যশোর পৌরসভা

কর্তাদের খুশিতে গৃহকর নির্ধারণ!

আবদুল কাদের, যশোর

পাখির চোখে যশোর শহর ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

পুরনো শহর যশোর। আর পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৭ সালে, যেটি বর্তমানে শ্রেণীর। আয়তন ১৪ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা লাখ ৪৫ হাজার ৫৯৮। হোল্ডিংধারীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়তই। তবে খেয়ালখুশিমতো গৃহকর আদায়ের অভিযোগ উঠেছে পৌরসভাটির বিরুদ্ধে। নিয়মকে তোয়াক্কা না করেই কর্মকর্তাদের নির্ধারণ করে দেয়া কর গুনতে হচ্ছে নাগরিকদের। এতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন পৌরবাসী। কেননা যাদের বহুতল ভবন তারা কর্মকর্তাদের খুশি করে দিচ্ছেন কম কর, আবার যাদের কম দেয়ার কথা তাদের বেশি দিতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ছে অসন্তোষও।

এরই মধ্যে পৌরকর বেশি আদায়ের অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন আবুল হোসেন নামে এক নাগরিক। পৌরবাসী বলছেন, বৈশ্বিক সংকটে এমনিতেই মানুষের আয় কমছে, সেখানে করের বোঝা বাড়লে আরো বেশি সংকটে পড়তে হবে। তাই গৃহকরের ব্যাপারে পর্যন্ত হাজার ৪০০ হোল্ডিংধারী আপত্তি জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর এলাকার বাসিন্দা জিয়াউল হাসানের বাড়ির হোল্ডিং নম্বর ০৩৯১০০ ০৩৯১০১। পাঁচতলা বাড়ির প্রতি ফ্লোর হাজার ৮০০ বর্গফুটের। বাড়ির জন্য জিয়া বছরে কর দেন হাজার টাকা। আবার ৫৫৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের মালিক নজরুল ইসলাম তার সাততলা বাড়ির জন্য কর দেন বছরে ৫৯ হাজার টাকা। ১০০৮ নম্বরের মালিক ফজলুর রহমান কর দিচ্ছেন ২০ হাজার টাকা। পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নূরুল ইসলাম (হোল্ডিং নম্বর ১০১৫) বছরে ৩৬ হাজার টাকা পৌরকর দেন। অথচ একই ওয়ার্ডের সাইদুল বাশার ছয়তলা তরিকুল ইসলাম চারতলা ভবনের কর দেন অনেক কম।

এমন বৈষম্যের বিষয়ে চার নম্বর ওয়ার্ডের পুরনো কসবা ঘোষপাড়ার বাসিন্দা আবুল হোসেন  বলেন, ২০১৮ সালে আমার পৌরকর ধার্য হয়েছিল হাজার ৭৫৫ টাকা। সেখানে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিস বা শুনানি ছাড়াই এখন সেটা হাজার ২৬১ টাকা করা হয়েছে। তাই বিষয়টি সুরাহার জন্য তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। মামলা টুকেছেন পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে।

পৌরবাসীর অভিযোগ, বর্তমান মেয়র কোনো নিয়ম-নীতিই মানছেন না। ফলে দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে পৌরকর শাখার কর্মকর্তারা নিজেদের ইচ্ছামতো বিভিন্ন ওয়ার্ডে বাড়ির কর নির্ধারণ করছেন। যাদের বহুতল ভবন টাকার বিনিময়ে তাদের কর ধরা হচ্ছে কম, আর যারা খুশি করতে পারছেন না তাদের বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে ক্ষোভ বাড়ছে নাগরিকদের মধ্যে। শহরের বেজপাড়ার আরশাদ আলী বলেন, পৌরসভার কোনো নোটিস বা শুনানি ছাড়াই নতুন করে কর নির্ধারণ হচ্ছে। বছর দুই আগে যেখানে হাজার টাকা দিতাম, সেখানে এখন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার টাকা। একবারে এত বেশি কর দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য শুনানির আবেদন করেছি।

অভিযোগ অস্বীকার করে যশোর পৌরসভার কর নির্ধারিক মোকসেদ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের পৌরসভায় হোল্ডিংয়ের সংখ্যা ২৪ হাজারের কিছু বেশি। পৌর আইন অনুযায়ীই সবার কর নির্ধারণ করা হয়। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। কর নির্ধারণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, একটি ভবনের ১০ মাসের বাড়ি ভাড়ার ২৭ শতাংশ কর নির্ধারণ হয়ে থাকে। অন্যান্য কর সেবার বিনিময়ে নেয়া হয়। আর যাদের কম কর নির্ধারণ রয়েছে তাদের সমন্বয় করা হচ্ছে। পাঁচ বছর পরপর গৃহকর বাড়ানো হয়। আগে যেসব হোল্ডিংগ্রহীতার টিনের ঘর ছিল, বর্তমানে সেখানে পাকা ইমারত করেছেন। তাদের ক্ষেত্রে কর বেশি বেড়েছে। আর যাদের অবকাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি, তাদের ক্ষেত্রে কর তেমন বাড়েনি। সামনে আরো কর বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন কর্মকর্তা।

বিষয়ে যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ অবশ্য বণিক বার্তাকে বলেন, নিয়ম মেনেই করারোপ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আইনের বরখেলাপ কিংবা গ্রাহকের ওপর জুলুম করার সুযোগ নেই। এমনকি সরকার ১৭ শতাংশ পর্যন্ত কর বাড়ালেও আমরা কিন্তু এখনো বাড়াইনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন