোববার সকাল থেকেই কর্মরত ছিল। তারা বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় ওঠেন।

তিনি আরো জানান, এখানে ঘাট ইজারাদারদের কিছু শর্ত দেয়া হয়। যার মধ্যে যাত্রীবাহী নৌকায় যাত্রীদের বসার জন্য নির্ধারিত আসন রাখা, লাইফ জ্যাকেট এয়ার টিউবের ব্যবস্থা রাখা অন্যতম। তবে এসবের কিছুই এখানে মানা হয়নি।

তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, এখন পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আর নিখোঁজ রয়েছেন পঞ্চগড়ের হাতিডুবা ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের মদনের ছেলে ভুপেন (৪০), উপজেলার সাকোয়া ডাঙ্গাপাড়ার খগেন্দ্র নাথ বর্মণের ছেলে সুরেন (৬৫) ঘাটিয়ার পাড়া গ্রামের ধীরেন্দ্র নাথের মেয়ে জয়া রানী ()

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন