বেসরকারি ব্যাংক

রাজনৈতিক প্রভাবের অনুষঙ্গ হিসেবেই সংখ্যা বেড়েছে

এরশাদের আমলে ১০, বিএনপির সাত ও আওয়ামী লীগের আমলে ২৬টি ব্যাংকের অনুমোদন

বদরুল আলম

দেশে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের যাত্রা আশির দশকে। ব্যক্তি খাতে ঋণের প্রবাহকে অবাধ করতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ব্যাংক বিরাষ্ট্রীকরণের উদ্যোগ নেন সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পাশাপাশি ব্যক্তি খাতেও তৈরি করে দেয়া হয় বাণিজ্যিক ব্যাংক পরিচালনার সুযোগ। দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংকের পথচলা শুরু ১৯৮২ সালে। এরপর প্রায় চার দশক পর বর্তমানে দেশে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩-এ। এর মধ্যে এরশাদ আমলে অনুমোদন পেয়েছিল ১০টি ব্যাংক। বিএনপির আমলে অনুমোদন হয়েছে সাতটি। বাকি ২৬টির সবই যাত্রা করেছে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদের শাসনামলে।

দেশের শিল্প আর্থিক খাতের ব্যাপক বেসরকারীকরণ শুরু হয় এরশাদ সরকারের আমলে। ওই সময় একের পর এক শিল্প-কারখানা বিরাষ্ট্রীকরণ করতে গিয়ে অর্থায়ন ঋণের প্রবাহ বাড়ানোরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরই ভিত্তিতে আর্থিক খাতেও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার সুযোগ দেয়া হয়। দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে এবি ব্যাংকের যাত্রার পরের বছরই রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি ব্যাংককে (পূবালী উত্তরা) ব্যক্তি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। ওই বছর অনুমোদন পায় আরো পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক। এগুলো হলো আইএফআইসি, ইসলামী, ন্যাশনাল, সিটি ইউসিবি। ১৯৮৫ ১৯৮৭ সালে অনুমোদন পায় এনসিসিবিএল আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। মোটাদাগে ১০ ব্যাংককে একসঙ্গে অভিহিত করা হয় প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে। ব্যাংকগুলো অনুমোদনের ক্ষেত্রে আর্থিক সংস্কারের চেয়েও রাজনৈতিক বিবেচনা বড় ভূমিকা রেখেছিল বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

ওই সময়ের ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি নিয়ে নানা পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, এরশাদ সরকারের আমলে আর্থিক খাতের অগ্রাধিকারগুলো বদলে গিয়েছিল। ঋণপ্রবাহকে করে তোলা হয়েছিল অবাধ। প্রবাহ বাড়াতে গিয়েই বেসরকারি খাতের নতুন কিছু ব্যাংককে অনুমোদন দেয়া হয়। ওই সময় ব্যাংক খাতের সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলেছেন, অনুমোদন প্রক্রিয়ায় আর্থিক সক্ষমতা সম্ভাবনার বদলে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সখ্য বা রাজনৈতিক বিবেচনাই গুরুত্ব পেয়েছে বেশি। আবার ব্যাংক খাতকে সে সময় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবেও কাজে লাগানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ প্রকল্প বা ঋণগ্রহীতা বাছাইয়ের স্বাধীনতা তেমন একটা ছিল না। এক্ষেত্রে প্রায়ই রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে চলতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এর ধারাবাহিকতায় দেশের কৃষি শিল্প খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণও সে সময় মারাত্মক আকার ধারণ করে।

দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে আসে ১৯৯১ সালে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরশাদ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে বিশাল পটপরিবর্তন হলেও ব্যাংক খাতের অনুমোদন প্রক্রিয়ার অগ্রাধিকারগুলো আগের মতোই থেকে গিয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে অনুমোদন পায় সাতটি ব্যাংক। এর মধ্যে প্রথমটি ছিল ইস্টার্ন ব্যাংক। প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকটি আগে পরিচিত ছিল বহুজাতিক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (বিসিসিআই) হিসেবে। ওই সময় প্রতারণার দায়ে বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছিল বিসিসিআই। চারটি শাখা নিয়ে বাংলাদেশেও কার্যক্রম ছিল ব্যাংকটির। কেলেঙ্কারির পর সরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের অর্থে ব্যাংকটির শেয়ার কেনার পাশাপাশি গ্রাহকদের আমানতের অর্থও শেয়ারে রূপান্তর করা হয়। নাম পরিবর্তন করে ইস্টার্ন ব্যাংক নামে ব্যাংকটি যাত্রা করে ১৯৯২ সালে। এরপর ১৯৯৫ সালে এক বছরের মধ্যেই যাত্রা করে নতুন ছয়টি বেসরকারি ব্যাংক। এগুলো হলো আল-আরাফাহ্ ইসলামী, ঢাকা, ডাচ্-বাংলা, প্রাইম, সোশ্যাল ইসলামী সাউথইস্ট ব্যাংক।

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ সরকার। দলটি ক্ষমতায় আসার দুই বছরের মাথায় প্রতিষ্ঠা পায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। এরপর ১৯৯৯ সালে কার্যক্রম শুরু হয় নয়টি ব্যাংকের। এগুলো হলো ব্যাংক এশিয়া, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, মার্কেন্টাইল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ওয়ান, স্ট্যান্ডার্ড, দ্য প্রিমিয়ার ট্রাস্ট ব্যাংক। আওয়ামী লীগ সরকারের ওই মেয়াদ শেষ হয় ২০০১ সালের জুলাইয়ে। এর আগে ওই বছরেই প্রতিষ্ঠা পায় আরো তিনটি ব্যাংকব্র্যাক, যমুনা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। ১৯৯২ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ১০ বছরে বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে স্থাপিত ২০টি ব্যাংককেই ধরা হয় দ্বিতীয় প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে।

দ্বিতীয় প্রজন্মের অধিকাংশ ব্যাংকেরই জন্ম অর্থনৈতিক প্রয়োজনে হয়েছিল উল্লেখ করে দেশের ব্যাংক আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, প্রথম দ্বিতীয় প্রজন্মের পর থেকে যে ব্যাংকগুলো এসেছে সেগুলোর মধ্যে একটি-দুটি ছাড়া উদ্ভাবনী পণ্য নিয়ে আসতে পারদর্শিতা দেখাতে পারেনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আগের ব্যাংকের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। অর্থাৎ এসব ব্যাংকের অর্থনৈতিক প্রয়োজন ছিল তুলনামূলক কম। এগুলোয় সমস্যাও দেখা দিয়েছে বেশি। গতানুগতিকভাবে দেশে অনেকগুলো ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়েছে। এখন সময় এসেছে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা, সুশাসনের দিকগুলোয় উন্নয়ন ঘটানোর। নিয়মনীতিগুলোও যুগোপযোগী করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর . সালেহউদ্দিন আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, প্রথম দ্বিতীয় প্রজন্মের বেশির ভাগ ব্যাংকই অর্থনৈতিক কারণেই যাত্রা করেছিল। সেখানে গুরুত্ব পেয়েছে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা। এর পর থেকে মিশ্র কারণে বেসরকারি ব্যাংক গড়ে উঠতে শুরু করে। কিছুটা ব্যবসার জন্য, কিছুটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদনা ব্যাংক গড়ে ওঠে। কয়েকটি বিশেষায়িত ব্যাংক হয়েছে, সেগুলো হয়তো সরকার বিভিন্ন কারণে করেছে। ব্যাংকগুলো পুরনো। এগুলোর সমস্যা থাকলেও নানা অবদানও আছে। এখন গোষ্ঠীভিত্তিক ব্যাংক আসছে। কতগুলো প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আসছে, কর্মসংস্থান ব্যাংক আসছে, এগুলোর পেছনে সরকারের উদ্দেশ্য হয়তো ইতিবাচক ছিল, কিন্তু ব্যবস্থাপনাগত দিক থেকে সফলতার মুখ দেখতে পারেনি। এতগুলো ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল না।

দেশে তৃতীয় প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে পরিচিত আটটি বেসরকারি ব্যাংকের সবই যাত্রা করে ২০১৩ সালে। ওই বছর যাত্রা করা ব্যাংক নয়টি হলো এনআরবি গ্লোবাল, ফারমার্স বা পদ্মা, মেঘনা, মিডল্যান্ড, মধুমতি, এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল, এসবিএসি ইউনিয়ন ব্যাংক।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বেসরকারি অনেক ব্যাংকেরই অনুমোদন হয়েছিল কোনো প্রয়োজন ছাড়াই। এগুলোয় সুশাসন নিশ্চিতের পথগুলোকেও সংকুচিত করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়মনীতি শিথিল করা হয়েছে। নতুন বেসরকারি ব্যাংকের জন্ম হয়েছে অযাচিতভাবে। ব্যাংক পরিচালনার পরিবেশকেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে দুর্বল করা হয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো . দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বণিক বার্তাকে বলেন, এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে ব্যক্তি খাতের অনেক ব্যাংককেই কোনো অর্থনৈতিক বা আর্থিক যৌক্তিকতার ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়া হয়নি। এর প্রমাণ হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যারা নতুন ব্যাংক করার ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা যাচাই যারা করেন, তারা তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছু নতুন ব্যাংকের বিরুদ্ধে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে নিয়ে ওপর মহল থেকে নির্দেশনা এসেছে। এটা প্রকাশ্য সত্য। এটি দিয়েই বোঝা যায়, ভেতরে কী ছিল। শুধু যে ব্যাংকগুলো প্রয়োজন ব্যতিরেকে আনা হয়েছে তা নয়, এদের সুশাসনের জন্য যেসব ব্যবস্থা ছিল সেগুলোকেও শিথিল করে ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ শুধু অযাচিত অপ্রয়োজনীয়ভাবে নতুন নতুন ব্যাংক হয়েছে তা নয়, যে পরিবেশে ব্যাংকগুলো পরিচালিত হবে, সে কার্যক্ষমতার জবাবদিহিতার জায়গাগুলোও দুর্বল করে দেয়া হয়েছে। আগে পরিচালকরা যেন নিজেদের ব্যাংক থেকে ঋণ না নেন, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হতো। এখন দেখা যাচ্ছে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের পরিচালককে ঋণ দিচ্ছে। দুই ক্ষেত্রেই ফেরত দেয়ার বিষয়েও কোনো দায়বদ্ধতা দেখা যায় না। পন্থায় নতুনভাবে ইনসাইডার লেন্ডিং দেখছি। এসব উপায়ে যে অর্থ বের করে নেয়া হয়েছে, সেগুলোর ব্যবহার কোথায় হচ্ছে? দেখা যাচ্ছে অনৈতিকভাবে বের করা অর্থ কোনো উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার হচ্ছে না। আবার অর্থগুলো পুঁজি পাচারের অংশে পরিণত হতেও দেখা যাচ্ছে।

অনেকটা একই বক্তব্য পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান . আহসান এইচ মনসুরেরও। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, প্রথম দিকের ব্যাংক গড়ে ওঠার পেছনে অর্থনৈতিক কারণ ছিল। ওই সময় ব্যাংক আনতেই হতো। আমাদের ব্যাংক খাতে বেসরকারি ব্যাংকের অবদান অনেক বড়। সরকারি ব্যাংকেরও উন্নতি যতটুকু হয়েছে, তা বেসরকারি ব্যাংক টিকে থাকার জন্য। তারপর বলতে হবে দেশে বেসরকারি খাতে এতগুলো ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল না। এখনো নেই। আগেও ছিল না। ব্যাংকগুলো হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। বিশ্বের কোনো দেশে সেনাবাহিনী বা পুলিশ বাহিনীর জন্য ব্যাংক নেই। কিন্তু আমাদের দেশে আছে। এর পরিণতি এখনই দেখা যাচ্ছে। দিনে দিনে ব্যাংক খাত সার্বিকভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্ষমতাও অপ্রতুল। এতগুলো ব্যাংক পরিচালনার জন্য যথেষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন এমডিও দেশে নেই। ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় সংখ্যাগত সেবার মান দুদিকেই ঘাটতি আছে। এভাবে দুর্বল ব্যাংক খাতকে দুর্বল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আরো দুর্বল করা হচ্ছে। দরকার ছিল কিছু ব্যাংক একীভূত করার। এভাবে যদি ১০টি ব্যাংক করা যেত তাহলে যথাযথ পরিবেশ পাওয়া যেত। দুঃখজনক হলো সামগ্রিকভাবে দেশের আর্থিক খাতের গভীরতা কমে গিয়েছে।

২০১৬-২১ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠা পাওয়া ব্যাংকগুলোকে বলা হচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক। সময়ে প্রতিষ্ঠিত মোট ব্যাংক সংখ্যা চার। এর মধ্যে চতুর্থ প্রজন্মের প্রথম ব্যাংক হিসেবে সীমান্ত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা পায় ২০১৬ সালে। এরপর ২০১৯ সালে ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয় কমিউনিটি ব্যাংকের। সর্বশেষ ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের দুটি ব্যাংকবেঙ্গল কমার্শিয়াল সিটিজেন ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক শীর্ষ ব্যক্তিদের ভাষ্য হলো ব্যাংকের সংখ্যার চেয়ে ব্যাংক শাখার সংখ্যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ব্যাংককে লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল শহরের বাইরে গ্রামাঞ্চলে বেশি শাখা খোলার শর্ত দিয়ে। কিন্তু তারা সে শর্ত যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও শাখার হিসাবে প্রতিবেশী ভারত বা পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে। এখানে দেখা যায় ঢাকার গুলশান, মতিঝিল, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, খাতুনগঞ্জের মতো কয়েকটি এলাকায় ব্যাংকের মোট আমানতের ৭০ শতাংশ কেন্দ্রীভূত। দ্বিতীয় প্রজন্ম থেকে ব্যাংক দেয়ার সুস্পষ্ট নীতিমালা আছে। এগুলো সঠিকভাবে পরিপালন করতে হবে। এরশাদ সরকারের আমলে দেখা গিয়েছে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের আবশ্যকীয় পরিমাণ ছিল ২০ কোটি টাকা। কিন্তু দেখা গেল দেড় কোটি টাকায়ই ব্যাংক দিয়ে দেয়া হয়েছে। একসময় ১০ জন শীর্ষ খেলাপির একটা তালিকা করা হয়েছিল। কিন্তু পরে শীর্ষ খেলাপিদেরই বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালক হয়ে বসতে দেখা গিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর . ফরাসউদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি উন্নয়নে ব্যাংকিং ব্যবস্থার যা অবদান আছে, তার চেয়ে অনেক কম কৃতিত্ব দেয়া হয়। ব্যাংকিং ব্যবস্থা যদি অর্থনীতির সেবা দিতে না পারত, তাহলে বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি এখন ৪০০ বিলিয়নেরও বেশি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। সেটা হতে পারত না। দেখা যাচ্ছে যে সরকারই আসুক তাদের কিছু লোক থাকে, তারা ব্যাংকের পরিচালক হন, লাইসেন্স পানব্যাংকিং সেক্টরকে চর্চার বাইরে রাখতে পারলে খুব ভালো হতো। ব্যাংক খাতে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। যা করা গেলে ব্যাংক খাত আরো বেশি উৎপাদনশীল হবে। বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকগুলো অনেকটাই ব্যবহার হয়েছে নন-ইকোনমিক ভেহিকল হিসেবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এক্সিম ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, দেশে ব্যক্তি স্বার্থে কোনো ব্যাংক থাকার সুযোগ নেই। অনেকে ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে ব্যাংক পরিচালনার কথা বললেও সেগুলো শুধু বলার জন্য বলা। আইন অনুযায়ী ব্যক্তি স্বার্থে ব্যাংক পরিচালিত হতে পারে না। দেশের সব ব্যাংকই জনগণের ব্যাংক। জনগণের টাকায় ব্যাংকগুলো পরিচালিত হয়। দেশে ব্যাংকে জমা থাকা আমানতের ৮০ শতাংশের বেশি বেসরকারি ব্যাংকের। অর্থনীতিতে বেসরকারি ব্যাংকের অবদান অনেক বড়। এসব ব্যাংকের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে কাজে প্রবেশ করা জনগোষ্ঠী। জনগোষ্ঠীর আয়ের পরোক্ষ প্রভাবও অর্থনীতিতে বড়। এর পরই সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী সরকার বা সরকারের রাজস্ব বিভাগ। তৃতীয় হলো ব্যাংকের গ্রাহক, যারা আমানত দেয় ঋণ গ্রহণ করে। ঋণ গ্রহণকারীদের বড় অংশ শিল্প প্রকল্প পরিচালনার উদ্দেশ্যে ঋণ নেয়। ওই শিল্পে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান হয়। এভাবে দেশের অর্থনীতিতে বেসরকারি ব্যাংকের অবদান ক্রমেই বাড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন