ভারতে আইফোন ১৪ উৎপাদনের ঘোষণা অ্যাপলের

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতে আইফোন ১৪ উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে অ্যাপল। সম্প্রতি এক ঘোষণায় তথ্য নিশ্চিত করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা মহামারী-সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে সরবরাহ চেইনে যে প্রভাব পড়েছে তা কাটিয়ে উঠতে ভারত ভিয়েতনামের মতো দেশে কারখানা কার্যক্রম সরাচ্ছে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো। ভারতে আইফোন ১৪ উৎপাদন নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহের গুঞ্জনকে সত্য প্রমাণ করে অ্যাপল স্বীকার করে নিল, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন বাজারটি তাদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে তুলনামূলক কম দামে আইফোন তুলে দিতে পারবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এক বিবৃতিতে অ্যাপল জানায়, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উন্নততর নিরাপত্তা নিয়ে বাজারে এসেছে আইফোন ১৪। ভারতে ফোনটি উৎপাদন শুরুর ঘোষণা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।

অ্যাপলের উৎপাদন অংশীদার ফক্সকন আইফোনের নতুন সংস্করণটি উৎপাদন করবে চেন্নাইয়ের কাছাকাছি শ্রিপেরামবুদুর শহরের নিজস্ব কারখানায়। তবে আইফোন ১৪-এর প্রো সংস্করণটি সেখানে তৈরি করা হবে না।

২০১৭ সাল থেকে ভারতে আইফোন উৎপাদন করছে অ্যাপল। তবে এতদিন ভারতীয় কারখানায় আইফোনের পুরনো সংস্করণগুলো তৈরি করা হতো। আর এবার যে আইফোন ১৪ করা হবে, তা উন্মোচন করা হয়েছে মাসেই।

বাজার বিশ্লেষকদের অনুমান, ভারতকে ২০২৫ সাল নাগাদ একটি বৈশ্বিক আইফোন উৎপাদন হাবে পরিণত করবে অ্যাপল। মূলত চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিচ্ছে কোম্পানি। এক দশকের বেশি সময় ধরে কোম্পানির সিংহভাগ ডিভাইস উৎপাদন হয়েছে চীনে।

গত আগস্টের শেষের দিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইফোন ১৪ নির্মাণের যন্ত্রাংশ চীন থেকে ভারতীয় কারখানায় পাঠানো শুরু করেছে অ্যাপলের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। চীন থেকে আইফোন ১৪ তৈরির যন্ত্রাংশ চেন্নাই কারখানায় পাঠানো এবং সেখানে অ্যাসেম্বল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অ্যাপলের অন্যতম সরবরাহকারী ফক্সকন। ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিংয়ের উত্তেজনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চীনের বিকল্প ম্যানুফ্যাকচারিং হাব খোঁজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যাপল স্যামসাংয়ের মতো কোম্পানির।

ওই মাসের শুরুতে জাপানভিত্তিক নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিয়েতনামে ২০২৩ সালের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্রাংশ তৈরি করবে স্যামসাং। নিজেদের শিল্পোৎপাদন খাতে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম মেমোরি চিপ নির্মাতা কোম্পানিটি। ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলীয় থাই এনগুইয়েন প্রদেশে স্যামসাংয়ের ইলেকট্রো-মেকানিকস কারখানায় বল গ্রিড অ্যারে বা বিজিএ হিসেবে পরিচিত চিপ ক্যারিয়ার নির্মাণের পরীক্ষা চলছে। শিগগিরই পুরোদমে উৎপাদনে যাবে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি।

২০২২ সালের শুরুতে চীনে চিপ নির্মাণসামগ্রী বিক্রিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে বেইজিং যেন বিশেষ সুবিধা না পায় সেজন্য নীতি গ্রহণ করে ওয়াশিংটন। শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ এবং চীনের কঠোর কভিড পলিসির কারণে বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র জরুরি হয়ে পড়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইফোন উৎপাদনকাজ চীনের বাইরে নিয়ে যেতে চাচ্ছে অ্যাপল। এক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন বাজার ভারত হতে পারে তাদের অন্যতম পছন্দ। অ্যাপলের চুক্তিভিত্তিক নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছে ভিয়েতনাম মেক্সিকোর মতো দেশও।

চলতি মাসের শুরুতে দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে আইফোন উৎপাদন করবে টাটা গ্রুপ। তাইওয়ানভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি উইস্ট্রনের সঙ্গে ভারতে একটি যৌথ উদ্যোগ চালুর পথে এগোচ্ছে কনগ্লোমারেটটি।

এদিকে চীন ভারতে এতদিন কাজ করত তাইওয়ানের দুটো টেক সংস্থা উইস্ট্রন ফক্সকন। এবার টাটা গ্রুপ প্রথম ভারতীয় সংস্থা হিসেবে আইফোন উৎপাদনের অনুমোদন পেতে যাচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। সম্ভাব্য যৌথ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে ভারতে আইফোনের বাজার পাঁচ গুণ বাড়বে বলে জানা গিয়েছে।

কয়েক দশক ধরেই বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে চীন। টাটা গ্রুপ আইফোন উৎপাদনে গেলে প্রযুক্তি খাতে চীনকে কড়া টক্কর দিতে পারবে ভারত। কারণ অ্যাপলের মতো সংস্থা ভারতে আইফোন তৈরির সিদ্ধান্ত নিলে অন্যান্য বৃহৎ টেক সংস্থাও অনুপ্রাণিত হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন