আইপিও তহবিল আত্মসাৎ ও আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতি

নূরানী ডাইংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি নূরানী ডাইং অ্যান্ড সোয়েটার লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) তহবিল আত্মসাৎ আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে ডিএসই বিএসইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা, পরিচালক, ইস্যু ব্যবস্থাপক নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। গতকাল সংস্থাটির ৮৪০তম কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কমিশন সভা শেষে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আইপিওর প্রসপেক্টাস আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে ২০১৬ ২০১৭ হিসাব বছরে এবি ব্যাংকের কাছে নূরানী ডাইংয়ের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ছিল যথাক্রমে ৫৭ কোটি ২০ লাখ ৪২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। কিন্তু পরিদর্শক তদন্ত কমিটির সংগ্রহ করা ব্যাংক হিসাবে দেখা যায়, কোম্পানিটির প্রকৃত ব্যাংক দায়ের পরিমাণ ২০১৮ হিসাব বছরে ১৬৮ কোটি ৯৬ লাখ, ২০১৯ হিসাব বছরে ১৯২ কোটি ৬৮ লাখ ২০২০ হিসাব বছরে ২১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ২০২০ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকৃত আর্থিক অবস্থা গোপন করেছে।

নূরানী ডাইং ২০১৭ সালে আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত ৪৩ কোটি টাকা বিভিন্ন কারসাজি স্কিম যেমন ব্যাংক বিবরণী জালিয়াতি, এটিডিআর নগদায়ন কোনো প্রকার কাজ বা পরিষেবা ছাড়াই স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে অর্থ দেয়ার মাধ্যমে ৪১ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এতে কমিশনের আইপিও অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন করা হয়েছে। একইভাবে আইপিও ইস্যুর সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরীক্ষক কর্তৃক আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর কোনো ধরনের বিরূপ মন্তব্য করেননি। 

কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিনটি ইস্যু ব্যবস্থাপক কর্তৃক ডিউ ডিলিজেন্স সনদ প্রদানের মাধ্যমে প্রসপেক্টাস -সংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চয়তা দেয়া হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটি প্রকৃত আর্থিক অবস্থা গোপন করেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

২০১৯ ২০২০ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নূরানী ডাইং কর্তৃক প্রকাশিত হিসাব বিবরণীর রফতানি আয়, বিক্রি দেনাদারের স্বপক্ষে বিভিন্ন প্রমাণপত্র, যেমন পিআরসি, টিডিএস সনদ ব্যাংক বিবরণী জালিয়াতির মাধ্যমে সময়ে আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়। যদিও আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরীক্ষক কর্তৃক স্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রদান করে আর্থিক প্রতিবেদনের নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। সময়ে কোম্পানিটির উৎপাদন কার্যক্রমও বন্ধ ছিল। কোম্পানিটির এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারী আইপিওর চাঁদায় অংশগ্রহণকারীরা বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।

নূরানী ডাইংয়ের উদ্যোক্তা পরিচালকরা তাদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবে ধারণ করা ৩০ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের কাছে জামানত রেখে মার্জিন ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে তছরুপ করে। পরবর্তী সময়ে তাদের জামানতকৃত শেয়ারের বিপরীতে প্রাপ্ত মার্জিন ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়। বিএসইসির তদন্ত কমিটি ডিএসইর প্রতিবেদনের আলোকে নূরানী ডাইং, এর উদ্যোক্তা পরিচালক, সংশ্লিষ্ট তিন ইস্যু ব্যবস্থাপক ইমপেরিয়াল ক্যাপিটাল লিমিটেড, ইবিএল ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড সিএপিএম অ্যাডভাইজরি লিমিটেড, বিধিবদ্ধ নিরীক্ষক আহমেদ জাকের অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করা প্রতারণা কার্যক্রমে সহযোগিতা করার মাধ্যমে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। কারণে কমিশন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ফৌজদারি মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কমিশনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিষয়ে ইস্যু ব্যবস্থাপকরা বলছেন, ২০১৫ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একই বছরের ১৬ জুলাই কোম্পানিটির আইপিও আবেদন করা হয়। পাশাপাশি এবি ব্যাংকের কাছ থেকে অনাপত্তিপত্রও জমা দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি কমিশন কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন করে। ২০১৬ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আইপিও অনুমোদন হয়ে যাওয়ার পর বিষয়ে ইস্যু ব্যবস্থাপকের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন