যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন ছবি: পিআইডি

সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের যোগ্য জবাব দিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের উন্নয়নের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে এবং বিশ্বে বাংলাদেশ যে মর্যাদা সম্মান অর্জন করেছে তা ধরে রেখে মাথা উঁচু করে বিশ্বব্যাপী চলার আহ্বান জানান তিনি।

গতকাল নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের দেয়া ভার্চুয়াল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। নিউইয়র্কে সফরকালীন আবাসস্থল থেকে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধী জাতির জনকের খুনিদের আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া অর্থ পাচারকারীসহ নানা ধরনের অপরাধী অপপ্রচারের নেপথ্যে রয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে চালানো অপপ্রচারের তাত্ক্ষণিক উপযুক্ত জবাব দিন।

তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই অপকর্মে জড়িত থাকায় চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছে বা অপরাধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের কথায় কর্ণপাত করবেন না। বরং আমাদের উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরুন। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে সরকার বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে যারা অন্যদের ছবক দিচ্ছে তাদের চরিত্র অপকর্ম জনসমক্ষে তুলে ধরুন।

বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখে সারা বিশ্বে চলার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে যে মর্যাদা সম্মান অর্জন করেছে তা সমুন্নত রাখার জন্য আমি আপনাদের সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।

মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ এনে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প থেকে তাদের তহবিল প্রত্যাহারের বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে দিয়েছে এবং প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ যা বলে তা করার ক্ষমতা রাখে।

প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন, কভিড-১৯ মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বে আসন্ন খাদ্য সংকট সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করে ভবিষ্যতে তা থেকে বাঁচতে সবাইকে আরো বেশি করে খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যেহেতু একটি প্রকট খাদ্য সংকট আসন্ন, তাই দেশে আপনার স্বজনদের বলুন, বিভাজনের কারণে দেশের কোনো জমিই অনাবাদি রাখা যাবে না।

ভোট কারচুপি মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি গুম, খুন দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অস্ত্র বাণিজ্যসহ সব ধরনের অপকর্মের রাজনীতি চালু করা সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া, গণতন্ত্র মানবাধিকার নিয়ে কথা বলার অভিযোগ তুলে বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভোট কারচুপিতে বিএনপি চ্যাম্পিয়ন ছিল। তারা কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করেছিল। দেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জন্য রাজনীতিতে হত্যা, গুম, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং ঋণখেলাপি সংস্কৃতির মতো সব খারাপ কাজের সূচনা করেছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন, জিয়াউর রহমান সেই বিচার বন্ধ করে দেন এবং তাদের উপদেষ্টা মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া এইচএম এরশাদ একই কাজ করেছেন।

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল সবসময় জনগণের অধিকার রক্ষায় বিশ্বাসী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্যান্টনমেন্টে বন্দি অবস্থা থেকে জনগণের ভোটাধিকারের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ এখন আর্থসামাজিকভাবে উন্নত হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধুর খুনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার না হওয়ার অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো প্রাণবন্ত হয়েছে এবং উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশের মানুষকে একটি সুন্দর উন্নত জীবন দিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের একজনও গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না। তারা এরই মধ্যে ১০ লাখ পরিবারকে বিনা খরচে বাড়ি দিয়েছেন এবং জীবন জীবিকা নির্বাহের জন্য আয়ের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন ভালো অবস্থায় আছে।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশন এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ শেষে শেষে ওয়াশিংটন গিয়েছেন শেখ হাসিনা। গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন পৌঁছান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন