অপটাসে সাইবার হামলা

গোপনীয়তা নীতিমালায় পরিবর্তন আনছে অস্ট্রেলিয়া

বণিক বার্তা ডেস্ক

সিডনিতে অবস্থিত অপটাস সেন্টারে অপেক্ষারত একজন গ্রাহক ছবি: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় বিদ্যমান গোপনীয়তা নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। নতুন পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে যদি কোনো প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান সাইবার আক্রমণের শিকার হয় তাহলে তাদের ব্যাংকগুলোকে দ্রুত সময়ে মধ্যে অবহিত করতে হবে। খবর রয়টার্স।

অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম পরিষেবাপ্রতিষ্ঠান অপটাসে বড় ধরনের হামলার পর সম্প্রতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ নীতিমালায় পরিবর্তন বা সংশোধনের বিষয়টি জানান। সিঙ্গাপুর টেলিকমের মালিকানাধীন অপটাস জানায়, গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সাইবার হামলার মাধ্যমে সবচেয়ে বড় তথ্য চুরির ঘটনা ঘটেছে। হামলায় এক কোটির বেশি গ্রাহক বা প্রায় ৪০ শতাংশ অধিবাসীর বাড়ির ঠিকানা, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাসপোর্ট নাম্বার বেহাত হয়েছে।

বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, আক্রমণকারীর আইডি বা কম্পিউটার শনাক্তকারী ঠিকানা ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে অবস্থান দেখিয়েছে। তবে অপটাসের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেদ করে প্রবেশ করার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। অস্ট্রেলিয়ার একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি অপরিচিত দল অনলাইন ফোরামে প্রকাশিত তথ্যের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ১০ লাখ ডলার প্রদানের দাবি জানিয়েছে। তবে অপটাস দাবির সত্যতা নিশ্চিতে কোনো মন্তব্য করেনি।

সাম্প্রতিক সাইবার হামলার ঘটনাটিকে আলবানিজ করপোরেট খাতের জন্য বড় ধরনের সতর্কতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত কিছু সন্ত্রাসী চক্র সাধারণ মানুষের তথ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্য উদগ্রীব। রেডিও স্টেশন ফোরবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, আমরা গোপনীয়তা নীতিমালায় বেশকিছু পরিবর্তন আনতে চাই। ফলে ভবিষ্যতে যদি গ্রাহক বা ব্যবহারকারীরা ধরনের কোনো হামলার শিকার হয় তাহলে সহজেই যেন ব্যাংকে অবহিত করা যায়, যাতে তারা গ্রাহকদের সুরক্ষিত রাখতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার সাইবারনিরাপত্তা-বিষয়ক মন্ত্রী ক্লেয়ার নেইল বলেন, সাইবার হামলার ঘটনার জন্য অপটাস দায়ী। অন্য দেশের বিচার ব্যবস্থায় ধরনের অপরাধের জন্য লাখ লাখ ডলার জরিমানা করা হয়। ইউরোপের আইনে তথ্য চুরির মতো সাইবার হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজস্বের শতাংশ জরিমানা করা হয়।

সংসদ অধিবেশনে নেইল বলেন, দেশের বড় টেলিযোগাযোগ পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে যে বিধিবিধান আরোপ করা হয়েছে সেগুলো আসলেই কার্যকর কিনা সে বিষয়টিও তাত্পর্যপূর্ণ। অন্যদিকে অপটাস জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের মধ্যে অধিকাংশের এক বছরের জন্য ক্রেডিট এজেন্সি ইকুইফ্যাক্সের মাধ্যমে বিনামূল্যে ক্রেডিট মনিটরিং তথ্য পরিচয় সুরক্ষা সেবা দেয়া হবে।

-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে টেলিযোগাযোগ পরিষেবাপ্রতিষ্ঠানটি জানায়, যেসব গ্রাহকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাসপোর্ট নাম্বার চুরি হয়েছে তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। তবে পেমেন্ট-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলেও জানানো হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া দীর্ঘদিন থেকেই তাদের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে কাজ করছে। ২০২০ সালে দেশটি আগামী এক দশকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাসস্থানের নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর উন্নয়নে ১১০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ের অঙ্গীকার করেছিল।

হামলা পর নাইননিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলায় টেলিকমিউনিকেশন সংস্থাটির ব্যবসায়িক কার্যক্রম তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যাওয়ায় সামনের বছরগুলোয় তাদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হবে। কেননা এসব তথ্যের মাধ্যমে জালিয়াতি, অবৈধ লেনদেন পরিচিতদের বিপদে ফেলা সম্ভব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন