আইডি-পাসওয়ার্ড

বৃহৎ করপোরেটগুলোর সঙ্গে এলটিইউর অস্বস্তি

হাফিজুর রহমান

বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) আওতাধীন বড় অংকের ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবরক্ষণ সফটওয়্যারের ভ্যাট অংশে প্রবেশাধিকার চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এজন্য করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ফাইন্যান্স অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের আইডি-পাসওয়ার্ডও চাওয়া হয়েছিল। কর কর্মকর্তাদের ধরনের তথ্যে প্রবেশের সুযোগ দেয়া নিরাপদ মনে করছে না করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিষয়টি নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগ প্রসঙ্গে একাধিক বৈঠকে এনবিআরের সঙ্গে করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আলোচনাও হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই জানিয়েছে, আইডি-পাসওয়ার্ডের মতো গোপনীয় সংবেদনশীল তথ্য এনবিআরকে দেয়া নিয়ে বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে, যা কয়েক দফা আলোচনার পরও দূর হয়নি। বিষয়টি এখনো অমীমাংসিতই রয়ে গিয়েছে।

বৃহৎ করদাতা ১১০ প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের আইডি-পাসওয়ার্ড চেয়ে গত আগস্ট এক আদেশ জারি করে এনবিআরের আওতাধীন এলটিইউ-ভ্যাট। ১১০ প্রতিষ্ঠান বছরে সম্মিলিতভাবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট পরিশোধ করে। মূল্য সংযোজন কর সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬-এর ১১৮ক- দেয়া ক্ষমতাবলে জারীকৃত এলটিইউর ওই আদেশে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে বলা হয়, এর মধ্যে আইডি-পাসওয়ার্ড না দিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আদেশের পরিপ্রেক্ষিতেই উভয় পক্ষের মধ্যে বড় ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। এলটিইউর কর্মকর্তারা বলছেন, ওই আদেশে সাড়া দিয়ে এখন পর্যন্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের আইডি পাসওয়ার্ড জমা দিয়েছে। বর্তমানে ৪৩টি বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠান প্রবেশাধিকার দিতে চাইছে না। বাকি ৫১ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তাদের আইডি পাসওয়ার্ড জমা দেয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়েছে।

এখন পর্যন্ত যেসব প্রতিষ্ঠান এলটিইউর কাছে আইডি-পাসওয়ার্ড জমা দিয়েছে, সেগুলো হলো আরএকে সিরামিক লিমিটেড, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, এটিআই সিরামিকস লিমিটেড, আকিজ সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, নুভিস্তা ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, এলএম এরিকসন, র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন, নাবিস্কো বিস্কুট, এসেনশিয়াল ড্রাগস, এসিআই লিমিটেড, এসিআই ফরমুলেশন, এরিস্টোফার্মা, ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালস, ইউনাইটেড ঢাকা টোব্যাকো কোং লিমিটেড ইত্যাদি। এর মধ্যে আরএকে সিরামিক, ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল, এটিআই সিরামিকস, আকিজ সিমেন্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট র্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেন ভ্যাটের হিসাব রাখতে নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবহার করে। বাকিরা ব্যবহার করে কেনা সফটওয়্যার। 

আইডি-পাসওয়ার্ড জমা না দেয়া কোম্পানিগুলো বলছে, এলটিইউর জারি করা আদেশের অনেক বিষয়ই অস্পষ্ট রয়ে গিয়েছে। এনবিআরের তালিকাভুক্ত সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোও সঠিক সময়ে তাদের ইআরপি সফটওয়্যারের সঙ্গে ভ্যাট সফটওয়্যার সমন্বয়ের সেবা দিতে পারেনি। কারণে অধিকাংশ কোম্পানি সময়মতো তাদের আইডি-পাসওয়ার্ড জমা দিতে পারেনি।

এমনই একটি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বলেন, আইডি-পাসওয়ার্ড নিয়ে এলটিইউর সঙ্গে আমাদের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, যা এখনো মীমাংসা হয়নি। এখনো সামগ্রিক বিষয়টি করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত নয়। যেমন কোন আইপি অ্যাড্রেস থেকে বিষয়গুলো পরিচালিত হবে বা যিনি ব্যবহার করবেন তিনি হঠাৎ করেই বদলি হয়ে অন্য কর্মস্থলে যাবেন কিনা, তিনি বদলি হওয়ার পর পাসওয়ার্ড বদলাতে হবে কিনা ইত্যাদি বিষয়ের কোনো উত্তর নেই। ১১০টি কোম্পানির আইডি যদি একটি কম্পিউটার থেকে ব্যবহার হয়, সে কম্পিউটারের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। যেমন যে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হবে, সেটি করদাতাদের নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, ধরনের অনেক বিষয় অস্পষ্ট, অমীমাংসিত অসংজ্ঞায়িত, যার কারণে বড় ধরনের অস্বস্তি এখনো রয়ে গিয়েছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বণিক বার্তাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে এলটিইউর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা দেখা করেছি। আইডি-পাসওয়ার্ড নিয়ে আমরা আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। বিষয়টির সহজীকরণ নিশ্চিত করে নতুনভাবে উপস্থাপনের বিষয়ে আশ্বাস দেয়া হয়েছে এলটিইউর পক্ষ থেকে। ব্যবসায়ী মহল বিষয়টির ব্যবসা করবান্ধব সমাধান প্রত্যাশা করছে। বিষয়টির ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে মনে করছি।

বৃহৎ করদাতারা বলছেন, এলটিইউ কোম্পানিগুলোর সার্বিক প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদ পরিকল্পনা ব্যবস্থাপনায় ব্যবহূত সফটওয়্যার (এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং বা ইআরপি সফটওয়্যার) নাকি ভ্যাট সফটওয়্যারের আইডি-পাসওয়ার্ড চায়, সে বিষয়টি অস্পষ্ট থাকায় দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম অস্বস্তি তৈরি হয়। কারণ ইআরপি সফটওয়্যারে একটি কোম্পানির আয়-ব্যয় ছাড়াও ব্যবসায়িক অনেক গোপন তথ্য সংরক্ষিত থাকে। এছাড়া কোন আইপি থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমে ঢোকা হবে, সেটিও নির্দিষ্ট ছিল না। কারণ যে আইপি থেকে ঢোকা হবে তার জন্য লগ-ইন আইডি খুলতে হবে, তারপর তাকে আইডি-পাসওয়ার্ড দিতে হবে। সেটা না হলে সে সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারবে না। একই সঙ্গে কে ওই সফটওয়্যারে ঢুকবে, কমিশনার নিজে না সবাই; সেটাও নিশ্চিত করা দরকার। আবার একজন লোক একটি পিসি থেকে যদি ১১০টি প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমে প্রবেশ করে, সেখানে থেকে করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সিস্টেমে কোনো বাগ ঢুকবে না, তারও নিশ্চয়তা নেই। রকম অনেক বিষয় তুলে ধরা হলে এলটিইউ তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে জানিয়েছে, তারা শুধু ভ্যাট সফটওয়্যারের আইডি-পাসওয়ার্ড চায়। মূলত ভ্যাট পরিগণনা এবং মাস শেষে যে রিটার্নের কাগজ জমা দেয়া হয় সেটি যাচাইয়ের জন্যই অ্যাকাউন্ট সফটওয়্যারের ভ্যাট অংশের রিড অনলি মোডের আইডি পাসওয়ার্ড দিতে হবে।

এলটিইউর সঙ্গে সৃষ্ট অস্বস্তি নিয়ে বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দিয়েছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই সংগঠনটির সদস্য। বিষয়ে জানতে চাইলে এমসিসিআই সভাপতি সায়ফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, করদাতাদের প্রযুক্তি ব্যবস্থার আইডি-পাসওয়ার্ড চাওয়া হয়েছিল। নিয়ে সভা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে। আইডি-পাসওয়ার্ড দেয়া হলে কোম্পানির গোপনীয়তা বলে কিছু থাকবে না। প্রত্যেক কোম্পানির নিজস্ব কৌশল থেকে শুরু করে নানা রকম সংবেদনশীল তথ্য থাকে, যা অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করা যায় না। কর কর্তৃপক্ষ চাইলে যেকোনো সময় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আইন অনুযায়ী চেক করতে পারে। তাই আইডি-পাসওয়ার্ড শেয়ার না করার মতামত দেয়া হয়েছে। ভ্যাটের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক মনোভাব জানিয়েছি। আপাতত শেয়ার করার বিষয়টি স্থগিত আছে। সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে যেসব অস্বস্তি রয়েছে, সেগুলো আমরা পরিষ্কার করেছি। এনবিআরও বিষয়গুলো গ্রহণ করেছে বলে মনে করছি। সামগ্রিকভাবে বিষয়ে এনবিআরের কৌশল নিয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। যা- করা হোক, অংশীজন হিসেবে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে যেন প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করা হয়, সে প্রত্যাশা করছি।

এলটিইউর আওতাধীন বহুজাতিক বিদেশী বিনিয়োগকারী বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২৩টি। তালিকায় গ্রামীণ ফোন, রবি, নেসলে, ম্যারিকো, ইউনিলিভারের মতো বহুজাতিক জায়ান্টের নাম রয়েছে। অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে এলটিইউর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিও (এফআইসিসিআই) সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এলটিইউর সিস্টেমগুলোর যথেষ্ট আধুনিকায়ন না হলে বৃহৎ করদাতাদের আইটি সিস্টেমের সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের জটিলতা দেখা দেবে। কমপ্লায়েন্স রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থেই এনবিআর বা ভ্যাট কর্তৃপক্ষকে ন্যূনতম একটি মাত্রায় ডিজিটালাইজেশনের মধ্য নিয়ে আসা প্রয়োজন। যেকোনো পাসওয়ার্ড শেয়ার করার একটি প্রক্রিয়া আছে, যা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বিদেশী মাদার কোম্পানির কমপ্লায়েন্স অনুযায়ী হতে হয়। এছাড়া বড় বড় ইআরপি সফটওয়্যারে চাইলেই পাসওয়ার্ড হয় না। এসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশে সর্বোত্কৃষ্ট কী ধরনের চর্চা হয়, সেসব বিষয়ও আলোচনায় উঠে এসেছে। গোটা প্রক্রিয়াটি এমনভাবে হতে হবে, যাতে কোনো পক্ষেরই অস্বস্তির ক্ষেত্র না থাকে।

এফআইসিসিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নূরুল কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, এলটিইউ কমিশনারের সঙ্গে আমাদের আনুষ্ঠানিক আন্তরিক সুচিন্তিত আলোচনা হয়েছে। সে সময় এলটিইউর সদস্য সব বহুজাতিক কোম্পানির সদস্যরা সেখানে ছিলেন। আমরা বলেছি যে কমপ্লায়েন্ট কোম্পানি হিসেবে আমরা সরকারকে সহায়তা করতে চাই। আমাদের সংগঠনের সদস্যরা সরকারের প্রায় ২৫ শতাংশ রাজস্বের জোগান দিচ্ছে। আমরা সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চাই। আমাদের সময়ও দেয়া হয়েছে। আমাদের সদস্যদের বলেছি প্রাতিষ্ঠানিক মতামত দেয়ার জন্য। আমরা সেগুলো এক জায়গায় করছি। আগামী ১১ অক্টোবর নিয়ে একটি সভা ডাকা হয়েছে। আশা করছি সেখানে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া যাবে।

এলটিইউ জানিয়েছে, বৃহৎ তিন মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক রবি দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ইআরপি ভ্যাট সফটওয়্যার সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছিল, কিন্তু তারাও সঠিক সময়ে তাদের কাজ শেষ করতে পারেনি। গ্রামীণফোন দেশের চারটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েও সময়মতো সেবা নিতে পারেনি বলে এলটিইউকে জানিয়েছে। এছাড়া রবি ভারতের একটি কোম্পানি থেকে ভ্যাটের মডিউল তৈরি করে নিয়েছে। বাংলালিংক নিজেদের মতো করেই নিজস্ব মডিউল তৈরি করেছে। নিয়ে কোম্পানিটি এখন এনবিআরের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। ইন্টিগ্রেশন-সংক্রান্ত জটিলতায় বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানির সঙ্গে শুনানিতেও বসেছে এলটিইউ। শুনানিতে অংশগ্রহণ করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সিম্ফনি সফটটেক, লিডস করপোরেশন লিমিটেডসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ইনোভিয়া টেকনোলজিস লিমিটেডের সঙ্গে ম্যারিকোরও ভ্যাট সফটওয়্যার সেবা সমন্বয়-সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে এলটিইউ সূত্রে জানা গিয়েছে।

মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এসএম ফরহাদ বলেন, আমাদের মোবাইল অপারেটরগুলো সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদানের ক্ষেত্রে সবসময়ই যত্নশীল। সফটওয়্যার আপডেট করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আরো কিছু সময় প্রয়োজন। আমরা ব্যাপারে সময় চেয়ে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি। তবে কোনো কোনো অপারেটর এরই মধ্যে প্রক্রিয়া চালু করার পথে। কাজের অগ্রগতি সংশ্লিষ্ট অপারেটররাই দেখভাল করছে।

বৃহৎ করদাতা একটি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে জানান, লাইসেন্স তালিকাভুক্ত একাধিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের ভ্যাট সফটওয়্যার ইন্টিগ্রেশনের সক্ষমতা নেই। তারা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ পাওয়ার পর আবার অন্য তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করিয়ে আনে। কিন্তু বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো করে সফটওয়্যার তৈরি করার সক্ষমতা থাকার পরও তাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি প্রতিষ্ঠানকে রাখতে হচ্ছে। কিন্তু তাদের অনেক প্রতিষ্ঠানেরই ভ্যাট সফটওয়্যারের ইন্টিগ্রেশন করার সক্ষমতা নেই। আবার অনেক সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের ভ্যাটের আইন বোঝার মতো লোকও নেই। অনেক কোম্পানি কাজের জন্য সাইনিং মানিও নিয়েছে। কিন্তু তিন বছর ঘুরেও তাদের কাছ থেকে সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।

এলটিইউকে বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, কোম্পানিগুলোর ইআরপি সফটওয়্যারে ভ্যাটের মডিউল বানাতে তাদের সময় লাগবে। এজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন রকম সময় চেয়েছে। গ্রামীণফোনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এজন্য আমাদের কাছে সময় চেয়েছে।

বৃহৎ করদাতা ইউনিটের কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, রাজস্ব বোর্ড তালিকাভুক্ত সফটওয়্যারের সঙ্গে দেশে ব্যবসা করা বিদেশী প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশ্বমানের ইআরপি সফটওয়্যারের সমন্বয় হয় না। তালিকাভুক্ত সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও ইন্টিগ্রেট করতে পারছে না। এজন্য বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোরও আরো বেশি বিনিয়োগ করতে হবে এবং দেশের প্রতিষ্ঠানেরও আরো অগ্রসর প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। আর আমরাও তাদের কাছ থেকে ইআরপি সফটওয়্যারের সবকিছু চাই না। শুধু তাদের ফাইন্যান্স অ্যাকাউন্টসের তথ্য চাই। ভ্যাটের তথ্য দেয়ার উদ্দেশ্যে তারা তাদের মতো করে আলাদা একটা মডিউল তৈরি করে তার একটি আইডি-পাসওয়ার্ড দেবে। এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য এফআইসিসিআইয়ের টেকনিক্যাল আইটি টিমও ১১ অক্টোবর এলটিইউতে আসবে। তখন আইডি-পাসওয়ার্ডের বিষয়টি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়ে কথা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে এনবিআর বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) গঠন করে। ইউনিটের অধীনে ঢাকা চট্টগ্রামে দুটি শাখা রয়েছে। ব্যাংক, বীমা, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, টেলিযোগাযোগ কোম্পানি উৎপাদন খাতের বেশকিছু কোম্পানি এলটিইউর আওতাভুক্ত। এর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস,  ইউনিলিভার বাংলাদেশ, নেসলে বাংলাদেশ, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশ, শেভরন বাংলাদেশ, এমজেএল বাংলাদেশ, আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড উল্লেখযোগ্য। কোম্পানিগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন