খাগড়াছড়ির পর্যটন খাত

প্রতিবন্ধকতায়ও পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় খাগড়াছড়ি

শাহরিয়ার ইউনুস, খাগড়াছড়ি


বাংলাদেশের এক-দশমাংশ এলাকাজুড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম। খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি বান্দরবান নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। বৈচিত্র্যে ভরা রূপময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত তিন জেলায় বসবাসরত বিভিন্ন জাতিসত্তার বর্ণিল বৈচিত্র্যময় জীবনধারা, ভাষা, কৃষ্টি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য পার্বত্যাঞ্চলকে দান করেছেন অনন্য বৈশিষ্ট্য। সাঙ্গু, চেঙ্গী, মাইনি, কাচালং, মাতামুহুরীসহ ১০টি ছোট-বড় নদী, অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া ঝরনাবিধৌত অঞ্চলের মানুষের জীবনেও রয়েছে জীবিকায়নের বৈচিত্র্য, বহুমাত্রিকতা।

বিশেষ ভৌগোলিক জনপদের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বিস্তৃত সংরক্ষিত বনাঞ্চল, উপত্যকা, পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঢেউ খেলানো সৌন্দর্য, ঝরনা-ঝিরি দেশ-বিদেশের অনেক আকর্ষণীয় স্থানকেও হার মানাতে পারে।


পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির চারদিক ঢেউ তোলা সবুজের উঁচু-নিচু পাহাড়, পাহাড়ের বুক ছিরে আঁকাবাঁকা সর্পিল রাস্তা ভ্রমণে বাড়তি আনন্দ দেয়। এখানকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আলুটিলার রহস্যময় গুহা, রিছাং ঝরনা, দেবতার পুকুর, হর্টিকালচার পার্ক, তৈদুছড়া ঝরনা, তারেং চুমুই, মায়াবিনী লেক শান্তিপুর অরণ্য কুঠির, বিডিআর স্মৃতিসৌধ। এছাড়া বাড়তি যোগ হয়েছে সাজেক।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। এর অন্যতম আকর্ষণ রহস্যময় সুড়ঙ্গ। গা ছমছম করা অনুভূতি নিয়ে পাহাড়ি সুড়ঙ্গপথ বেয়ে পাতালে নামা কল্পনার হলেও আলুটিলার সুড়ঙ্গ কল্পনা নয় বরং বাস্তব। পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলেই সেই স্বপ্নীল সুড়ঙ্গমুখ। আলুটিলা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬০ ফুট। ভুতুড়ে অন্ধকার সুড়ঙ্গে আগুনের মশাল নিয়ে ঢুকতে হয় কিছুটা সাহসের সঙ্গেই। সুড়ঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করলে ভেসে ওঠে এক অপরূপ প্রতিচ্ছবি। ভেতরে হাজার হাজার বাদুর ঝুলে থাকার দৃশ্যও চোখে পড়ার মতো।

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র রহস্যময় গুহা থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে রিছাং পাহাড়ি ঝরনা। স্থানীয় ভাষায় ঝরনাকে তৈরাংতৈ কালাই বলা হয়। শিরশির ছন্দে হিম শীতল ঝরনার বহমান স্বচ্ছ পানি যে কাউকেই কাছে টানবে খুব সহজেই। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের মাটিরাঙ্গা উপজেলার মাঝপথেই ঝরনা। গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা পথ হেঁটে যেতে হবে স্বপ্নের রিছাং ঝরনায়। এখানে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে মাটিরাঙ্গা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রবেশমুখে একটি গেট নির্মাণসহ পর্যটকদের জন্য সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে চেঞ্জিং রুম। এছাড়া বিশ্রামের জন্য করা হয়েছে গোলঘর। নিরাপত্তার জন্য রয়েছে পুলিশ পাহারাও। পর্যটকদের সুবিধার্থে বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে।

জেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের কোলঘেঁষে মাইসছড়ি এলাকার নুনছড়ি মৌজার আলুটিলা পর্বতশ্রেণী থেকে সৃষ্ট ছোট্ট নদী নুনছড়ি। নুনছড়ির সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০০ ফুট ওপরে পাহাড়ের চূড়ায় দেবতা পুকুর রূপকথার দেবতার আশীর্বাদের মতোই সলিল বারির স্রোতহীন সঞ্চার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন