খরা ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব

বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের মজুদ এক দশকের সর্বনিম্নে নামার আশঙ্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের মজুদ আশঙ্কাজনক হারে কমে এক দশকের সর্বনিম্নে নামার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এসব পণ্যের সরবরাহ তলানিতে নেমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রধান দেশগুলোয় উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কমছে। ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিলের খাদ্যশস্যের সরবরাহসংক্রান্ত এক পূর্বাভাসে তথ্য উঠে এসেছে।

গত জুলাইয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের মধ্যে খাদ্যশস্য রফতানি নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয় ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রফতানি। এতে বৈশ্বিক সংকট কমার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি উল্টো পথে হাঁটছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স চীনের প্রধান কৃষি অঞ্চলগুলোয় বৈরী আবহাওয়ার কারণে তিনটি দেশেই উৎপাদন মজুদ লক্ষণীয় মাত্রায় কমছে। এতে বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।

আমদানিকারক, খাদ্য উৎপাদন এবং পশুখাদ্য প্রস্তুতকারকদের প্রত্যাশা ছিল, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর দিয়ে খাদ্যশস্য রফতানি শুরু করলে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। এছাড়া চলতি মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরা রেকর্ড সর্বোচ্চ খাদ্যশস্য আবাদ করেছেন। বিষয়টিও সরবরাহে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু বিশ্বের শীর্ষ ভুট্টা উৎপাদন দেশ যুক্তরাষ্ট্র চলতি বছর তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ভুট্টা উত্তোলন করতে পারবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, খরার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় শস্য উত্তোলন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আসন্ন মৌসুম নিয়ে উদ্বেগ কাজ করছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয়।

ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইনস কাউন্সিলের দেয়া তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ শস্য বছর শেষে ভুট্টার আপত্কালীন মজুদের পরিমাণ যা দাঁড়াবে, তা মাত্র ৮০ দিন ব্যবহারের উপযোগী। অর্থাৎ আপত্কালীন মজুদ গত পাঁচ বছরের তুলনায় ২৮ শতাংশ কমবে। এছাড়া ২০১০-১১ মৌসুমের তুলনায় সর্বনিম্নে নামবে।

এদিকে মজুদ সংকটে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বৈশ্বিক নেতা নীতিনির্ধারকরা। যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট খাদ্যের মজুদ সংকটের তীব্রতা কমাতে বিশ্বব্যাংক হাজার কোটি ডলার তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছে। গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈশ্বিক খাদ্য অনিরাপত্তা মোকাবেলায় প্রায় অতিরিক্ত ৩০০ কোটি ডলার তহবিলের ঘোষণা দিয়েছে।

সোমালিয়ার প্রায় পাঁচ লাখ শিশু চলতি দশকে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কারণে খাদ্যহীন হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এর মূল কারণে হর্ন অব আফ্রিকায় সৃষ্ট ভয়াবহ খরা।

সোমালিয়া থেকে কয়েক হাজার মাইল দূর যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ডাকোটায় ভুট্টা উৎপাদকরা আশঙ্কা করছেন, চলতি শরতে জমি থেকে ভুট্টা সংগ্রহের পরিমাণ হেক্টরপ্রতি ২০ বুশেলেরও নিচে নামবে। গত বছরের স্থানীয় গড়ের তুলনায় যা ৮০ শতাংশেরও কম। সোমালিয়ার মতো অঞ্চলেও খরা খাদ্য উৎপাদন খাতকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে নিচ্ছে।

খাদ্যশস্যের উৎপাদনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কারণেই সরবরাহ ক্রমাগত কমছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। উৎপাদন যত কমছে বৈশ্বিক চাহিদা ঠিক ততটাই বাড়ছে। ফলে চলতি শস্য বছর শেষে সব ধরনের শস্যের মজুদ আট বছরের সর্বনিম্নে নামবে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন্স কাউন্সিল। আবহাওয়ায় বৈরীভাব অব্যাহত থাকলে মজুদ আরো কমতে পারে।

 বিশেষ করে দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় খরা না কাটলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে। এরই মধ্যে আর্জেন্টিনা শুল্ক আবহাওয়ার কারণে ভুট্টা উৎপাদন পূর্বাভাস ব্যাপক কমিয়ে এনেছে। দেশটি বৈশ্বিক ভুট্টা উৎপাদনে তৃতীয় এবং দক্ষিণ আমেরিকায় প্রথম।

২০২২-২৩ মৌসুমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয় শস্য উৎপাদন কমে ১৫ বছরের সর্বনিম্নে নামতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে অঞ্চলটি ইউক্রেন থেকে আমদানি ৩০ শতাংশ বাড়াতে বাধ্য হবে। আর ইউরোপে আমদানি চাহিদা বৃদ্ধির অর্থ হলো হর্ন অব আফ্রিকার মতো অঞ্চলে সরবরাহ আরো কমে যাওয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন