অভ্যন্তরীণ চাহিদা নিম্নমুখী

চীনের শিল্প মুনাফার পতন আরো ত্বরান্বিত

বণিক বার্তা ডেস্ক

আগস্টে চীনের শিল্পোৎপাদন ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। বেইজিংয়ের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সংযোজন কারখানা ছবি: এপি

এখনো অব্যাহত রয়েছে কভিডজনিত প্রতিবন্ধকতা। বার বার লকডাউন বিধিনিষেধের কারণে বিভিন্ন শহরের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গভীর হচ্ছে আবাসন খাতের সংকট। নিম্নমুখী রয়েছে অভ্যন্তরীণ চাহিদাও। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে অনিশ্চয়তা। এমন পরিস্থিতিতে চীনের শিল্প খাতের মুনাফার পতন আরো ত্বরান্বিত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে দেশটির শিল্প মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছে। খবর রয়টার্স।

গতকাল প্রকাশিত ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিক্সের (এনবিএস) তথ্য অনুসারে, জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে শিল্প মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক শতাংশ কমে গিয়েছে। যেখানে বছরের প্রথম সাত মাসে মুনাফা কমার হার ছিল দশমিক শতাংশ। মূল কার্যক্রম থেকে বার্ষিক কোটি ইউয়ানের বেশি আয় করা প্রতিষ্ঠানগুলো হিসাবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

যদিও এনবিএস আগস্ট জুলাইয়ের আলাদা পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি। আগস্টে চীনের অর্থনীতি আশ্চর্যজনক স্থিতিস্থাপকতা দেখিয়েছিল। শিল্পোৎপাদন খুচরা বিক্রি প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতি রেখে বেড়েছে। তবে রিয়েল এস্টেট খাতের মন্দা এবং কভিডজনিত লকডাউন সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে গত মাসে শিল্প খাতের মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রিয়েল এস্টেট কোম্পানি জোনস ল্যাং লাসালের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রুস প্যাংক বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার আরো অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে। কারণ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সময়েও চরম আবহাওয়া, আঞ্চলিক জ্বালানি ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা এবং নতুন করে কভিড সংক্রমণের প্রভাবে ব্যাহত হয়েছিল।

জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে ৪১টি প্রধান শিল্প খাতের মধ্যে ২৫টির মুনাফা গত বছরের তুলনায় কমেছে। পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় সময়ে খনি খাতের মুনাফা প্রবৃদ্ধি ৮৮ দশমিক শতাংশে নেমে এসেছে। যেখানে বছরের প্রথম সাত মানে খাতের মুনাফা প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০৫ দশমিক শতাংশ।

ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের মুনাফার পতনও আরো ত্বরান্বিত হয়েছে। জানুয়ারি-জুলাইয়ে ১২ দশমিক শতাংশের তুলনায় বছরের প্রথম আট মাসে খাতের মুনাফা ১৩ দশমিক শতাংশ কমেছে।

পৃথক একটি বিবৃতিতে এনবিএসের জ্যেষ্ঠ পরিসংখ্যানবিদ জু হং বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা সম্প্রসারণে চীন নীতি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করবে। পাশাপাশি শিল্প অর্থনীতির টেকসই স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারে আরো বেশি মনোযোগ বাড়ানো হবে।

তবে বিশ্লেষকরা চীনের দীর্ঘস্থায়ী জিরো-কভিড নীতিকে অর্থনীতির বড় একটি সীমাবদ্ধতা হিসেবে দেখেন। তাদের ভাষ্যমতে, আগামী অক্টোবরে কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনের আগে বেইজিংয়ের জিরো-কভিড নীতি শিথিলের সম্ভাবনা খুব কম। মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক মরগান স্ট্যানলি একটি গবেষণা নোটে জানিয়েছে, রফতানি রিয়েল এস্টেট খাত দুর্বল রয়ে গিয়েছে। এরপর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আরেকটি বড় উৎস হলো ভোক্তা চাহিদা। সেটাও এখন দুর্বল হতে শুরু করেছে। সুতরাং চীনের কভিড ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে পরিবর্তন না করা হলে পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে। তবে আমরা আশা করি, নীতিনির্ধারকরা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবেন। ২০২৩ সালের মাঝামাঝির আগেই দেশটির সীমান্ত পুনরায় খুলে দেয়া হতে পারে।

গত মাসে চীনের শিল্পোৎপাদন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক শতাংশ বেড়েছে। হার জুলাইয়ের দশমিক শতাংশের চেয়ে বেশি। পাশাপাশি সময়ে অটোমোবাইল শিল্পের পরিসংখ্যান উজ্জ্বল হয়েছে। কর হ্রাসের কারণে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা দ্বিগুণ হয়েছে। আগস্টে গরম আবহাওয়ায় সৃষ্ট বিদ্যুতের উচ্চ চাহিদার কারণে খাতের মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৫৮ গুণ বেড়েছে।

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ এবং চংকিং শহরে বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের কারণে গত মাসে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল। ওই অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহূত জলাশয়গুলোর পানির স্তর অর্ধেকের মতো কমে গিয়েছে। ফলে ব্যাহত হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন